হাওজা নিউজ এজেন্সি: ইবাদত, পরিবার পরিচালনা এবং রাজনৈতিক সংগ্রাম— এই তিন ভূমিকার যুগপৎ সমন্বয়ই তাঁর জীবনকে মানবতার জন্য অনন্য ও উজ্জ্বল আদর্শে রূপ দিয়েছে।
হযরত ফাতিমা যাহরা (সা.আ.)–এর স্মরণীয় ফাতেমিয়া উপলক্ষে ইরানের ইসলামি বিপ্লবের নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ীর বাছাইকৃত বক্তব্য থেকে একটি অংশ নিচে বাংলা ভাষায় উপস্থাপন করা হলো:
১. আল্লাহর আদেশে নিখুঁত আনুগত্য: তাঁর ব্যক্তিত্বের ভিত্তি
মহামান্য রাহবার বলেন, হযরত ফাতিমা যাহরা (সা.আ.) –এর আধ্যাত্মিক মহত্ত্ব ও রুহানিয়াতের স্তর আমরা পুরোপুরি উপলব্ধি করতে পারি না; তবে তাঁর চরিত্রের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো— সর্বাবস্থায় আল্লাহর নির্দেশের প্রতি সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ।
এই নিখুঁত আনুগত্যই তাঁকে ইতিহাস জুড়ে একটি অপরাজেয় মুজাহিদ, সত্যের উজ্জ্বল স্বাক্ষর এবং অত্যাচারের বিরুদ্ধে চিরস্তায়ী প্রতিরোধ–পতাকায় রূপ দিয়েছে। আজও সেই পতাকা অবিচল, এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর মহিমা আরও উজ্জ্বল হচ্ছে।
২. পরিবার, রাজনীতি ও সংগ্রাম—এক নারীর জীবনে তিন দায়িত্বের সমন্বয়
আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ীর বিশ্লেষণে: হযরত ফাতিমা যাহরা (সা.আ.) –এর দৈনন্দিন জীবন এক অসাধারণ সত্যকে সামনে আনে— তিনি একদিকে ছিলেন স্নেহময়ী স্ত্রী, শিক্ষাদাত্রী মা ও দক্ষ গৃহকর্ত্রী; অন্যদিকে ছিলেন রাজনৈতিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে দৃপ্ত কণ্ঠস্বর, অদম্য সংগ্রামী, এবং ন্যায় ও সত্যের রক্ষার্থে নিস্তেজ না হওয়া যোদ্ধা।
রাসূলুল্লাহ (সা.)–এর ইন্তেকালের পর রাজনৈতিক সংকটের মুহূর্তে তিনি মসজিদে উপস্থিত হয়ে ভাষণ দেন, মত প্রকাশ করেন এবং নির্ভীকভাবে সত্যের পক্ষে দাঁড়ান— এটি তাঁর জিহাদী আত্মার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
৩. ইবাদতের শিখরে এক নারী: রাতের নিভৃতিতে কান্না, কিয়াম ও খুশু
এই সংগ্রামী নারীর আরেক দিক— ইবাদতের গভীরতা ও আধ্যাত্মিক সংযম। রাত্রির অন্ধকারে তিনি মিহরাবে দাঁড়িয়ে যেভাবে কান্না করতেন, দোয়া করতেন এবং পরম খুশুতে আল্লাহর কাছে নিবেদন করতেন— তা ছিল প্রথম যুগের মহান অলিদের স্মরণ করিয়ে দেওয়ার মতো।
এই তিনটি ভূমিকার সমন্বয়— ইবাদত, জিহাদ, এবং গৃহজীবন— হযরত ফাতিমা যাহরা (সা.আ.)–এর চরিত্রের সবচেয়ে উজ্জ্বল বিন্দু।
৪. ইসলাম: ইবাদত, রাজনীতি ও পারিবারিক ভূমিকার মাঝে কোনো দ্বন্দ্ব দেখে না
মানুষ অনেক সময় মনে করে— যে ব্যক্তি গভীর ভাবে ইবাদতে নিমগ্ন, সে রাজনীতি বা সামাজিক দায়িত্বে সক্রিয় হতে পারে না। কিংবা যে ব্যক্তি রাজনীতি বা সংগ্রামে এগিয়ে থাকে, সে আর পারিবারিক জীবনে সফল হতে পারে না।
ইসলাম এই ভুল ধারণা প্রত্যাখ্যান করে। ইসলামের দৃষ্টিতে— একজন পরিপূর্ণ মানুষ একই সঙ্গে ইবাদতকারী, সমাজসংগ্রামী এবং দায়িত্বশীল পরিবারের সদস্য হতে পারেন। ফাতিমা (সা.আ.) এই পরিপূর্ণতার সর্বোচ্চ উদাহরণ।
৫. নারী ও পুরুষের আধ্যাত্মিক সামর্থ্যে কোনো পার্থক্য নেই
মহামান্য রাহবার ব্যাখ্যা করেন: হযরত ফাতিমা যাহরা (সা.আ.) মানবতার চূড়ায় অবস্থান করেন— মানুষের কোনো স্তরে তাঁর ঊর্ধ্বে কেউ নেই। এ কারণেই কুরআনও সৎ ও অসৎ মানুষের উদাহরণ প্রদানের সময় নারীকে নির্বাচন করেছে—
যেমন:
-
ইমানের প্রতীক আসিয়া, ফেরাউনের স্ত্রী;
-
এবং অবাধ্যতার প্রতীক নূহ ও লূতের স্ত্রীগণ।
এর দ্বারা প্রমাণিত হয়— আধ্যাত্মিক উন্নতি নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য সমানভাবে উন্মুক্ত।
শেষকথা: ফাতিমীয় মডেল—মানবিক পরিপূর্ণতার এক ঐশ্বরিক নকশা
হযরত ফাতিমা যাহরা (সা.আ.)–এর জীবন আমাদের শেখায়:
-
ইবাদত মানুষকে দৃঢ় করে,
-
পরিবার মানুষকে পরিপূর্ণ করে,
-
সংগ্রাম মানুষকে মানবতার শীর্ষে উন্নীত করে।
এই তিনের সম্মিলনেই গড়ে ওঠে মানবসত্তার পূর্ণতা। হযরত ফাতিমা যাহরা (সা.আ.) তাঁর জীবনে এই তিন স্তম্ভকে একত্রিত করেছিলেন— এবং তাই তিনি সমগ্র মানবতার চিরন্তন আদর্শ হয়ে রয়েছেন।
আপনার কমেন্ট