রবিবার ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ - ১৬:০৪
আখিরাতে কি পর্দা (হিজাব) ও মাহরাম-নামাহরামের বিধান রয়েছে?

ধর্মীয় সংশয় বিষয়ক বিশেষজ্ঞ মৃত্যুর পরবর্তী জগৎসমূহে মাহরামিয়াতের বিধানের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে আলাদাভাবে বরযখ, কিয়ামত, জান্নাত ও জাহান্নাম—এই প্রতিটি স্তরের অবস্থা বিশ্লেষণ করেন এবং ব্যাখ্যা করেন যে, এসব পর্যায়ের প্রতিটিরই সম্পর্ক ও সীমারেখা সংক্রান্ত নিজস্ব নিয়ম ও বৈশিষ্ট্য রয়েছে।

হাওজা নিউজ এজেন্সির প্রতিবেদন অনুযায়ী, দুনিয়ার জীবনে মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক মাহরামিয়াত-এর মতো শরঈ বিধান ও দায়িত্বের ভিত্তিতে গঠিত হয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো—রূহ যখন বরযখ, কিয়ামত ও আখিরাতে প্রবেশ করে, তখনও কি এই সীমারেখাগুলো বজায় থাকে, নাকি সম্পর্কগুলো শরীর ও সময়ের ঊর্ধ্বে কোনো ভিন্ন বাস্তবতার ভিত্তিতে গড়ে ওঠে?

হুজ্জাতুল ইসলাম রেজা পারচেবাফ হাওজা নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই প্রশ্নটি বিশ্লেষণ করেছেন। নিচে সেই প্রশ্নোত্তরের অনুবাদ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

প্রশ্ন:

আখিরাত, বরযখ ও কিয়ামতেও কি মাহরাম-নামাহরামের বিধান রয়েছে? থাকলে তা কী রূপে বিদ্যমান?

হুজ্জাতুল ইসলাম রেজা পারচেবাফের উত্তর:

আখিরাতের জগতে (যার মধ্যে বরযখ, জান্নাত ও জাহান্নাম অন্তর্ভুক্ত) দুনিয়ার মতো করে মাহরাম ও নামাহরামের ধারণা বিদ্যমান নয়।

মৃত্যুর পর প্রকৃতি ও মানবিক সম্পর্কসংক্রান্ত সেই সব বিধান, যেগুলো দুনিয়ায় মাহরামিয়াতের ভিত্তিতে গঠিত—বরযখ বা কিয়ামতে আর প্রযোজ্য থাকে না। কারণ সে জগৎ মূলগতভাবে ভিন্ন; সেখানে নিজস্ব রূহানি-ভৌত বৈশিষ্ট্য রয়েছে (যেমন জান্নাতিদের জন্য নূরানি পোশাক ও জাহান্নামিদের জন্য আগুনের পোশাকের কথা বর্ণিত হয়েছে)।

অতএব আখিরাতে মাহরাম-নামাহরাম দুনিয়ার মতো রূপে বিদ্যমান নয়।

বরযখে যেহেতু দুনিয়াবি বস্তুগত দেহ নেই, তাই দুনিয়ার মাহরামিয়াতের বিধান সরাসরি প্রযোজ্য হয় না।

১. কিয়ামতে (হাশরের ময়দানে):
মাহরাম ও নামাহরামকে চেনার ধারণা থাকতে পারে এবং নামাহরামের প্রতি লজ্জাবোধ (আধ্যাত্মিক অর্থে) অবশিষ্ট থাকতে পারে; তবে তা শরঈ ফরজ বা বিধান হিসেবে নয়, বরং একটি অন্তর্গত মানসিক অবস্থার রূপে।

২. জান্নাতে:
আত্মীয়তা ও বৈবাহিক সম্পর্কের ভিত্তিতে একধরনের মাহরামিয়াত থাকবে—যা মর্যাদা ও ব্যক্তিগত সীমা রক্ষার জন্য; তবে সেখানে সম্পর্ক হবে উন্নত, পবিত্র এবং দুনিয়াবি কামনা-বাসনার ঊর্ধ্বে।

৩. মূলত শরঈ বিধান—যেমন হিজাব ফরজ হওয়া বা দৃষ্টিনিয়ন্ত্রণের নিষেধাজ্ঞা—এসব কেবল দুনিয়ার জীবনের জন্য। আখিরাতে মানুষ থাকবে প্রতিদান ও শাস্তি কিংবা নিয়ামতের উপভোগের অবস্থায়, সেখানে আর কোনো শরঈ দায়িত্ব বা তাকলিফ নেই।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha