রবিবার ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ - ১৭:৪১
নামাজে ইমাম ও মুক্তাদির সংকট: একটি বর্ণনা কীভাবে সাহাবিদের নামাজকে প্রশ্নের মুখে ফেলে

যদি শরঈ বিধান অনুযায়ী দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে সক্ষম ব্যক্তি বসে থাকা ইমামের ইকতিদা করলে নামাজ বাতিল হয়ে যায়, তাহলে সহিহ বুখারিতে বর্ণিত এক ঘটনার আলোকে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠে আসে—রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনের শেষ সময়ে সংঘটিত সেই জামাতে কি আবু বকর ও তাঁর অনুসারী সাহাবিদের নামাজ সহিহ ছিল?

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, ভাইয়েরা, বিষয়টি একটু গভীরভাবে চিন্তা করে দেখা দরকার।
সহিহ বুখারিতে বর্ণিত আছে—রাসূলুল্লাহ (সা.) অসুস্থ অবস্থায় নামাজের সময় মসজিদে আসেন। প্রথমে আবু বকরকে নামাজ পড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। তিনি দাঁড়িয়ে নামাজ শুরু করেন।

এরপর রাসূলুল্লাহ (সা.) কিছুটা সুস্থ বোধ করলে দু’জন ব্যক্তির কাঁধে ভর দিয়ে মসজিদের দিকে অগ্রসর হন। অবস্থা এমন ছিল যে তিনি নিজে হাঁটতে পারছিলেন না; তাঁর পা মাটিতে ঘষটাচ্ছিল। অবশেষে তিনি মসজিদে প্রবেশ করে বসে নামাজে অংশ নেন এবং আবু বকরকে পেছনে সরিয়ে দেন।

বুখারির ভাষ্য অনুযায়ী—
“ফাকানা আবু বকর ইউসল্লি কায়িমান, ওয়া কানা রাসূলুল্লাহ ইউসল্লি কায়িদান।”
অর্থাৎ, আবু বকর দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ছিলেন, আর রাসূলুল্লাহ (সা.) বসে নামাজ আদায় করছিলেন।

এখানে একটি অদ্ভুত পরিস্থিতি তৈরি হয়—

আবু বকর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ইকতিদা করছিলেন

আর উপস্থিত সাহাবিরা আবু বকরের ইকতিদা করছিলেন

একই জামাতে যেন দুটি স্তরের ইমামত তৈরি হয়ে গেল। প্রশ্ন হলো—
একটি জামাতে কি দুইজন ইমাম থাকতে পারে? শেষ পর্যন্ত কি জামাত একটি, না দুটি?

ফিকহি প্রশ্ন ও সংকট

এখন আসি মূল প্রশ্নে।
আহলে সুন্নাতের বহু ফিকহি ফতোয়া অনুযায়ী—এবং শিয়া ফিকহেও একই কথা বলা হয়—যে ব্যক্তি দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে সক্ষম, সে বসে নামাজ পড়ানো ইমামের ইকতিদা করতে পারে না; করলে নামাজ বাতিল হয়ে যায়।

এই নীতির আলোকে চিন্তা করলে ফলাফল কী দাঁড়ায়?

আবু বকর দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ছিলেন

তাঁর ইমাম ছিলেন বসে নামাজ পড়া রাসূলুল্লাহ (সা.)

তাহলে এই ফতোয়া অনুযায়ী আবু বকরের নামাজ বাতিল হয়।
আর যেহেতু সাহাবিরা আবু বকরের ইকতিদা করছিলেন, সেহেতু তাদের নামাজও বাতিল হওয়ার কথা।

এখন প্রশ্ন হলো—
যদি বসে থাকা ইমামের ইকতিদা বৈধ না হয়, তাহলে এই জামাত সহিহ হলো কীভাবে?

আর যদি বলা হয়—বসে থাকা ইমামের ইকতিদা করা বৈধ,
তাহলে আরও বড় প্রশ্ন আসে—সবাই সরাসরি কেন রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ইকতিদা করল না?
মাঝখানে আবু বকরকে “ট্রান্সফরমার”-এর মতো বসানোর প্রয়োজনই বা কী ছিল?

উপসংহার

এই ঘটনা শুধু একটি ঐতিহাসিক বর্ণনা নয়; এটি নামাজে ইমামত, ইকতিদা ও জামাতের মৌলিক বিধান নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উত্থাপন করে।
একদিকে ফিকহি নীতিমালা, অন্যদিকে সহিহ বুখারিতে বর্ণিত ঘটনা—এই দুইয়ের মধ্যে স্পষ্ট সংঘর্ষ দেখা যায়।

প্রশ্ন থেকে যায়—এই বর্ণনার আলোকে কি আমরা বলতে বাধ্য হচ্ছি যে এক জামাতে দুই ইমাম ছিলেন?
নাকি ফিকহি নীতিমালার পুনর্বিবেচনা প্রয়োজন?

এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই প্রকৃত গবেষণা ও নিরপেক্ষ চিন্তার দরকার।

রিপোর্ট: হাসান রেজা 

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha