শনিবার ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ - ০৫:৩০
কিয়ামতের দিন হলো মানুষের ক্ষতি উন্মোচনের দিন

ইরানের অন্যতম শীর্ষ আলেমে দ্বীন হযরত আয়াতুল্লাহ জাওয়াদী আমুলী বলেছেন, কিয়ামতের দিন কোনো ক্রয়–বিক্রয় বা লেনদেনের দিন নয়; বরং সেটি মানুষের প্রকৃত ক্ষতি ও লোকসান প্রকাশ পাওয়ার দিন।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: আয়াতুল্লাহ জাওয়াদী আমুলী নাহজুল বালাগার ব্যাখ্যা বিষয়ক ধারাবাহিক নৈতিকতা পাঠের এক অধিবেশনে আমিরুল মু’মিনীন হযরত আলী (আ.)-এর সংক্ষিপ্ত বাণীসমূহের ১৯১ নম্বর কালিমা তাইয়্যিবার ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করেন।

তিনি হযরত আমির (আ.)-এর নূরানি বাণী পাঠ করে বলেন,

إِنَّمَا الْمَرْءُ فِی الدُّنْیَا غَرَضٌ تَنْتَضِلُ فِیهِ الْمَنَایَا...

এই মহিমান্বিত বাণী দুনিয়ার বাস্তব স্বরূপকে যথার্থভাবে তুলে ধরে। মানুষ এই পৃথিবীতে সর্বদা মৃত্যু ও বিভিন্ন দুর্ঘটনার তীরের লক্ষ্যবস্তু; কিন্তু দুনিয়ার ব্যস্ততা ও মোহে সে এই সত্য উপলব্ধি করতে পারে না।

হযরত আয়াতুল্লাহ জাওয়াদী আমুলী বলেন, সময় ও ভূমি থেকে উপকার গ্রহণ করতে হলে মানুষকে অত্যন্ত মূল্যবান এক মূল্য দিতে হয়, আর তা হলো তার জীবনকাল। মানুষ রাত ও দিনের ব্যবহার, পৃথিবীতে বসবাস এবং প্রকৃতির সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার বিনিময়ে নিজের জীবন (যা তার মূল পুঁজি)— ব্যয় করে; অথচ এর বদলে সে পায় ক্ষণস্থায়ী ও অস্থির বস্তু।

তিনি আরও বলেন, দুনিয়াতে এমন কোনো আনন্দ নেই যা কষ্টমুক্ত। জীবনে সংঘটিত প্রতিটি ঘটনাই কোনো না কোনোভাবে দহন ও যন্ত্রণা সৃষ্টি করে। দুঃখ ও বেদনা হলো এমন দমবন্ধ করা অভিজ্ঞতা, যা মানুষ সহজে নিজের মন ও আত্মা থেকে দূর করতে পারে না। মানুষ জীবনের একটি দিনও অর্জন করে না, যদি না তার বিনিময়ে আরেকটি দিন হারায়। জীবনে একটি দিন যুক্ত হওয়া মানে আগের দিনগুলো সংরক্ষিত থাকা নয়; বরং প্রতিনিয়ত জীবনের মূলধন থেকে কিছু অংশ ক্ষয় হয়ে যায়। এটি কোনো লাভ বা আয় নয়।

তিনি বলেন, রোগব্যাধি, কষ্ট, দুঃখ এবং শারীরিক ও মানসিক শক্তির ক্রমাগত হ্রাস—সবই মৃত্যুকে সহযোগিতা করে। মানুষ ধীরে ধীরে তার স্মৃতিশক্তি, সামর্থ্য, বুদ্ধিমত্তা ও প্রাণশক্তির অংশ হারিয়ে ফেলে। এই প্রক্রিয়াই হলো মানুষের দিকে মৃত্যুর নীরব ও অবিরাম তীর নিক্ষেপ।

হযরত আয়াতুল্লাহ জাওয়াদী আমুলী কুরআনের এই আয়াতের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন,

یَوْمَ یَجْمَعُکُمْ لِیَوْمِ الْجَمْعِ ذَٰلِکَ یَوْمُ التَّغَابُنِ

কিয়ামতের দিন কোনো লেনদেনের দিন নয়; বরং তা ক্ষতির উন্মোচনের দিন। দুনিয়াতে মানুষ যে ক্ষতিতে নিমজ্জিত থাকে, কিয়ামতের দিন তা স্পষ্ট হয়ে উঠবে এবং সেদিন মানুষের প্রতারণামূলক ও লোকসানজনক লেনদেনের প্রকৃত চিত্র প্রকাশ পাবে।

বক্তব্যের শেষাংশে তিনি আমিরুল মু’মিনীন (আ.)-এর পরবর্তী বাণীগুলোর প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, মানুষের উচিত নিজের প্রকৃত প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ সঞ্চয়ে লিপ্ত না হওয়া; কারণ প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ জমা করা মানে বাস্তবে অন্যদের সম্পদের ভাণ্ডাররক্ষক হয়ে যাওয়া।

তিনি আরও এই নূরানি বাণীর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন,

إِنَّ لِلْقُلُوبِ إِقْبَالًا وَ إِدْبَارًا

নিশ্চয়ই অন্তরের রয়েছে আগ্রহ ও অনাগ্রহ। তিনি গুরুত্ব দিয়ে বলেন, যখন হৃদয় প্রস্তুত ও আগ্রহী থাকে, তখনই জ্ঞান ও মারেফত অর্জনের সর্বোত্তম সময়; কারণ সে অবস্থায় অর্জিত জ্ঞান মানুষের অন্তরে গভীরভাবে প্রভাব ফেলে এবং স্থায়ী হয়ে থাকে।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha