রবিবার ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ - ২০:০৬
আমাদের উচিত মানুষকে দান ও কল্যাণমূলক কাজে উৎসাহিত করা

ইরানের বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন ও মারজায়ে তাকলীদ হযরত আয়াতুল্লাহ জাওয়াদী আমুলী বলেন, ইমাম জাফর সাদিক আলাইহিস সালাম আল্লাহর পবিত্র নামের শপথ করে আম্মার সাবাতীকে বলেছেন— গোপনে প্রদত্ত সদকা প্রকাশ্যে প্রদত্ত সদকার তুলনায় উত্তম। কারণ, দান গোপন রাখা হলে অভাবগ্রস্ত মানুষের সম্মান ও মর্যাদা সংরক্ষিত থাকে।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: আয়াতুল্লাহ জাওয়াদী আমুলী “দান গোপন রাখার গুরুত্ব” শীর্ষক এক আলোচনায় বলেন— ইসলামি শিক্ষায় গোপনে দান করা (ইনফাক) একটি অত্যন্ত প্রশংসনীয় ও সুন্নতসম্মত আমল। হযরত আমিরুল মুমিনিন আলী (আলাইহিস সালাম) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, দান এমনভাবে করা উচিত যেন— যদি ডান হাতে দান করা হয়, তবে বাম হাতও তা জানতে না পারে।

তিনি বলেন,

 سمعت رسول الله صلی الله علیه وآله وسلم یقول: … فإذا تصدّق أحدکم فأعطی بیمینه فلیخفهـا عن شماله

“আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি— তোমাদের কেউ যখন সদকা করবে, সে যেন ডান হাতে তা প্রদান করে এবং তা বাম হাত থেকেও গোপন রাখে।”

আয়াতুল্লাহ জাওয়াদী আমুলী ব্যাখ্যা করেন, এখানে ডান ও বাম হাতের অজ্ঞাত থাকার বিষয়টি আক্ষরিক অর্থে গ্রহণযোগ্য নয়; বরং এটি একটি রূপক। এর উদ্দেশ্য হলো দানকে সর্বোচ্চ মাত্রায় গোপন রাখা, যাতে দানগ্রহীতার মানবিক সম্মান ও মর্যাদা অক্ষুণ্ণ থাকে। কারণ, দানের প্রকৃত উদ্দেশ্য কেবল খাদ্য বা বস্তু প্রদান নয়; বরং সম্মানের সঙ্গে অভাব পূরণ করা। প্রকৃতপক্ষে দানের মূল ভিত্তি হলো ইকরাম (সম্মান প্রদর্শন), শুধু পেট ভরানো নয়।

তিনি আরও বলেন, ইমাম জাফর সাদিক (আলাইহিস সালাম) আল্লাহর নামে শপথ করে আম্মার সাবাতীকে বলেছেন— “হে আম্মার! আল্লাহর কসম, গোপনে প্রদত্ত সদকা প্রকাশ্যে প্রদত্ত সদকার চেয়ে উত্তম।”

তবে তিনি উল্লেখ করেন, কিছু ক্ষেত্রে প্রকাশ্যে দান করাও প্রশংসনীয়; বিশেষত যখন এর উদ্দেশ্য অন্যদের দান ও মানবসেবায় উৎসাহিত করা। যেমন— মসজিদ, মাদরাসা, বিদ্যালয়, হাসপাতাল ও অন্যান্য জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রকাশ্যে দান করলে দাতার জন্য দ্বিগুণ সওয়াব রয়েছে— একদিকে দানের সওয়াব, অন্যদিকে মানুষকে কল্যাণমূলক কাজে উদ্বুদ্ধ করার সওয়াব।

গুরুত্বপূর্ণ দিক
গোপন দানের সর্বোচ্চ স্তর হলো— দানের বিষয়টি যেমন অন্য কেউ জানবে না, তেমনি দানগ্রহীতাও জানবে না কে তাকে দান করেছে।

*সূত্র:* তাফসিরে তাসনীম, খণ্ড ৬৭, পৃষ্ঠা ৩৪৩–৩৪৪

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha