হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন গোলামআলি সাফায়ি বুশেহরি আজ সকালে বুশেহর প্রদেশের শ্রেষ্ঠ দাওয়াতি ব্যক্তিত্বদের পরিচিতি বিষয়ক দ্বিতীয় অনুষ্ঠানের সমাপনী অনুষ্ঠানে—যা শহীদ বিপ্লবদূত হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন শহীদ সাদেক গঞ্জির স্মরণে আয়োজিত—সমাজকে পথনির্দেশনায় আলেম সমাজের কেন্দ্রীয় ভূমিকার ওপর জোর দিয়ে বলেন: আলেম ও ধর্মপ্রচারকরা তাদের আত্মিক আলোকিততা, সততা ও আমল করার মাত্রা অনুযায়ী সমাজকে আলোকিত ও পথনির্দেশনা দিতে পারেন। যত বেশি এই আলোকিততা হবে, সামাজিক প্রভাবও তত গভীর হবে।
তিনি এই আয়োজনের উদ্যোক্তাদের ও দাওয়াতি প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রচেষ্টার প্রশংসা করে বলেন: রজব, শাবান ও রমজান—এই তিন মাস এক পূর্ণাঙ্গ আধ্যাত্মিক ধারাবাহিকতা গঠন করে। রজব হলো নীরবতা ও আত্মশুদ্ধির মাস, শাবান হলো উত্থান ও উন্নতির মাস এবং রমজান হলো আল্লাহর সান্নিধ্য ও সাহায্য লাভের মাস। নীরবতা ও আত্মশুদ্ধি ছাড়া উত্থান ও পৌঁছানো সম্ভব নয়।
তিনি ধর্মপ্রচারকের মর্যাদা সম্পর্কে বলেন: ধর্মপ্রচারক ছাড়া সমাজ আলোকিত হয় না; যেমন বাতি ছাড়া ঘরে আলো হয় না। তবে সমাজে আলোর মাত্রা নির্ভর করে প্রচারকের নিজের আলোকিততার ওপর। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) কেবল ভাষার মাধ্যমে দাওয়াত দেননি; তিনি ছিলেন “সিরাজে মুনির”—অর্থাৎ তিনি নিজে আলোকিত ছিলেন এবং অন্যদেরও আলো দিতেন।
সর্বোচ্চ নেতার প্রতিনিধি আত্মগঠনের অগ্রাধিকার প্রসঙ্গে বলেন: প্রথম দাওয়াত হলো নিজের নফসের প্রতি দাওয়াত। একজন আলেমকে প্রতিদিন নিজের আলোকিততা, সততা, আমল ও ইখলাস বাড়াতে হবে, তবেই তার কথা প্রভাব ফেলবে। যে ভাষা হৃদয় থেকে উঠে আসে এবং আমলের সঙ্গে যুক্ত থাকে, সেটিই মানুষের হৃদয়কে পথ দেখায়।
হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন সাফায়ি বুশেহরি বলেন: আলেম সমাজ আল্লাহর ফয়েজ বা অনুগ্রহ সমাজে পৌঁছানোর অন্যতম প্রধান মাধ্যম। নবী ও নিষ্পাপ ইমামদের (আ.) পর আল্লাহ তায়ালা মানবজাতির পথনির্দেশনার ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য আলেম ও ধর্মপ্রচারকদের নির্বাচন করেছেন। কোনো আলেম যদি জ্ঞানী হন কিন্তু প্রচারক না হন, তবে তার সামাজিক প্রভাব সীমিত থাকবে; কিন্তু যখন তিনি দাওয়াতের ময়দানে প্রবেশ করেন, তখন তিনি নিজের গণ্ডি পেরিয়ে সমাজকে পতনের হাত থেকে রক্ষা করেন।
তিনি বুশেহর প্রদেশে ধর্মপ্রচারের উজ্জ্বল ইতিহাসের কথা উল্লেখ করে বলেন: এই প্রদেশে ধর্মপ্রচারের একটি গভীর ও প্রভাবশালী ইতিহাস রয়েছে—ইবনে নূহ সিরাফির যুগ থেকে শুরু করে বহু বড় আলেম এখান থেকে ইরানের বিভিন্ন অঞ্চল এবং উপসাগরীয় দেশ, ভারত ও উপমহাদেশে ইসলাম প্রচারের জন্য গমন করেছেন। এই দাওয়াতি চেতনা ও ধর্মীয় সংগ্রামই এ অঞ্চলের মানুষের প্রতিরোধ ও ধার্মিকতার সংস্কৃতির মূল।
বুশেহর প্রদেশে সর্বোচ্চ নেতার প্রতিনিধি ধর্ম ও দেশের প্রতিরক্ষায় আলেম সমাজের ভূমিকার কথা স্মরণ করে বলেন: ইতিহাসের সংবেদনশীল সময়গুলোতে এই প্রদেশের আলেমরা প্রতিরক্ষার ফরজ ঘোষণা করে এবং নিজে অগ্রণী ভূমিকা রেখে জনগণকে ময়দানে এনেছেন। এই ত্যাগ ও প্রতিরোধের সংস্কৃতি আজও বুশেহর সমাজে জীবিত।
নেতৃত্ব পরিষদের সদস্য শেষ বক্তব্যে ছাত্র, প্রচারক ও ধর্মীয় কর্মীদের উদ্দেশে বলেন: তোমরা এই ভূমির মহান আলেমদের উত্তরাধিকারী এবং তোমাদের কাঁধে ভারী দায়িত্ব রয়েছে। রজব, শাবান ও রমজান মাসের সর্বোচ্চ সুযোগ কাজে লাগিয়ে আত্মশুদ্ধি ও আধ্যাত্মিক উন্নতি সাধন করলে সমাজকে আরও কার্যকরভাবে পথনির্দেশনা দেওয়া সম্ভব হবে।
আপনার কমেন্ট