মঙ্গলবার ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫ - ১৬:০৫
‘ইমাম খোমেনি (রহ.)-এর ফিকহ’ শীর্ষক বিশেষায়িত বিভাগ চালু হচ্ছে

হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন মোকিমি হাজী, “ইমাম খোমেনি (রহ.)-এর উসূলি চিন্তাধারা” গ্রন্থের লেখক, বইটির উন্মোচন অনুষ্ঠানে ঘোষণা করেন যে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ফিকহের বিভিন্ন বিশেষায়িত বিভাগ অনুমোদিত হয়েছে এবং অচিরেই ‘ইমাম খোমেনি (রহ.)-এর ফিকহ’ শীর্ষক একটি বিশেষায়িত বিভাগও চালু করা হবে, যাতে আগ্রহীরা তাঁর চিন্তাধারার সঙ্গে কেন্দ্রীভূতভাবে পরিচিত হতে পারেন।

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, “ইমাম খোমেনি (রহ.)-এর উসূলি চিন্তাধারা” বইটির উন্মোচন অনুষ্ঠান ইমাম খোমেনি (রহ.)-এর রচনাবলি সংরক্ষণ ও প্রকাশ দপ্তরে (কুম) অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন আবুল কাসেম মোকিমি হাজী—দেশের হাওজা ইলমিয়ার শিক্ষা বিষয়ক উপ-পরিচালক এবং উক্ত গ্রন্থের লেখক।

নিজের বক্তব্যের শুরুতে তিনি রজব মাসের আগমন ও ইমাম বাকির (আ.)-এর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানান এবং পবিত্র প্রতিরক্ষার (ইরান-ইরাক যুদ্ধ) সেনাপতি ও শহীদদের স্মরণ করেন। এরপর তিনি ইমাম খোমেনি (রহ.)-এর মহান মর্যাদার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন: ইমাম খোমেনি (রহ.) ধর্মের এক নতুন পাঠ ও চিন্তাধারা উপস্থাপন করে শুধু ইসলামকে পুনর্জীবিতই করেননি, বরং নাস্তিকতার প্রবাহের বিরুদ্ধে তাওহিদের ফ্রন্টকে শক্তিশালী করেছেন।

হাওজা ইলমিয়ার অগ্রগতি ও বিশেষায়িত বিভাগের বিস্তার

তিনি আজকের হাওজা ইলমিয়ার বিকাশের কথা উল্লেখ করে বলেন: বর্তমানে হাওজা ইলমিয়ায় ১২০টিরও বেশি বিভাগ ও শাখা চালু রয়েছে এবং বৈজ্ঞানিক উৎসবগুলো ৪০০টিরও বেশি বিভাগকে অন্তর্ভুক্ত করছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ফিকহের বিশেষায়িত বিভাগগুলো অনুমোদন পেয়েছে এবং খুব শিগগিরই ‘ইমাম খোমেনি (রহ.)-এর ফিকহ’ শীর্ষক বিশেষায়িত বিভাগ চালু হবে, যাতে আগ্রহীরা তাঁর চিন্তাধারার সঙ্গে গভীরভাবে পরিচিত হতে পারেন।

‘ইমাম খোমেনি (রহ.)-এর উসূলি চিন্তাধারা’ বইয়ের পরিচিতি

হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন মোকিমি হাজী বইটি সম্পর্কে বলেন: এই গ্রন্থটি ইমাম খোমেনি (রহ.)-এর উসূলি চিন্তাধারা নিয়ে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে পাঠদান ও গবেষণার ফল। এটি আশির দশকের শেষভাগ ও নব্বই দশকের শুরুতে কুমে উপস্থাপিত হয়। বর্তমান বইটি উসূলশাস্ত্রে ইমামের বিভিন্ন বক্তব্য, টীকা ও নতুন চিন্তার একটি সংকলন, যা সততা ও নির্ভুলতার সঙ্গে সংরক্ষণ ও সাজানো হয়েছে।

উসূলশাস্ত্রে ইমাম খোমেনি (রহ.)-এর শিক্ষাদান পদ্ধতি

তিনি ইমাম খোমেনি (রহ.)-এর শিক্ষাদান পদ্ধতি সম্পর্কে বলেন: উসূলশাস্ত্র পড়ানো শুরু করার সময় থেকেই ইমামের বৈজ্ঞানিক ব্যক্তিত্ব গঠিত ছিল এবং বিভিন্ন সময়পর্বে তাঁর চিন্তার ঐক্য ও পরিপক্বতা বজায় ছিল। তিনি উসূলের আলোচনায় দর্শন ও ইরফান (তাসাউফ) থেকে উপকৃত হলেও সাধারণ মানুষের বোধগম্য ভাষা ও  প্রচলিত রীতি ভিত্তিক (প্রচলিত বুদ্ধিবৃত্তিক রীতি) দৃষ্টিভঙ্গির ওপর জোর দিতেন এবং অন্যান্য উসূলি মতবাদের ওপর গুরুতর সমালোচনা উপস্থাপন করতেন।

বইয়ের বিষয়বস্তু ও ইমাম খোমেনি (রহ.)-এর নতুনত্ব

হাওজা ইলমিয়ার শিক্ষা বিষয়ক উপ-পরিচালক আরও বলেন: এই বইয়ে ইমাম খোমেনি (রহ.)-এর লিখিত রচনার পরিচয়ের পাশাপাশি উসূলশাস্ত্রের দর্শন, উসূলের উৎসসমূহ, বুদ্ধি ও বর্ণনার (আকল ও নকল) অবস্থান, বুদ্ধিমানদের আচরণ (বিনা-য়ে উক্বালা) এবং উসূলের একটি স্বতন্ত্র উৎস হিসেবে সুন্নাহ বা সীরাতের প্রতি ইমামের দৃষ্টিভঙ্গি আলোচনা করা হয়েছে।
এছাড়াও বুদ্ধির প্রামাণিকতা, বুদ্ধি ও বর্ণনার সংঘাত, এবং বক্তৃতাগুলোর অবিভাজ্যতা বিষয়ক তত্ত্বসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইমাম খোমেনি (রহ.)-এর নতুন চিন্তাগুলো বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

ইজতিহাদের প্রাথমিক জ্ঞানগুলোর গুরুত্ব

তিনি ইমাম খোমেনি (রহ.)-এর চিন্তাধারার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হিসেবে ইজতিহাদের প্রাথমিক জ্ঞানের ওপর বিশেষ গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে বলেন:
সাহিত্য, যুক্তিবিদ্যা ও মৌলিক বিজ্ঞানে দুর্বলতা থাকলে শিক্ষার্থীরা উচ্চতর স্তরে কাঙ্ক্ষিত ফল অর্জন করতে পারে না। ইমাম খোমেনি সবসময় এসব প্রাথমিক বিষয়ের গুরুত্বের ওপর জোর দিতেন।

ইমামের দৃষ্টিতে দর্শন ও ইরফানের অবস্থান

হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন মোকিমি হাজী বলেন: দর্শন ও ইরফানে গভীর দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও ইমাম খোমেনি (রহ.) উসূলশাস্ত্রে জটিল দার্শনিক পরিভাষা ব্যবহার এড়িয়ে চলতেন এবং সাধারণ বোধগম্যতার ওপর গুরুত্ব দিতেন। এই পদ্ধতির ফলে তাঁর উসূলি চিন্তাধারা পাঠকদের কাছে সহজবোধ্য হয়, আবার একই সঙ্গে এর বৈজ্ঞানিক গভীরতাও বজায় থাকে।

তিনি বক্তব্যের শেষে বলেন: “ইমাম খোমেনি (রহ.)-এর উসূলি চিন্তাধারা” গ্রন্থটি ইমামের উসূলি দর্শনের একটি পূর্ণাঙ্গ ও নির্ভুল চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করেছে এবং এ ক্ষেত্রে গভীরতর গবেষণার পথ উন্মুক্ত করেছে। আজ আমাদের দায়িত্ব হলো ইমাম (রহ.)-এর চিন্তাধারাকে পুনর্পাঠ ও ব্যাখ্যার মাধ্যমে তাঁর প্রতি আমাদের ঋণ শোধ করা এবং ইসলামী সভ্যতা নির্মাণের লক্ষ্যে হাওজার বৈজ্ঞানিক পথকে আরও শক্তিশালী করা।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha