হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, হুজ্জাতুল ইসলাম ও মুসলিমিন আবাদীজাদে তাঁর বক্তব্যে ইমাম হুসাইন (আ.) ও ইমাম সাজ্জাদ (আ.)-এর অর্থনৈতিক সংকট এবং সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার বিষয়ে আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, খলিফার শাসনব্যবস্থা আহলুল বাইতের (আ.) প্রভাব কমানোর জন্য শিয়াদের রাষ্ট্রীয় কোষাগারের (বায়তুল মাল) অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছিল। তবে ইমাম সাজ্জাদ (আ.) এই কঠিন পরিস্থিতিতেও দরিদ্র ও অভাবীদের সহায়তা করা বন্ধ করেননি এবং কঠিন অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও সমাজের আধ্যাত্মিক নেতা হিসেবে নিজের অবস্থান অটুট রেখেছিলেন।
আহলুল বাইতের (আ.) প্রতি নির্যাতন ও ইমাম সাজ্জাদ (আ.)-এর দৃঢ় অবস্থান
হরমুজগান থেকে হাওজা নিউজ এজেন্সির প্রতিবেদক জানায়, আন্তর্জাতিক কংগ্রেসে হুজ্জাতুল ইসলাম ও মুসলিমিন আবাদীজাদে ইমাম সাজ্জাদ (আ.)-এর জীবনচরিতের একইসঙ্গে নিপীড়ন ও শক্তিমত্তার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তিনি বলেন, কারবালার ঘটনার পর ইমাম সাজ্জাদ (আ.) সবচেয়ে কঠিন সময় অতিবাহিত করেন এবং আহলুল বাইতের (আ.) বন্দিদশার বর্ণনা করেন।
তিনি ইমাম সাজ্জাদ (আ.)-এর দৃঢ় অবস্থানের প্রমাণ হিসেবে উবাইদুল্লাহ ইবনে জিয়াদের দরবারে তাঁর উপস্থিতির ঘটনাটি উল্লেখ করেন। যেখানে ইবনে জিয়াদ গর্বভরে ইমামের পরিচয় জানতে চাইলে ইমাম অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসের সাথে উত্তর দেন, “আমি আলী ইবনে হুসাইন।”
ইবনে জিয়াদ, যিনি ধারণা করেছিলেন যে কারবালায় ইমাম হুসাইনের (আ.) সকল পুত্র শহীদ হয়েছেন, অবাক হয়ে বললেন, "আল্লাহ কি আলী ইবনে হুসাইনকে হত্যা করেননি?"
তখন ইমাম দৃঢ়তার সঙ্গে সংশোধন করে বললেন, "আমার এক ভাই ছিলেন, যার নামও আলী ছিল, তোমাদের সেনারা তাকে হত্যা করেছে।"
এই জবাব ইমামের ঐতিহাসিক সত্য প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টার স্পষ্ট নিদর্শন।
ইমামের শিক্ষাদান ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন
হরমুজগানের ওয়ালিয়ে ফকীহের প্রতিনিধি আরও বলেন, শত্রুরা ইমাম সাজ্জাদ (আ.)-এর শিক্ষাদান ও জ্ঞান প্রচারের প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করতে চেয়েছিল এবং তাঁর পাঠদান বন্ধ করতে চেয়েছিল। তবে ইমাম নতুন কৌশল অবলম্বন করেন এবং দোয়ার ভাষা ব্যবহার করে সাহিফা সাজ্জাদিয়া এর মতো কালজয়ী গ্রন্থের মাধ্যমে সমাজের শিক্ষা ও নৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখেন। ইমামের দোয়াগুলো কেবল আধ্যাত্মিক বিষয়ই নয়, বরং গভীর সামাজিক, রাজনৈতিক এবং নৈতিক শিক্ষা প্রদান করে, যা মুসলমানদের জন্য পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করে।
খলিফার সাথে বিতর্ক ও ইমামের রাজনৈতিক দৃঢ়তা
হুজ্জাতুল ইসলাম আবাদীজাদে আরও বলেন, ইমাম সাজ্জাদ (আ.)-এর শক্তিমত্তার আরেকটি দৃষ্টান্ত ছিল তাঁর আময়্যাদ খলিফা আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ানের সঙ্গে বিতর্ক। খলিফা ইমামকে তার প্রতি আনুগত্য স্বীকার করাতে চেয়েছিলেন, কিন্তু ইমাম কুরআনের আয়াত উদ্ধৃত করে জালিম শাসনের বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করেন এবং স্পষ্ট করেন যে, ইমামত একটি ঈশ্বরপ্রদত্ত অবস্থান, যা শুধুমাত্র আল্লাহর ইচ্ছাতেই নির্ধারিত হয়।
এক চিঠিতে আবদুল মালিক ইমামকে হুমকি দেন যে, যদি তিনি অনুসারীদের সঙ্গে বৈঠক করা বন্ধ না করেন, তবে তাঁকে কঠোর দমন-পীড়নের শিকার হতে হবে।
কিন্তু ইমাম অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে জবাব দেন, “মানুষ সত্যের চারপাশে একত্রিত হয়, আমি তাদের ডাকি না।”
এই উত্তর ইমামের আধ্যাত্মিক ও সামাজিক প্রভাবের গভীরতা তুলে ধরে।
ইমাম সাজ্জাদ (আ.)-এর সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ভিত্তি স্থাপন
হরমুজগানের ওয়ালিয়ে ফকীহের প্রতিনিধি বলেন, সমস্ত বাধা সত্ত্বেও, ইমাম সাজ্জাদ (আ.) এমন এক শিক্ষাব্যবস্থা ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ভিত্তি স্থাপন করেন, যা পরবর্তীতে ইমাম বাকির (আ.) ও ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-এর মাধ্যমে ব্যাপকভাবে বিকশিত হয়। তিনি জ্ঞানচর্চার জন্য জায়েদ ইবনে আলী, মুহাম্মাদ ইবনে মুসলিম, আবু হামযা সোমালী, সাঈদ ইবনে জুবাইর, ইউনুস ইবনে আবদুর রহমান এবং ফাযল ইবনে ইয়াসারের মতো অসাধারণ ছাত্রদের শিক্ষা দেন, যারা পরবর্তীতে শিয়া ফিকহ ও জ্ঞানের ভিত্তি স্থাপন করেন।
উপসংহার
বন্দর আব্বাসের জুমার ইমাম তাঁর বক্তব্যের শেষে বলেন, "ইমাম সাজ্জাদ (আ.) তাঁর নিপীড়নকে একটি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে আল্লাহর নীতির প্রচার ও বাস্তবায়নের জন্য কাজ করেছেন।" তিনি কঠিনতম পরিস্থিতিতেও তাঁর আধ্যাত্মিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও সামাজিক ক্ষমতা বজায় রেখেছিলেন এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য পথপ্রদর্শক হয়েছিলেন।
এই বক্তব্য আন্তর্জাতিক কংগ্রেসে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয় এবং ইমাম সাজ্জাদ (আ.)-এর ব্যক্তিত্বের নতুন দিক গবেষকদের সামনে উন্মোচন করে।
আপনার কমেন্ট