হাওজা নিউজ এজেন্সির প্রতিবেদন অনুযায়ী, হাওজায়প ইলমিয়ার সুপ্রিম কাউন্সিলের সদস্য আয়াতুল্লাহ মাহমুদ রাজাভী হাওজা নিউজ এজেন্সির সাংবাদিকের সাথে সাক্ষাৎকারে বলেন, আজ আমাদের সমাজে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ইসলামের শত্রুরা আহলে বাইত (আ.)-এর মাযহাব এবং বিপ্লবের বিরোধীরা যেকোনো সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে।
প্রথম বিষয়: হিজাব
নেতৃত্ব বিশেষজ্ঞ পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য যোগ করেন: হিজাব একটি শরয়ী ওয়াজিব বিধান, যা সকলকে মেনে চলতে হবে। আলহামদুলিল্লাহ, আমাদের সমাজের অধিকাংশ মানুষ ধার্মিক এবং শরীয়তের বিধান মেনে চলে। মাঝে মাঝে দেখা যায় এমন কিছু অস্বাভাবিক ঘটনা, যা দেখে শত্রুরা এই ক্ষুদ্র বিষয়গুলোকে কাজে লাগিয়ে সমাজকে হিজাবের বিরোধী হিসেবে চিত্রিত করতে চায়। ফার্সি ১৪০১ সালের (মাইশা আমিন) ফিতনার সময় যখন শত্রুরা এই বিষয়টি কাজে লাগাতে চেয়েছিল, তখন নারীরা নিজেরাই এর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন এবং শত্রুরাও স্বীকার করেছে যে তারা এ থেকে কোনো সুবিধা নিতে পারেনি। তাই আমাদের সমাজ ধার্মিক এবং জনগণ ইসলাম ও আহলে বাইত (আ.)-এর মাযহাব, ব্যবস্থা ও নেতৃত্বের প্রতি অনুগত। তবে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে যাতে শত্রুরা কোনো সুযোগ নিতে না পারে।
হিজাবের মনস্তাত্ত্বিক ও সামাজিক দিক
তিনি আরও বলেন: হিজাব শুধু একটি শরয়ী বিধানই নয়, এর মনস্তাত্ত্বিক দিকও রয়েছে যা অনেক উপকারী। বৈজ্ঞানিক অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে যে হিজাব মানার ফলে মানসিক প্রশান্তি, নৈতিক অবক্ষয় রোধ এবং সমাজের পবিত্রতা বজায় থাকে। কুরআন মজিদও হিজাব সম্পর্কে বলেছে যে এটি সমাজের উন্নতি ও পবিত্রতা উভয়ই নিশ্চিত করে। ঐতিহাসিক দিক থেকেও যদি আমরা জাতিগুলোর ইতিহাস পর্যালোচনা করি, তাহলে দেখব যে জাতিগুলো স্বভাবগতভাবেই হিজাব মেনে চলত, যদিও তা তাদের সময়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল।
হিজাবের বিরুদ্ধে শত্রুদের ষড়যন্ত্র
ইমাম খোমেনী (রহ.) শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বলেন: ধর্ম ও মানবতার শত্রুরা তাদের প্রধান ষড়যন্ত্রগুলোর মধ্যে একটি হিসেবে হিজাবের বিরুদ্ধে সংগ্রামকে স্থান দিয়েছে। সবাই জানে যে রেজা খান ব্রিটিশদের নির্দেশে ক্ষমতায় এসেছিল এবং তাদের আদেশ পালন করত। তাদের আদেশগুলোর মধ্যে একটি ছিল হিজাবের বিরুদ্ধে সংগ্রাম, যা সমাজে ব্যাপকভাবে প্রয়োগ করা হয়েছিল। নিঃসন্দেহে এটি ইসলাম ও আমাদের জাতির শত্রুদের ইচ্ছা ছিল, যা তাদের এজেন্টদের মাধ্যমে অঞ্চলে বাস্তবায়িত হচ্ছিল। ১৪০১ সালের ফিতনার সময়ও আমরা দেখেছি যে ব্যবস্থা ও ইসলামের সকল শত্রু প্রকাশ্যে মাঠে নেমে এসেছিল এবং হিজাবের বিরুদ্ধে অশান্তি পরিচালনা করেছিল। এমনকি তারা তাদের এজেন্টদের বেতন দিয়েছিল এই কাজগুলো করার জন্য। তাই এটি শত্রুদের একটি ষড়যন্ত্র এবং আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।
হিজাব আইন বাস্তবায়নে দায়িত্বশীলদের দায়িত্ব
ইসলামী সরকার গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান আরও বলেন: এছাড়াও, হিজাব একটি আইন। প্রতিটি সমাজে যখন একটি আইন প্রণয়ন করা হয়, তখন সমাজের সকল সদস্য ও দায়িত্বশীলদের উচিত এর বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ তৈরি করা এবং এটি সমর্থন করা। যদি প্রতিটি আইন কিছু ব্যক্তির নাটকীয়তার দ্বারা প্রভাবিত হয়, তাহলে সমাজ সমস্যায় পড়বে। যখন ইসলামী পরিষদে একটি আইন পাস হয়, তখন সকলকে তা মেনে চলতে হবে এবং দায়িত্বশীলদেরও এর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাহী বিভাগকে আইন বাস্তবায়নের সর্বোচ্চ সমর্থক হতে হবে, কারণ এর বাস্তবায়নের দায়িত্ব এই বিভাগের উপর ন্যস্ত।
হিজাব আইন লঙ্ঘনকারীদের সাথে বিচার বিভাগের ভূমিকা
আয়াতুল্লাহ রাজাভী জোর দিয়ে বলেন: বিচার বিভাগকেও এমন ব্যক্তিদের সাথে মোকাবিলা করতে হবে যারা ব্যাখ্যা ও সতর্কতা সত্ত্বেও হিজাব আইন লঙ্ঘন অব্যাহত রাখে। এই ব্যক্তিরা হয় শত্রুদের প্ররোচনায় প্রভাবিত বা (আল্লাহ না করুন) তারা এমন এজেন্ট যারা ইসলামের শত্রুদের লক্ষ্য সাধনে নিয়োজিত।
দায়িত্বশীলদের প্রতি প্রত্যাশা
তিনি আরও যোগ করেন: আমরা সকল দায়িত্বশীলদের কাছ থেকে আশা করি যে তারা হিজাব আইন বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ তৈরি করবেন এবং তাদের বক্তৃতা ও কথায় এমন কথা বলবেন যা এই আইন বাস্তবায়নকে শক্তিশালী করে। তাদের শত্রুদের দ্বারা প্রভাবিত হওয়া উচিত নয়। শত্রুরা এই আইন বাস্তবায়ন হলে সমস্যা সৃষ্টি হবে বলে দাবি করে, কিন্তু বাস্তবতা হলো আমাদের সমাজের অধিকাংশ মানুষ ও নারী ইসলাম ও বিপ্লবে বিশ্বাস করে এবং নেতার কথায় অনুপ্রাণিত।
হাওজায়ে ইলমিয়ার সুপ্রিম কাউন্সিলের সদস্য বলেন: যদি হিজাব আইন সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়, তবে সবাই এটি গ্রহণ করবে। এই আইন ধার্মিক সমাজের দাবি। ধার্মিকরা উদ্বিগ্ন যে কেন এই আইন বাস্তবায়নে বিলম্ব হচ্ছে।
হিজাব; জাতীয় ও ইসলামী আইন
আয়াতুল্লাহ রাজাভী যোগ করেন: হিজাব শুধু একটি শরয়ী বিধানই নয়, এটি ইসলামী পরিষদ কর্তৃক গৃহীত আইনও বটে। প্রতিটি দেশে নাগরিকদের সেই দেশের আইন মেনে চলা বাধ্যতামূলক। ইসলামী প্রজাতন্ত্রও জনগণের ভোটে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং দায়িত্বশীলদের দায়িত্ব হলো ইসলামের বিধান বাস্তবায়ন করা। এই বিধানগুলোর মধ্যে একটি হলো হিজাবের বিষয়।
তিনি বলেন: শত্রুদের হিজাব বিরোধিতার অপব্যবহার এবং তাদের বৈশ্বিক লক্ষ্যগুলোর কারণে, হিজাব বিরোধিতার বিরুদ্ধে লড়াই আমাদের জাতির জন্য একটি বিপ্লবী দায়িত্ব। আমাদের জাতিকে বিপ্লব রক্ষার জন্য হিজাবের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে।
আয়াতুল্লাহ রাজবী শেষে যোগ করেন: আমরা আশা করি যে হিজাব আইন সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হবে এবং আমরা সমাজের বৈজ্ঞানিক, আধ্যাত্মিক ও সামাজিক উন্নতিতে এর ইতিবাচক প্রভাব দেখতে পাব। আমাদের জাতি এই আইন গ্রহণ করবে। ১৪০১ সালের ফিতনার আগে, আমাদের দেশে হিজাব ব্যাপকভাবে পালিত হতো। এটি প্রমাণ করে যে শত্রুদের বিশ্বাসঘাতক হস্তক্ষেপই এই বিষয়টিকে একটি চ্যালেঞ্জে পরিণত করেছিল। আলহামদুলিল্লাহ, নারীরা এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন এবং আইন বাস্তবায়নের জন্য পরিবেশ প্রস্তুত রয়েছে।
আপনার কমেন্ট