বুধবার ১৯ মার্চ ২০২৫ - ১৮:১৭
কোন সময় পর্যন্ত পাপ রহমতের দরজা বন্ধ করে না?

পাপকে নিজের প্রতি জুলুম ও অপচয় হিসাবে বিবেচনা করা হয়, যা আল্লাহর রহমত থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। তবে সূরা যুমারের ৫৩ নং আয়াত সুসংবাদ দেয় যে, আল্লাহর রহমতের দরজা কখনও বন্ধ হয় না। আল্লাহ পাপী বান্দাদেরকে তাঁর রহমত থেকে নিরাশ না হতে বলেন এবং তাওবা ও ইস্তিগফারের মাধ্যমে তাঁর দিকে ফিরে আসার আহ্বান জানান।

খবর সংস্থা হাওজা: পবিত্র রমজান মাসে প্রতিদিন “জীবন গঠনকারী আয়াত”-এর সাথেই থাকুন; এই সিরিজটি কুরআন মাজিদের কিছু আয়াত এবং সংক্ষিপ্ত ও প্রায়োগিক তাফসীরের একটি সংগ্রহ, যা জীবনের পথপ্রদর্শক এবং সুখের সন্ধান দেয়। এই আয়াতগুলোর মাধ্যমে আমরা পবিত্র রমজান মাসের দিনগুলোকে আল্লাহর কালামের আলোয় আলোকিত করতে পারি। 

হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন জাওয়াদ মুহাদ্দিসী: 

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

আল্লাহ সূরা যুমারের ৫৩ নং আয়াতে বলেছেন:
«قُلْ یَا عِبَادِیَ الَّذِینَ أَسْرَفُوا عَلَیٰ أَنفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا مِن رَّحْمَةِ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ یَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِیعًا» 
অর্থাৎ, “বলো, হে আমার বান্দারা, যারা নিজেদের প্রতি জুলুম করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব গুনাহ ক্ষমা করেন।”

আমরা সবাই আল্লাহর বান্দা এবং কুরআনের আয়াতগুলোতেও আল্লাহ সর্বদা আমাদেরকে এই সম্বোধনে ডাকেন। এই আয়াতে আল্লাহ তাদেরকে সম্বোধন করেছেন, যারা নিজেদের প্রতি জুলুম (গুনাহ) করেছে। 

এখানে “নিজেদের প্রতি অপচয়/জুলুম” বলতে পাপ করা এবং বন্দেগীর সীমা অতিক্রম করাকে বোঝানো হয়েছে। পাপকে নিজের প্রতি অপচয় হিসাবে বিবেচনা করা হয়, কারণ এটি নিজের অস্তিত্বের মূল্য নষ্ট করে, জীবনকে ধ্বংস করে এবং আত্মার বিকাশের পথ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। 

এই কারণে পাপকে এক ধরনের অপচয় হিসাবে গণ্য করা হয়, যার ফলাফল হল মানবীয় পরিপূর্ণতা থেকে বঞ্চিত হওয়া এবং আল্লাহর রহমত থেকে দূরে সরে যাওয়া। 

তবে আল্লাহ তাঁর অসীম দয়া ও রহমতের মাধ্যমে এই বান্দাদেরকে হতাশ ও নিরাশ করেন না, বরং তাদেরকে আশাবাদী হতে আহ্বান জানান:
«لَا تَقْنَطُوا مِن رَّحْمَةِ اللَّهِ»
অর্থাৎ, আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না।

এই আয়াতে “কুনুত” শব্দটি গভীর হতাশা ও নিরাশাকে বোঝায়। আল্লাহ জোর দিয়ে বলেছেন:
«إِنَّ اللَّهَ یَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِیعًا»
অর্থাৎ, আল্লাহ সব গুনাহ ক্ষমা করেন।

অনেক মুফাসসির এই আয়াতকে কুরআন মাজিদের সবচেয়ে আশাব্যঞ্জক আয়াত হিসাবে বিবেচনা করেছেন, কারণ এটি সুসংবাদ দেয় যে, প্রতিটি পাপ (মানুষের অধিকার সংক্রান্ত বিষয় ছাড়া)– তাওবা ও ইস্তিগফারের মাধ্যমে আল্লাহর ক্ষমার অন্তর্ভুক্ত হবে। অবশ্যই, মানুষের হক নষ্ট এই নিয়মের ব্যতিক্রম। 

যদি কেউ মানুষের কাছে ঋণী হয় বা হক বিনষ্ট করে, তবে তাকেই তাদের অধিকার আদায় করতে হবে বা তাদের সন্তুষ্টি অর্জন করতে হবে। কিন্তু যদি কোনো বান্দা পাপ ও ভুলে নিমজ্জিত থাকে, তবে যতক্ষণ না সে আল্লাহর দিকে ফিরে আসে, তাওবা করে এবং ইস্তিগফার করে, ততক্ষণ আল্লাহর রহমতের দরজা তার জন্য খোলা থাকবে। 

এই আয়াতটি মানুষের জন্য একটি সুযোগ যাতে সে যদি তার ঐশ্বরিক পরিচয় ভুলে যায়, তবে তা পুনরুদ্ধার করতে পারে এবং আল্লাহর দরবারে ফিরে আসার মাধ্যমে সেই পরিপূর্ণতা অর্জন করতে পারে। আর এই সুযোগ ও সময় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা মানুষকে তার মৃত্যুর আগপর্যন্ত নির্ধারণ করেছেন।

Tags

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha