হাওজা নিউজ এজেন্সি: ইমাম আলী ইবনে হুসাইন সাজ্জাদ (আ.)-এর শাহাদত সম্পর্কে ইতিহাসে বিভিন্ন মত পাওয়া যায়। একটি প্রসিদ্ধ বর্ণনা অনুযায়ী, তিনি হিজরি ৯৫ সনের ২৫ মহররম তারিখে উমাইয়া খলিফা হিশাম ইবনে আব্দুল মালিকের নির্দেশে বিষ প্রয়োগে শহীদ হন। [বিহারুল আনওয়ার, খণ্ড ৪৬, পৃ. ১৫২–১৫৪]
তবে ইমামের শাহাদতের নির্দিষ্ট সাল নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে, যা হিজরি ৯২ থেকে ১০০ সালের মধ্যে বলা হয়ে থাকে। বিখ্যাত শিয়া ব্যক্তিত্ব শেখ মুফিদ ও শেখ কুলাইনির মতে, ইমাম (আ.)-এর শাহাদত ঘটে ৯৫ হিজরিতে, আর আরবেলি ৯৪ হিজরিকে উল্লেখ করেছেন। শাহাদতের তারিখ নিয়েও মতভেদ রয়েছে; কেউ কেউ ১২, ১৮, ১৯ বা ২২ মহররম উল্লেখ করেছেন।
শাহাদতের রাতের ঘটনা
বিহারুল আনওয়ার গ্রন্থে বর্ণিত আছে, ইমাম (আ.)-এর শাহাদতের রাতে তিনি তাঁর পুত্র ইমাম মুহাম্মাদ বাকির (আ.)-কে বলেন, “পুত্র, ওযুর জন্য আমার পানি দাও।” ইমাম বাকির (আ.) পানি আনেন, কিন্তু ইমাম সাজ্জাদ (আ.) বলেন, “এই পানি উপযুক্ত নয়, এতে মৃত প্রাণী রয়েছে।” পরে আলো জ্বালিয়ে দেখা যায় পানিতে একটি মৃত ইঁদুর রয়েছে। এরপর বিশুদ্ধ পানি আনলে ইমাম বলেন, “পুত্র! এটাই সেই রাত, যেটির প্রতিশ্রুতি আমাকে দেওয়া হয়েছিল।”
তিনি তখন তাঁর প্রিয় উটটির যত্ন নেওয়ার নির্দেশ দেন, যে উটটি তাঁকে ২২ বার হজে নিয়ে গিয়েছিল। তাঁর শাহাদতের পর উটটি তিন দিন তাঁর কবরের পাশে অবস্থান করে এবং তারপর মৃত্যুবরণ করে।
ইন্তেকালের মুহূর্ত
একটি বর্ণনায় আছে, বিষ প্রয়োগের পর ইমাম কিছু সময়ের জন্য অচেতন হয়ে পড়েন, পরে সুরা ওয়াকেয়া ও সুরা জুমার আয়াত তিলাওয়াত করেন, এবং এই আয়াত উচ্চারণ করেন, “সব প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাদের সঙ্গে প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করেছেন এবং জান্নাতের ভূমি আমাদের উত্তরাধিকার দিয়েছেন যাতে আমরা যেখানে ইচ্ছা আশ্রয় নিতে পারি। কর্মীদের জন্য এটি কত উত্তম প্রতিদান।” [সূরা জুমার, আয়াত ৭৪]
এই আয়াত পাঠের পর তিনি ইন্তেকাল করেন।
জানাজা ও জনসাধারণের প্রতিক্রিয়া
সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যাব বর্ণনা করেন,
“ইমামের শাহাদতের সময় মদিনার প্রতিটি শ্রেণির মানুষ—ভালোমন্দ নির্বিশেষে—তাঁর জানাজায় উপস্থিত হয়। সবাই কান্নায় ভেঙে পড়ে ও তাঁর প্রশংসা করে। এমনকি মসজিদে নববিতে একজনও অবশিষ্ট ছিল না।” [বিহারুল আনওয়ার, খণ্ড ৪৬; উসুলে কাফি, খণ্ড ১]
শাহাদতের কারণ
ইমামের শহীদ হওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ ছিল:
- জনগণের মধ্যে তাঁর অভাবনীয় প্রভাব;
- দোয়ার মাধ্যমে শিক্ষাদান ও ইসলামী সংস্কৃতি প্রচার;
- উমাইয়া শাসনের জুলুম ও অনাচার প্রকাশ্যে নিন্দা;
- খলিফার আশঙ্কা, হয়তো ইমাম (আ.) বিদ্রোহ করবেন।
তিনি ওয়ালিদ ইবনে আব্দুল মালিকের শাসনামলে শহীদ হন। সে সময় মদিনার গভর্নর হিশাম ইবনে ইসমাঈল অত্যন্ত নিপীড়ক ছিল। ক্ষমতা হারানোর পর সে নিজেই স্বীকার করে, “আমি কেবল আলী ইবনে হুসাইন (আ.)-কেই ভয় পেতাম।”
এমনকি ইমাম তাঁর প্রতি কোনো প্রতিশোধ নেননি বরং বলেছিলেন, যদি কোনো আর্থিক সংকটে থাক, আমরা তোমার সহায়তা করব।
দাফনস্থল
ইমাম সাজ্জাদ (আ.)-এর কবর সৌদি আরবের মদিনার ঐতিহাসিক বাকী কবরস্থানে অবস্থিত। সেখানে তিনি তাঁর চাচা ইমাম হাসান মুজতবা (আ.), রাসুলের চাচা আব্বাস, পুত্র ইমাম বাকির (আ.) ও নাতি ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-এর পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন।
আপনার কমেন্ট