শুক্রবার ২১ মার্চ ২০২৫ - ১২:৪৯
কেন আত্মসংশোধন ছাড়া তওবার কোনো মূল্য নেই?

সূরা শুরার ৪০ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা “ক্ষমা” এবং “সংশোধন”-এর সমন্বয়কে তাঁর পুরস্কার পাওয়ার শর্ত হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। আত্মশুদ্ধি ও আত্মসংশোধনের চেষ্টা না করলে শুধু তওবা করার মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া যায় না। এই গঠনমূলক সমন্বয়, অর্থাৎ তওবার পাশাপাশি সংশোধন, একদিকে তওবাকে অন্তর্ভুক্ত করে এবং অন্যদিকে (স্রষ্টার সঙ্গে) সম্পর্কের উন্নতি ঘটায়, যা আল্লাহর প্রতিশ্রুত বিশেষ পুরস্কারের দিকে নিয়ে যায়।

হাওজা নিউজ এজেন্সির রিপোর্ট: পবিত্র রমজান মাসে প্রতিদিন “জীবন গঠনকারী আয়াত” সিরিজের সাথে থাকুন; এই সিরিজ কুরআনের আয়াত ও সংক্ষিপ্ত ব্যবহারিক তাফসিরের একটি সংগ্রহ, যা জীবনের পথপ্রদর্শক এবং সৌভাগ্যের সন্ধান দেয়। এই আয়াতগুলোর মাধ্যমে আমরা পবিত্র রমজান মাসের দিনগুলোকে আল্লাহর কালামের আলোয় আলোকিত করব।

হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন হযরত হাদী হোসাইন খানী

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

সূরা শুরার ৪০ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন: 

وَجَزَاءُ سَیِّئَةٍ سَیِّئَةٌ مِّثْلُهَا فَمَنْ عَفَا وَأَصْلَحَ فَأَجْرُهُ عَلَی اللَّهِ إِنَّهُ لَا یُحِبُّ الظَّالِمِینَ
অর্থ: মন্দের প্রতিদান অনুরূপ মন্দ। তবে যে তওবা করে এবং আত্মসংশোধন করে, তার পুরস্কার আল্লাহর কাছে। নিশ্চয়ই তিনি জালিমদেরকে পছন্দ করেন না।

এই পবিত্র আয়াতের অর্থ হলো-
“মন্দ কাজের প্রতিদান হলো অনুরূপ মন্দ। যদি কেউ কাউকে হত্যা করে, তাহলে তার শাস্তি হবে সেই কাজের অনুরূপ; যদি কেউ কারো সম্পদ নষ্ট করে, তাহলে তার শাস্তিও হবে সেই পরিমাণে। কিন্তু যে তওবা করে এবং নিজের ও অপর পক্ষের মধ্যে সংশোধন করে, তার পুরস্কার আল্লাহর কাছে। নিশ্চয়ই আল্লাহ জালিমদেরকে পছন্দ করেন না।”

এই আয়াত থেকে বোঝা যায় যে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়সঙ্গত প্রতিশোধ গ্রহণ জায়েজ। অর্থাৎ, যদি কেউ অন্যায় করে, তাহলে তার প্রতি অনুরূপ প্রতিক্রিয়া দেখানো যেতে পারে। এটি আল্লাহর আইনে প্রতিষ্ঠিত ন্যায়ের নীতি।

তবে যদি কেউ প্রতিশোধ নেওয়ার ক্ষমতা রাখে, কিন্তু তা সত্ত্বেও ক্ষমা করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং অপর পক্ষকে ক্ষমা করে, তাহলে আল্লাহ তাআলা তার জন্য বিশেষ ও অভূতপূর্ব পুরস্কার রেখেছেন।

এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন:
فَأَجْرُهُ عَلَی اللَّهِ
(তার পুরস্কার আল্লাহর কাছে)। এমন ব্যক্তির পুরস্কার আল্লাহ তাআলার দায়িত্বাধীন।

এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে, যদি;কোনো ব্যক্তি কারো ভুলকে ক্ষমা করে, তবে আল্লাহ তাআলা এই ক্ষমাকে এমনভাবে প্রতিদান দেবেন যা অত্যন্ত মহান ও উপযুক্ত।

এই আয়াতে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে, তা হলো শুধু ক্ষমা করাই যথেষ্ট নয়। 
একজন ব্যক্তি কাউকে ক্ষমা করতে পারে, কিন্তু তার সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন এবং মনোমালিন্য দূর করার চেষ্টা না করতে পারে। আল্লাহ তাআলা বলেছেন যে, ক্ষমা অবশ্যই সংশোধনের সাথে হতে হবে, যাতে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জিত হয়। এই “ক্ষমা ও সংশোধনের সমন্বয়” একটি গঠনমূলক পদ্ধতি, যা একদিকে ক্ষমাকে অন্তর্ভুক্ত করে এবং অন্যদিকে সম্পর্কের উন্নতি ঘটায়।

এই পবিত্র আয়াতের শেষে আল্লাহ তাআলা বলেন:
إِنَّهُ لَا یُحِبُّ الظَّالِمِینَ
(নিশ্চয়ই তিনি জালিমদেরকে পছন্দ করেন না)। 
আল্লাহর এই অপছন্দ দুটি গোষ্ঠীর জন্য প্রযোজ্য: 

১. যে ব্যক্তি প্রথমে অন্যায় করে এবং অন্যের প্রতি মন্দ আচরণ করে। 

২. যে ব্যক্তি প্রতিশোধ ও প্রতিশোধ নেওয়ার সময় ন্যায়ের সীমা অতিক্রম করে এবং তার প্রতি যে পরিমাণ অন্যায় করা হয়েছে, তার চেয়ে বেশি অন্যায় করে। 


আল্লাহ তাআলা এই দুই গোষ্ঠীর কোনো জালিমকেই পছন্দ করেন না।

Tags

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha