মঙ্গলবার ২৫ মার্চ ২০২৫ - ১৩:১৪
সর্বোচ্চ নেতা ঐশ্বরিক প্রজ্ঞা দিয়ে বিপ্লবকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন

আয়াতুল্লাহ ওলামা বলেছেন, “যেভাবে ইমাম খোমেনি (রহ.) এবং মহান নেতা (হযরত আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী) ঐশ্বরিক প্রজ্ঞা দিয়ে ইসলামি বিপ্লবের পথনির্দেশনা দিয়েছেন এবং দিচ্ছেন, তেমনি ইরানের জনগণকেও আল্লাহর আনুগত্য ও সুস্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে শহিদদের পথ অনুসরণ করতে হবে।”

হাওজা নিউজ এজেন্সি: আয়াতুল্লাহ মোস্তফা ওলামা রমজান মাসের নৈতিকতা বিষয়ক এক বিশেষ ক্লাসে বক্তব্য দেন, যা গত মঙ্গলবার কোমের ইমাম খোমেনি (রহ.) হোসাইনিয়ায় অনুষ্ঠিত হয়। তিনি “ইরশাদুল কুলুব” গ্রন্থে বর্ণিত নবী করিম (সা.)-এর মিরাজের হাদীসগুলোর প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, “এই হাদীসগুলো নবীজির আধ্যাত্মিক ভ্রমণকাহিনী, যা খুব কম আলোচিত হয়। মিরাজের রাতে নবীজিকে গভীর প্রশ্ন করা হয়েছিল, যার উত্তরগুলো প্রজ্ঞার অমূল্য ভাণ্ডার।” 

রোজা: সকল ঐশ্বরিক ধর্মের সাধারণ উত্তরাধিকার
আয়াতুল্লাহ ওলামা সূরা বাকারার ১৮৩ নং আয়াত “كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ” (তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর) উল্লেখ করে বলেন, “রোজা শুধু মুসলমানদের জন্য নয়, বরং পূর্ববর্তী সকল উম্মতের জন্যই এটি ফরজ ছিল। এটি প্রমাণ করে যে, রোজার মানবিক আত্মা ও দেহের উপর গভীর প্রভাব রয়েছে।” 

তিনি আরও বলেন, “রোজার প্রভাব কখনও কখনও বস্তুগত চোখে দেখা যায় না, কিন্তু এর সত্যিকার প্রকাশ ঘটে আধ্যাত্মিক জগতে। আল্লামা তাবাতাবাঈ ও হাসানজাদেহ আমলী রোজাকে প্রজ্ঞা ও মারিফতের চাবিকাঠি বলে মনে করতেন।” 

রমজান মাসের রোজার হিকমত ও ফল
আয়াতুল্লাহ আলেমা হযরত আলী (আ.)-এর একটি হাদীস “الحكمة شجرة تنبت في القلب” (প্রজ্ঞা হলো এমন একটি গাছ যা হৃদয়ে জন্মে) উল্লেখ করে বলেন, “প্রজ্ঞা হলো সেই আলো যা রোজা মানুষের হৃদয়ে জ্বালায় এবং ভাষাকে ঐশ্বরিক বাক্যে সজ্জিত করে।” 

ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-এর একটি হাদীস উল্লেখ করে তিনি বলেন, “প্রজ্ঞা হলো জ্ঞান ও ধর্মের গভীর বুঝ। এটি শুধু হাওজায় (ধর্মীয় শিক্ষাকেন্দ্র) পড়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং রোজার মাধ্যমে অর্জিত গভীর উপলব্ধি ও ঐশ্বরিক দৃষ্টিভঙ্গিই প্রকৃত প্রজ্ঞা আনে।” 

প্রজ্ঞার সীমা: দুনিয়ার প্রতি বিমুখতা ও আখেরাতের প্রতি মনোনিবেশ
আয়াতুল্লাহ ওলামা হযরত আলী (আ.)-এর আরেকটি হাদীস “حَدُّ الْحِكْمَةِ الْإِعْرَاضُ عَنْ دَارِ الْفَنَاءِ وَ التَّوَجُّهُ إِلَى دَارِ الْبَقَاءِ” (প্রজ্ঞার সীমা হলো ধ্বংসশীল জগত থেকে বিমুখ হওয়া এবং চিরস্থায়ী জগতের দিকে মুখ ফেরানো) বর্ণনা করে বলেন, “সত্যিকার প্রজ্ঞা হলো ক্ষণস্থায়ী জগতের মোহ ত্যাগ করে চিরন্তনের দিকে ঝুঁকা।” 

তিনি হযরত আলী (আ.)-এর জুতো সেলাই করার ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, “আমিরুল মুমিনীন (আ.) শাসক হওয়া সত্ত্বেও সহজ-সরল জীবনযাপন করতেন, কারণ প্রকৃত মূল্য রয়েছে মানুষের সেবায়, না যে বাহ্যিক দুনিয়ার প্রদর্শনীতে।” 

রোজার ফল: তাকওয়া, প্রজ্ঞা ও ইমামের পরিচয়
আয়াতুল্লাহ আলেমা রোজার চূড়ান্ত ফলাফল হিসেবে “তাকওয়া, প্রজ্ঞা ও ইমাম জামান (আ.)-এর পরিচয়” উল্লেখ করে বলেন, “যেভাবে ইমাম খোমেনি (রহ.) এবং মহান নেতা ঐশ্বরিক প্রজ্ঞা দিয়ে বিপ্লবকে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং দিচ্ছেন, তেমনি ইরানের জনগণকেও আল্লাহর আনুগত্য ও সুস্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে শহিদদের পথ অব্যাহত রাখতে হবে।” 

Tags

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha