রবিবার ৬ এপ্রিল ২০২৫ - ১৮:০৮
ইসলামে মদ হারাম হওয়ার দর্শন

প্রাচীনকাল থেকেই মাদকদ্রব্য মানুষের বুদ্ধি-বিবেকের জন্য গুরুতর হুমকি হিসেবে স্বীকৃত। মদ্যপানের ফলে মানসিক ব্যাধি, অযৌক্তিক ও হিংসাত্মক আচরণের পাশাপাশি শেষ পর্যন্ত অপরাধপ্রবণতা তৈরি হতে পারে। এসব ঝুঁকি উপলব্ধি করেই ইসলাম শরাব (মদ) হারাম ঘোষণা করেছে।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: মদকে মানসিক ও আত্মিক স্বাস্থ্যের জন্য একটি গুরুতর হুমকি হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যা মানসিক ব্যাধি ও হিংসাত্মক আচরণের জন্ম দিতে পারে। 

নিম্নোক্ত প্রশ্নোত্তর পর্বে মদ হারাম হওয়ার কারণ ও এর ধ্বংসাত্মক প্রভাব নিয়ে আলোচনা করা হবে:

১. বুদ্ধি-বিবেক ধ্বংস ও মানসিক বিপর্যয়: মদ্যপান মানুষের বুদ্ধি-বিবেক লোপ করে, যা ইসলামে সর্বোচ্চ মূল্যবান গুণ। গবেষণা অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের মানসিক হাসপাতালের ৮৫% রোগী মদ্যপানের কারণে পাগল হয়ে যায়। ব্রিটেনে প্রতি ৪০ জন মানসিক রোগীর মধ্যে ৩৯ জন মদ্যপানের শিকার [তাফসীরে নমুনা, খণ্ড- ৫, পৃষ্ঠা- ৭৪]

কুরআনে বলা হয়েছে: শয়তান তো মদ্যপান ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও ঘৃণা সৃষ্টি করতে চায় এবং আল্লাহর স্মরণ ও নামাজ থেকে বিরত রাখতে চায়! (সূরা আল-মায়িদাহ, আয়াত ৯১)।

২. পারিবারিক ও সামাজিক ধ্বংস:

- মদ্যপায়ী ব্যক্তি অযৌক্তিক ও হিংসাত্মক আচরণ করে। বিখ্যাত কবি ইরাজ মির্জার একটি কবিতায় বর্ণিত হয়েছে: এক যুবক মাতাল হয়ে নিজের পিতাকে হত্যা ও বোনের সম্মানহানি করে। 

  হায়! যদি আল্লাহ দ্রাক্ষালতা শুকিয়ে দিতেন, তাহলে মানবজাতি এত বিপর্য়য় থেকে বাঁচত!
  (ইরাজ মির্জার কাব্যসংকলন, পৃ. ১৬৪)।

৩. স্বাস্থ্যগত ক্ষতি: আধুনিক গবেষণা মতে, মদ্যপান লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ ও ক্যান্সারের কারণ (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ২০২৩)। ইসলাম এটিকে “নাপাকির কাজ” (সূরা আল-মায়িদাহ, আয়াত ৯০) বলে ঘোষণা করে স্বাস্থ্য রক্ষার নির্দেশ দিয়েছে।

৪. ধর্মীয় বিধান: রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “মদ পানকারী, পরিবেশনকারী, বিক্রেতা, ক্রেতা, প্রস্তুতকারী—সবাই আল্লাহর লানতের অধিকারী!” (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৩৬৭৪)। 

ইমাম আলী (আ.) বলেছেন, মদ সমস্ত পাপের চাবিকাঠি! (নাহাজুল বালাগা)।

৫. ইসলামী দর্শন: প্রতিরোধমূলক নীতি: ইসলাম ক্ষতির উৎস বন্ধ করার নীতি (সাদ্দুয যরাই) মেনে চলে। সামান্য মদ্যপানও নিষিদ্ধ করা হয়েছে যাতে তা বড় অপরাধের দিকে নিয়ে না যায় (তাফসীরে নমুনা, খণ্ড- ৫)।

সূত্র সমূহ:

১. তাফসীরে নমুনা (আয়াতুল্লাহ নাসের মাকারেম শিরাজী), দারুল কুতুব আল-ইসলামিয়্যা, তেহরান, ১৩৭৪ হিজরি, খণ্ড- ৫

২. ইরাজ মির্জার কবিতাসংগ্রহ (সম্পাদনা: মোহাম্মদ জাফর মাহজুব), গোলশান প্রকাশনী, তেহরান, ১৩৫৬ হিজরি। 

৩. আইনুল কুরআন (মাকারেম শিরাজী), মাদ্রাসাতুল ইমাম আলী বিন আবি তালিব, কোম, ১৩৮৭ হিজরি। 

৪. সুনানে আবু দাউদ (হাদিস নং ৩৬৭৪)। 

৫. নাহাজুল বালাগা (ইমাম আলীর বাণীসমূহ)।

Tags

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha