মঙ্গলবার ৮ এপ্রিল ২০২৫ - ১৩:২৬
হিজাব বিরোধীদের হাদীসের অপব্যবহার ও তার জবাব

একটি সুযোগসন্ধানী গোষ্ঠী ইমাম সাদিক (আ.)-এর একটি হাদিসের ভিত্তিতে বেপর্দাকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করছে। তবে ফিকহি সমালোচনাগুলো প্রমাণ করে যে, এই যুক্তি বর্তমান প্রেক্ষাপটের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয় বরং সরকারি নীতিমালা ও সাংস্কৃতিক পরিকল্পনার সাথে সাংঘর্ষিক। একটি হাদিসের ভিত্তিতে কি বেপর্দার বিরুদ্ধে ধর্মীয় প্রতিরোধকে ভেঙে দেওয়া যায়?

হাওজা নিউজ এজেন্সি: পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে “হিজাব” ইসলামী সমাজের প্রতীক হিসেবে সর্বদা গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামী বিপ্লবের পর থেকে, যেখানে আধুনিক পশ্চিমা সভ্যতা নগ্নতাকে তাদের প্রতীক হিসেবে গ্রহণ করেছে, সেখানে হিজাব ইস্যুটি আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। তবে বর্তমানে কিছু অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠী ফিকহি যুক্তি উপস্থাপন করে ইসলামী প্রজাতন্ত্রের হিজাব-বিরোধী প্রতিরোধকে দুর্বল করতে চাইছে। এমনকি তারা হিজাবের প্রতি সরকারের জোরালো অবস্থানকে “অ-ফিকহি” হিসেবে চিত্রিত করার চেষ্টা করছে। 

এই গোষ্ঠীর ফিকহি দলিলগুলোর মধ্যে একটি হলো নিম্নোক্ত হাদিস: 
«إِذَا نُهینَ لَا یَنْتَهین»  
এই হাদিসটি ফিকহি আলোচনায় অপেক্ষাকৃত পরিচিত। 

হাদিসের ব্যাখ্যা ও যুক্তি: হাদিসটিতে বর্ণিত হয়েছে-  “আমি ইমাম সাদিক (আ.)-কে বলতে শুনেছি: তিহামা, মরুবাসী ও আহলে জিম্মার (অমুসলিম) নারীদের চুল দেখতে কোনো সমস্যা নেই। কেননা তাদের নিষেধ করলেও তারা (বেপর্দা থেকে) বিরত হয় না।”

হাদিসটির সনদ সহিহ হিসেবে বিবেচিত, যদিও কিছু আলেম “ইবাদ” নামক রাবির উপস্থিতির কারণে এটিকে দুর্বল বলেছেন। 

বেপর্দার পক্ষে যুক্তি:

১. হাদিসে উল্লিখিত কারণের সার্বজনীনতা: হাদিসে উল্লিখিত গোষ্ঠী (মরুবাসী, আহলে জিম্মা ইত্যাদি) বিশেষ কোনো শ্রেণিতে সীমাবদ্ধ নয়। তাই এটি এমন মুসলিম নারীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য যারা হিজাব মানে না এবং নিষেধ করলেও মানে না। 

২. দৃষ্টি প্রসঙ্গে: হাদিসে শুধু “দৃষ্টি” এর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দৃষ্টির অনুমোদন থেকে বেপর্দাকে জারি রাখার অনুমোদন নেওয়া যুক্তিগত দুর্বলতা বহন করে। 

৩. ব্যক্তি ও সরকারের দায়িত্ব একই: হাদিসে ব্যক্তির দায়িত্বের কথা বলা হয়েছে, কিন্তু বর্তমান আলোচ্য বিষয় সরকারের আইনি দায়িত্ব ও পদক্ষেপ। 

সমালোচনা:

প্রথম যুক্তি: ফিকহি দৃষ্টিকোণ থেকে গ্রহণযোগ্য হলেও দ্বিতীয় ও তৃতীয় যুক্তি দুর্বল: 

  - দৃষ্টির অনুমোদন থেকে বেপর্দার অনুমোদন নেওয়া যৌক্তিক নয়। 
  - ব্যক্তিগত দায়িত্ব ও সরকারি দায়িত্বকে এক করে দেখা ভুল। সরকারের জন্য হিজাব বাস্তবায়ন ও আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া বাধ্যতামূলক। 

হাদিসের প্রাসঙ্গিকতা: হাদিসটি নির্দিষ্ট প্রেক্ষাপটে বলা হয়েছে, যেখানে নিষেধ করলেও নারীরা হিজাব মানবে না। কিন্তু সরকারি পর্যায়ে আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য নয়। বরং সরকারের দায়িত্ব হলো শরিয়াহ বাস্তবায়ন ও সমাজে নৈতিকতা রক্ষা করা। 

আদেশ-নিষেধের শর্ত:  ইসলামে “আদেশ-নিষেধ” এর শর্ত হলো তার প্রভাবের সম্ভাবনা। এই হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে যে, নিষেধ করলে কোনো ফল হবে না। কিন্তু সরকারি আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য নয়, কারণ আইনের মাধ্যমে সামাজিক পরিবর্তন সম্ভব। ইসলামি হুকুম-আহকাম পালনের অবাধ্যতার ফল পরকালীন কিন্তু রাষ্ট্রীয় আইন অমান্যকারীদের শাস্তি তৎক্ষনাৎ। 

সিদ্ধান্ত: এই হাদিসের ভিত্তিতে ইসলামী সরকারের হিজাব আইনের বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করা যুক্তিযুক্ত নয়। হাদিসটি বর্তমান প্রেক্ষাপটের সাথে সম্পর্কিত না হওয়া ছাড়াও এতে বহু ফিকহি দুর্বলতা বিদ্যমান। সরকারি পর্যায়ে হিজাব বাস্তবায়ন কুরআন-সুন্নাহভিত্তিক দায়িত্ব, যা সমাজের নৈতিক কাঠামো রক্ষার জন্য অপরিহার্য। 

লেখক: হুজ্জাতুল ইসলাম আলী সালেহি মানশ — ফিকহে নেজাম গবেষণা ইনস্টিটিউট
 

হাদিসের উৎস: মান লা ইয়াহদুরহুল ফাকিহ(শাইখ সাদুক), খণ্ড- ৩, পৃষ্ঠা- ৪৬৯।

Tags

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha