বুধবার ৯ এপ্রিল ২০২৫ - ১৪:২৭
ঐতিহাসিক সংগ্রামের আলোকে বর্তমান প্রতিরোধের অপরিহার্যতা  

বর্তমান সময়ে মুসলিম সমাজ এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। সরকার কর্তৃক প্রণীত তথাকথিত "কালা আইন" সমাজের স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের মৌলিক অধিকারকে হরণ করার চেষ্টা চালাচ্ছে।

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী,

ভূমিকা  

বর্তমান সময়ে মুসলিম সমাজ এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। সরকার কর্তৃক প্রণীত তথাকথিত "কালা আইন" সমাজের স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের মৌলিক অধিকারকে হরণ করার চেষ্টা চালাচ্ছে। এ অবস্থায় কেবল ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সীমাবদ্ধ না থেকে সক্রিয় প্রতিরোধ গড়ে তোলার সময় এসেছে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ হওয়া এবং ন্যায়ের পথে অটল থাকাই হলো মুক্তির একমাত্র পন্থা।  

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: স্বাধীনতার জন্য রক্তঝরা সংগ্রাম  

বৃটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনে মুসলিম নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ মানুষের অবদান অবিস্মরণীয়। আকাবীর ও সালাফদের নেতৃত্বে কুইন্টাল পরিমাণ রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছিল এই ভূ-খণ্ডের স্বাধীনতা। তাঁরা পরিবার, সম্পদ, এমনকি প্রাণ বিসর্জন দিয়ে প্রমাণ করেছিলেন যে স্বাধীনতা কখনোই সহজলভ্য নয়। মীর জাফরদের চেয়ে মীর কাসিম, টিপু সুলতান, এবং আশরাফ আলী থানভীর মতো ব্যক্তিত্বরা ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন তাদের সাহসিকতা ও ত্যাগের জন্য।  

বর্তমান শাসনব্যবস্থা: নতুন রূপে পুরনো জুলুম  

আজকের শাসকগোষ্ঠীও সেই ঔপনিবেশিক মানসিকতারই ধারক। "কালা আইন" এর মাধ্যমে তারা মুসলিম সমাজকে লক্ষ্যবস্তু করে চলেছে—যার উদ্দেশ্য হলো সংবিধান প্রদত্ত অধিকার খর্ব করা এবং সংখ্যালঘুদের রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে দুর্বল করা। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন, জমি অধিগ্রহণ, এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা হ্রাসের মতো পদক্ষেপগুলো এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।  

ইসলামী দর্শন ও ন্যায়ের আদর্শ  

ইসলাম শান্তি ও ন্যায়ের ধর্ম। কুরআনে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, "তোমাদের মধ্যে এমন একটি গোষ্ঠী থাকা উচিত যারা সৎকাজের আদেশ দেয় ও অন্যায় কাজে নিষেধ করে" (সুরা আল-ইমরান, ৩:১০৪)। জালেম শাসকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোকে ইসলাম ফরজ হিসেবে গণ্য করে। তবে এ সংগ্রামের পদ্ধতি হতে হবে শান্তিপূর্ণ ও সংবিধানসম্মত। নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর মক্কা জীবনের ধৈর্য্যপূর্ণ প্রতিরোধ এবং মদীনায় সনদ প্রতিষ্ঠার উদাহরণ আমাদের পথ দেখায়।  

প্রতিরোধের কৌশল: অহিংস আন্দোলন ও ঐক্য  

১. ধর্না মঞ্চ ও গণআন্দোলন: মাসের পর মাস বিন্দুমাত্র পিছু না হটে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করতে হবে। ২০২০-এর কৃষক আন্দোলন বা গান্ধীর ডান্ডি মার্চ এর সাফল্য এর প্রমাণ।  

২. আইনি লড়াই: সংবিধানের সুযোগ ব্যবহার করে আদালতে চ্যালেঞ্জ জানানো।  

৩. সামাজিক সচেতনতা: শিক্ষা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ও মিডিয়ার মাধ্যমে জনমত গঠন।  

৪. আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততা: মানবাধিকার সংস্থার মাধ্যমে বিশ্বসমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ।  

ইতিহাসের শিক্ষা: জুলুমের অস্থায়িত্ব  

ইবনে খালদুন তাঁর 'মুকাদ্দিমা'তে লিখেছেন, "জুলুমের ভিত্তিতে গড়া রাজ্য ধ্বংস অবধারিত।" অতীতের ফেরাউন, নমরুদ, বা বৃটিশ সাম্রাজ্য—সবাই সময়ের গর্ভে বিলীন হয়েছে। বর্তমান শাসকদের ভাবা উচিত, আজকের জৌলুশও একদিন ধুলোয় মিশে যাবে।  

উপসংহার: অগ্রসর হওয়ার ডাক  

জীবন একটি নিরবধি যাত্রা, যেখানে থামার অর্থই হলো সময়ের স্রোতে পিছিয়ে পড়া। প্রতিটি মুহূর্তে আমাদের সামনে দুটি পথ খোলা—একটি সুবিধাজনক স্থবিরতার, অন্যটি পরিবর্তন ও বিকাশের। অগ্রসর হওয়ার অর্থ কেবল লক্ষ্যে পৌঁছানো নয়, বরং পথের প্রতিটি বাঁক, প্রতিবন্ধকতা এবং অভিজ্ঞতাকে আত্মস্থ করে নিজেকে পুনরাবিষ্কার করা।  

প্রাকৃতিক নিয়মই হলো—যা গতিশীল, তা বিকশিত হয়। ব্যক্তিগত হোক বা সমষ্টিগত, অগ্রযাত্রা ছাড়া প্রগতি সম্ভব নয়। ভয়, অনিশ্চয়তা বা ব্যর্থতা কখনোই চূড়ান্ত পরিণতি নয়; এগুলো কেবল আমাদের দক্ষতা, ধৈর্য এবং দৃষ্টিভঙ্গিকে পরিমার্জিত করে। ইতিহাসের মহান ব্যক্তিরা শুধু স্বপ্ন দেখেননি, তারা সেই স্বপ্নের পিছনে অদম্য সাহসে পা ফেলেছেন।  

আজকের বিশ্বে পরিবর্তনের গতি অপ্রতিরোধ্য। প্রযুক্তি, সমাজ, বা ব্যক্তিজীবন—সবক্ষেত্রেই চলমান থাকাটা অপরিহার্য। তাই, নিজের সীমাবদ্ধতাকে চ্যালেঞ্জ জানান, নতুন দক্ষতা শিখুন, অজানাকে আলিঙ্গন করুন। মনে রাখবেন, একটি মোমবাতিই অন্ধকারে আলোর সূচনা করতে পারে। আপনার অগ্রযাত্রা শুধু আপনার নয়, এটি সমাজের প্রেরণা, আগামী দিনের ভিত্তি।  

"যাত্রার সৌন্দর্য গন্তব্যে নয়, গন্তব্যের দিকে এগোনোর প্রতিটি পদক্ষেপে।" আজই সিদ্ধান্ত নিন—ভয়কে জয় করুন, সম্ভাবনাকে গ্রহণ করুন, এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টায় গড়ে তুলুন একটি গতিশীল, ন্যায্য ও আশাবাদী পৃথিবী। অগ্রসর হোন... কারণ সময় কখনোই প্রতীক্ষা করে না!

রিপোর্ট: হাসান রেজা 

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha