বৃহস্পতিবার ১০ এপ্রিল ২০২৫ - ১৯:৪৭
ঐতিহাসিক দায়িত্ব ও বর্তমান সংগ্রাম: মুসলিম সমাজের কর্তব্য ও চ্যালেঞ্জ  

ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে লাখো মুসলিমের রক্তঝরা সংগ্রাম, আত্মত্যাগ, এবং স্বাধীনতার স্বপ্ন আজও ইতিহাসের পাতায় জ্বলজ্বলে।

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, 

ভূমিকা  
ভারতবর্ষের ইতিহাসে মুসলিম সমাজের ভূমিকা স্বাধীনতা, ন্যায়, ও নৈতিকতার সংগ্রামের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে লাখো মুসলিমের রক্তঝরা সংগ্রাম, আত্মত্যাগ, এবং স্বাধীনতার স্বপ্ন আজও ইতিহাসের পাতায় জ্বলজ্বলে। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় বর্তমান প্রজন্মের সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ এসেছে-একটি দমনমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা, যা ন্যায়বিচার ও ধর্মীয় স্বাধীনতার মৌলিক অধিকারকে ক্ষুণ্ণ করছে। এই প্রেক্ষাপটে মুসলিম সমাজের ঐতিহাসিক দায়িত্ব পুনর্বিবেচনার সময় এসেছে: কীভাবে পূর্বপুরুষদের পথ অনুসরণ করে বর্তমান সংকট মোকাবেলা করা যায়?

১. ঐতিহ্য ও ত্যাগের উত্তরাধিকার  
ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামে মুসলিম নেতা ও সাধকদের অবদান অপরিসীম। মহিউদ্দিন আউলিয়া, টিপু সুলতান, মৌলানা আজাদ, আশফাকউল্লা খান, বা বেগম হজরত মহলের মতো ব্যক্তিত্বরা শুধু অস্ত্রধারী যোদ্ধাই ছিলেন না, তারা ছিলেন আদর্শের ধারক। তারা ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে "তাসবিহ" (প্রার্থনা) এবং "তলোয়ার" (প্রতিরোধ)-এর সমন্বয় ঘটিয়েছিলেন। তাদের সংগ্রামের মূলমন্ত্র ছিল: "মরলে শহিদ, বাঁচলে গাজি"। এই বাণী শুধু যুদ্ধের প্রেরণা নয়, বরং ন্যায়ের জন্য জীবন উৎসর্গের দর্শন।  

আজকের মুসলিম সমাজের দায়িত্ব হলো এই উত্তরাধিকারের মর্ম বুঝা। সালাফ ও আকাবীর (পূর্বসূরী পণ্ডিত ও নেতারা) শুধু ধর্মীয় জ্ঞানই ছড়াননি, সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠায়ও অগ্রণী ছিলেন। তাদের জীবনচর্চা প্রমাণ করে, ঈমানদারি ও সামাজিক দায়বদ্ধতা একই সিক্কার দুটি পিঠ।  

২. বর্তমান প্রেক্ষাপট: কালা আইন ও রাষ্ট্রীয় দমন  
বর্তমান সময়ে ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে মুসলিমরা নতুন ধরনের সংকটে পড়েছে। "কালা আইন" বা দমনমূলক আইনের নামে নাগরিক অধিকার খর্ব করা হচ্ছে। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (CAA), ইউনিফর্ম সিভিল কোডের প্রস্তাব, বা ধর্মীয় স্বাধীনতা হ্রাস-এসব আইন মুসলিম সমাজকে টার্গেট করে তাদের সংবিধানপ্রদত্ত অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে। রাষ্ট্রযন্ত্র যখন ন্যায়বিচারের বদলে সংখ্যালঘুদের ওপর জুলুম চালায়, তখন ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত হয়: "অন্যায়ের সাম্রাজ্য কখনো টিকে না"।  

জালেম শাসকদের অহংকার ("ক্ষমতার গর্ব") ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে ঢাকা পড়েছে। ফেরাউন, নমরুদ, বা ব্রিটিশ সাম্রাজ্য—সকলেই ভেবেছিল তাদের জুলুম চিরস্থায়ী হবে। কিন্তু সময় তাদের ধূলিসাৎ করেছে। আজকের শাসকগোষ্ঠীও সেই পথেই হাঁটছে।  

৩. সংগ্রামের পথ: আধ্যাত্মিকতা ও রাজনৈতিক সচেতনতার সমন্বয়  

প্রবন্ধের মূল বক্তব্যে একটি শক্তিশালী দ্বৈতবাদ উপস্থাপিত হয়েছে: এক হাতে তাসবিহ (ধ্যান-প্রার্থনা), অপর হাতে তলোয়ার (প্রতিরোধ)। এখানে "তলোয়ার" বলতে সহিংসতা নয়, বরং ন্যায়ের জন্য সক্রিয়তা বোঝানো হয়েছে। এই সমন্বয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ:  
- আধ্যাত্মিক শক্তি: ইসলাম সর্বদা ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানোর শিক্ষা দেয়। কুরআনে বলা হয়েছে, "তোমাদের মধ্যে একটি দল এমন হওয়া উচিত যারা সৎকাজের প্রতি আহ্বান করে এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করে" (সুরা আল-ইমরান, ১০৪)।  
- রাজনৈতিক সচেতনতা: ধর্মীয় চেতনা শুধু ব্যক্তিগত ইবাদতে সীমিত থাকলে চলবে না। বর্তমান অত্যাচারী আইনের বিরুদ্ধে সংগঠিত আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। ধর্না (অনশন), শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ, আইনি লড়াই, এবং জনমত গঠন—সকল পথই গ্রহণযোগ্য।  

৪. ঐতিহাসিক শিক্ষা: ত্যাগ ও সহনশীলতা
  
ইতিহাসের পাতায় মুসলিম সমাজের সবচেয়ে বড় শিক্ষা হলো-ত্যাগ ছাড়া স্বাধীনতা আসে না। ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামে লক্ষ পরিবার সন্তান-সন্ততি হারিয়েছে, স্ত্রীরা বিধবা হয়েছেন, মায়েরা অশ্রু বিসর্জন দিয়েছেন। আজকের প্রজন্মকেও প্রয়োজনে সেই পথে হাঁটতে হবে। তবে আধুনিক যুগে "যুদ্ধ" বলতে শারীরিক সংঘর্ষ নয়, বরং আইনি লড়াই, শিক্ষা, অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা, এবং রাজনৈতিক ঐক্যকে প্রাধান্য দিতে হবে।  

৫. ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা  

১. শান্তিপূর্ণ আন্দোলন: গান্ধীর অহিংসা বা মালালা ইউসুফজাইয়ের শিক্ষার আলোকে সামাজিক মাধ্যম, শিল্প-সাহিত্য, এবং গণআদালতকে কাজে লাগানো।  
২. যুবশক্তির সংগঠন: তরুণদের আইনি জ্ঞান, প্রযুক্তিগত দক্ষতা, এবং ঐতিহাসিক সচেতনতা দিয়ে সজ্জিত করা।  
৩. আন্তঃধর্মীয় সংলাপ: হিন্দু, খ্রিস্টান, শিখ, ও অন্যান্য সম্প

রিপোর্ট: হাসান রেজা 

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha