হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, বর্তমান ভারতের চিত্র এক গভীর সংকটের মুখোমুখি। সর্বত্র ঘনিয়ে আসছে হিংসা ও বিদ্বেষের কালো মেঘ। সাম্প্রদায়িক বিভেদ, ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা ও রাজনৈতিক প্ররোচনার কারণে সমাজে এমন এক আতঙ্কজনক অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে মানুষ মানুষকে অবিশ্বাস করছে, সহানুভূতি হারিয়ে যাচ্ছে, আর মনুষ্যত্ব প্রতিনিয়ত অপমানিত হচ্ছে।
হিংসা ও বিদ্বেষের বর্তমান বাস্তবতা
সমাজে আজ এক সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে অন্য সম্প্রদায়কে ঘৃণা করতে শেখানো হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়া, রাজনীতি ও কিছু উগ্র সংগঠনের মাধ্যমে এই বিভাজন আরও গভীর হচ্ছে। যেখানে শিক্ষার মাধ্যমে আলোর পথে এগোনোর কথা ছিল, সেখানে এখন অশিক্ষা ও অন্ধবিশ্বাসের অন্ধকারে সমাজ নিমজ্জিত। মন্দির-মসজিদ, গোরু-শূকর, পোশাক-খাদ্য—সবকিছু এখন হিংসার ইন্ধন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শিক্ষিত মানুষের নীরবতা: একটি অশনি সংকেত
সবচেয়ে ভয়াবহ দিক হলো শিক্ষিত ও বুদ্ধিজীবী সমাজের নির্লিপ্ততা। তাঁরা কেবল পরিস্থিতি দেখে উদ্বিগ্ন হলেও, কোনও কার্যকর প্রতিবাদ বা সচেতনতা সৃষ্টি করছেন না। সমাজে নেতৃত্ব চলে যাচ্ছে এমন কিছু লোকের হাতে, যাদের মধ্যে নেই মূল্যবোধ, সহানুভূতি বা সুদূরদৃষ্টি। ফলত, সমাজ ক্রমাগত পশ্চাৎমুখী হচ্ছে এবং গণতন্ত্র তার সৌন্দর্য হারাচ্ছে।
আমাদের করণীয়: একটি বিবেকনির্ভর জাগরণ
এই অন্ধকার সময়ে আমাদের দায়িত্ব অসীম। নীচে কিছু করণীয় তুলে ধরা হলো
১. সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ: সমাজের মানুষের মধ্যে মানবতা, সহনশীলতা ও যৌক্তিক চিন্তার বীজ বপন করতে হবে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষ যেন একে অপরকে শ্রদ্ধা করে, এই মূল্যবোধ গড়ে তুলতে হবে।
২. শিক্ষাকে মূল্যনির্ধারক বানানো: শুধু ডিগ্রিধারী নয়, নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত নাগরিক গড়ে তুলতে হবে। বিদ্যালয়, কলেজ ও পরিবারকে এই কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে হবে।
৩. বুদ্ধিজীবীদের সক্রিয়তা: পাণ্ডিত্য আর জ্ঞান যদি সমাজ পরিবর্তনের কাজে না লাগে, তবে তা মূল্যহীন। শিক্ষিত শ্রেণিকে সমাজে সক্রিয় হতে হবে, নৈতিক সাহস নিয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
৪. বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ ও গণমাধ্যমের ভূমিকা: আজকের মিডিয়া অনেক সময় বিভাজনের হাতিয়ার হয়ে দাঁড়াচ্ছে। প্রগতিশীল ও নিরপেক্ষ গণমাধ্যমের প্রয়োজন, যারা সত্য প্রকাশ করবে এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের বার্তা দেবে।
৫. একতা ও সমতার বার্তা ছড়ানো: স্থানীয় পর্যায়ে কর্মশালা, আলোচনা ও সম্প্রীতির উৎসবের মাধ্যমে ভ্রাতৃত্বের সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনতে হবে।
উপসংহার
ভারতের ইতিহাস সহনশীলতা, বৈচিত্র্য ও বহুত্বের। এই ঐতিহ্য আজ চ্যালেঞ্জের মুখে। এই অন্ধকার সময়ে আমাদের প্রত্যেককেই হতে হবে আলোর বাহক। কেবল বক্তৃতা নয়, আমাদের প্রতিটি কার্যকলাপেই প্রতিফলিত হতে হবে মানবতা ও সত্যের প্রতি অঙ্গীকার। একমাত্র সক্রিয় নাগরিক সচেতনতা ও নৈতিক নেতৃত্বই পারে ভারতকে এই হিংসার ছায়া থেকে মুক্ত করে এক সহনশীল ও প্রগতিশীল ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিতে।
আপনার কমেন্ট