হাওজা নিউজ এজেন্সি’ র রিপোর্ট অনুযায়ী, সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বক্তারা গত ১০২ বছরের উত্থান-পতনের কথা স্মরণ করেন। কবি নাদিম সারসভী ও আলী মেহদী যথাক্রমে বাকী ও হযরত ফাতিমা যাহরা (সা.) সম্পর্কে কবিতা পাঠ করেন। সম্মেলনের সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করেন হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন সৈয়দ মোজাফফর মাদানী।
আশিক হোসেইন মীর কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে প্রোগ্রামের সূচনা করেন। এরপর জন্নাতুল বাকী সম্পর্কে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা ও আয়াতুল্লাহ আল-উজমা শেখ সাফী গোলপায়েগানী (রহ.) এর বক্তব্যের উপর ভিত্তি করে একটি ভিডিও ক্লিপ প্রদর্শন করা হয়।
সম্মেলনের প্রথম বক্তা ছিলেন “তাহরীকে তামীরে বাকী” এর পৃষ্ঠপোষক হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন সৈয়দ মাহবুব মেহদী আবেদী। তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভিডিও বার্তায় সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বাকী এক শতাব্দী ধরে আমাদের উপর সেই ঋণ যা দুর্ভাগ্যবশত ভুলে যাওয়া হয়েছে, অথবা যা আহলে বাইত (আ.) এর শত্রুদের দ্বারা মদিনার মাটিতে চাপা দিয়ে দেওয়া হয়েছে। একই সাথে দ্বিতীয় অত্যাচার হলো এই দিনটি যথাযথভাবে পালন করা হয় না।
তিনি বলেন, বাকী শুধু জমির একটি টুকরো নয়, বরং ন্যায়বিচার ও মানবতার নমুনা এবং ইতিহাসের রক্ষক। বাকীর আর্তনাদ কোনো গোত্র বা গোষ্ঠীর ঊর্ধ্বে একটি সম্পূর্ণ ঈমানী, মানবিক ও নৈতিক দায়িত্ব। কারণ আমরা এমন সমাধিগুলোর সম্মান নিয়ে কথা বলছি যা মাজলুমিয়াতের প্রতীক, যা ধ্বংস ও ভাঙনের পরও জাগ্রত হৃদয়গুলোর সাথে কথা বলে এবং তাদের বিবেককে নাড়া দেয়। যেহেতু আহলে বাইত (আ.) এর পবিত্র সমাধিগুলো ও তাদের হরমের সাথে এই জুলুম আমাদের সময়ে ঘটেছে, তাই আমরা সবাই এর বিরুদ্ধে দায়িত্বশীল এবং আগামীকাল আমাদেরকে আল্লাহর দরবারে জবাবদিহি করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ইবনে তাইমিয়ার আগে সকল আহলে সুন্নাত আলিমরা ইমামে মা‘সুমীন (আ.) এর বিশেষ সম্মান করতেন এবং এমনকি তারা এই বিষয়ে অনেক বইও লিখেছেন। ইবনে তাইমিয়া ও পরবর্তীতে আবদুল ওয়াহাব মুসলমানদের মধ্যে ফিতনা ছড়ায় এবং মা‘সুমীন (আ.) এর অবমাননার নতুন ধর্ম তৈরি করে, যা পরবর্তীতে আল সৌদরা আরও বাড়িয়ে দেয়।
হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন ড. সৈয়দ হানান রেজভী তার বক্তব্যে বলেন, সর্বদা জুলুম সত্যের মুখোশ পরিধান করে তার নিকৃষ্ট উদ্দেশ্য হাসিল করার চেষ্টা করেছে। আজ গাজা, ইয়েমেন বা লেবাননের দিকে তাকান, অথবা বাকীর দিকে—সর্বত্র মুসলমানদেরকে শিরক থেকে বাঁচানোর নামে ইসলামের চেহারা বদলে দেওয়া হয়েছে।
হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন মোহসেন দাদসরশত তেহরানী তার বক্তৃতায় বলেন, কুরআনে “মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ ওয়াল্লাযীনা মা‘আহু আশিদ্দা‘উ আলাল কুফফারি রুহামা‘উ বাইনাহুম” এর মতো আয়াতগুলোতে “মা‘ইয়াত” বা সংগের কথা বলা হয়েছে, যা শুধুমাত্র সেই মুমিনদের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে যারা সর্বাবস্থায় রাসুল (সা.) এর সাথে ছিলেন, চাই তা কষ্টই হোক বা সুখ। তাই তাদের বিশেষ সম্মান রয়েছে। এখন কিছু অজ্ঞ ও নামধারী মুসলমান যদি এই সম্মান নষ্ট করে এবং দুনিয়ার সামনে ইসলামের ভুল চিত্র উপস্থাপন করে, তবে নিশ্চয়ই তা আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.) এর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। বর্তমানে আল সৌদরা শুধু ইসলামেরই শত্রু নয়, বরং মুসলমান ও ইসলামী ঐতিহ্যেরও শত্রু। কারণ তারা প্রথম কিবলার হিফাজতের বদলে ইহুদিদকে সাহায্য করছে।
সম্মেলনের শেষ বক্তা ছিলেন হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন মোহাম্মদ তাকী মেহদাভী। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, কুরআনে বলা হয়েছে, ”ওয়া মান ইউ‘য়াজ্জিম শা‘আইরাল্লাহি ফাইন্নাহা মিন তাক্বওয়াল কুলুব”। সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের তাকওয়ার নিজস্ব স্থান রয়েছে, তবে নিঃসন্দেহে সর্বোত্তম তাকওয়া হলো নিয়্যত ও হৃদয়ের তাকওয়া, যা আল্লাহর নিদর্শনগুলোর সম্মানের মধ্যে স্থান পেয়েছে। একইভাবে আল্লাহর বাণী: “ইন্নাস সাফা ওয়াল মারওয়াতা মিন শা‘আইরিল্লাহ"—এখানে সাফা ও মারওয়া পাহাড়কে আল্লাহর নিদর্শন হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। তাহলে সেই মহান ব্যক্তিত্বরা, যাদের সম্মান আল্লাহ নিজে দিয়েছেন এবং যাদের জন্য এই সৃষ্টিজগৎ তৈরি করা হয়েছে, তাদের সম্মানের মর্যাদা কতটুকু হবে!?
উল্লেখ্য, এই সম্মেলন তাহরীর পোস্টের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ভারতের কিছু সংগঠন সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যে আনজুমানে আলী ইয়াসীন (আ.) ও মারকাযে আফকারে ইসলামীর নাম উল্লেখযোগ্য।
আপনার কমেন্ট