হাওজা নিউজ এজেন্সি: ঘটনাটি এমন যে, একদিন জনৈক খৃষ্টান পাদ্রী একদল খৃষ্টানকে সাথে নিয়ে মসজিদে নববীতে উপস্থিত হলেন। তারা সোনা, মুক্তা এবং মূল্যবান জিনিসপত্রও সাথে করে নিয়ে আসেন।
ওই খৃষ্টান পাদ্রী সেখানে উপস্থিত লোকজনের দিকে ফিরে (হযরত আবু বকরও সেই দলের মধ্যে ছিলেন) জিজ্ঞাসা করলেন, এখানে নবীর খলিফা ও তাঁর বিশ্বস্ত কে আছেন?
উপস্থিত জনগণ হযরত আবু বকরের দিকে ইশারা করল।
পাদ্রী হযরত আবু বকরের দিকে ফিরে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার নাম কি?
আবু বকর বললেন, আমার নাম আতিক।
পাদ্রী জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার অন্য নাম কী?
আবু বকর বললেন, আমার অন্য নাম সিদ্দীক।
পাদ্রী জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার কি অন্য আর কোন নাম আছে?
আবু বকর বললেন, না, কখনও না।
অতঃপর খৃষ্টান পাদ্রী বললেন, “আমার মনে হয় আমি যাকে খুঁজছি তিনি অন্য কেউ।”
হযরত আবু বকর বললেন, তুমি কাকে খুঁজছো?
খৃষ্টান পাদ্রী উত্তর দিলেন, আমি রোম থেকে একদল খ্রিস্টানদের সাথে নিয়ে এসেছি এবং আমরা আমাদের সাথে কিছু রত্ন ও মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে এসেছি। আমাদের লক্ষ্য হলো মুসলিম খলিফাকে কয়েকটি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা। তিনি যদি সেসব প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দিতে পারেন তাহলে আমরা এই সমস্ত মূল্যবান উপহার তাকে দিয়ে দেবো। আর তিনি নিজের হাতে মুসলমানদের মধ্যে তা বিতরণ করে দিবেন।
আর তিনি যদি আমাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারেন তাহলে আমরা মদীনা ত্যাগ করে আমাদের দেশে ফিরে যাব।
প্রথম খলিফা আবু বকর বললেন, ‘তোমার প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করো!’
পাদ্রী বললেন, ”আমাদের সুরক্ষার জন্য আপনাকে একটি প্রতিশ্রুতিপত্র দিতে হবে যাতে আমি আমার প্রশ্নগুলো স্বাধীনভাবে জিজ্ঞাসা করতে পারি।”
আবু বকর বললেন, তুমি নিরাপদ। তাই তোমার প্রশ্নগুলো জিজ্ঞাসা করো।
খৃষ্টান পাদ্রী তার তিনটি প্রশ্ন এভাবে জিজ্ঞাসা করলেন,
১. খোদার কী নেই?
২. এমন কি আছে যা খোদার কাছে নেই?
৩. এমন কী আছে যা খোদা জানেন না?
জনাব আবু বকর দীর্ঘক্ষণ থেমে থাকার পর বললেন, “আমাকে অবশ্যই উমরের কাছে সাহায্য চাইতে হবে।”
তাই তিনি হযরত ওমরকে ডেকে পাঠালেন এবং পাদ্রী তাকেও তার প্রশ্নগুলো জিজ্ঞাসা করলেন।
দ্বিতীয় হযরত ওমরও উত্তর দিতে পারলেন না। তাই তিনি এবার হযরত উসমানকে ডেকে পাঠালেন এবং হযরত উসমানও ঐ প্রশ্নগুলো শুনে অবাক হয়ে গেলেন।
একপর্যায়ে জনগণ বলে উঠল, আপনি কী ধরণের প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করছেন? খোদার তো সবকিছু আছে এবং তিনি সবকিছু জানেন!
খৃষ্টান পন্ডিত হতাশ হয়ে পড়লেন এবং রোমে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন।
এমতাবস্থায় জনাব আবু বকর বললেন, হে আল্লাহর শত্রু! আমি যদি তোমাকে সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি না দিতাম, তাহলে তোমার রক্তে এই জমিনকে রঞ্জিত করতাম।
এ ঘটনার প্রত্যক্ষকারী হযরত সালমান ফারসি দ্রুত ইমাম আলী (আ.)-এর কাছে পৌঁছালেন এবং ঘটনাটির বর্ণনা করলেন। হযরত সালমান ফার্সি ইমামকে দ্রুত সেখানে আসতে বললেন।
ইমাম আলী (আ.) তাঁর পুত্র ইমাম হাসান (আ.) এবং ইমাম হুসাইন (আ.)’কে সাথে নিয়ে ঐ জমায়েতের মধ্যে উপস্থিত হলেন এবং উপস্থিত জনগণ সম্মান প্রদর্শনে তাকবির ধ্বনি দিয়ে তাঁদেরকে গ্রহণ করলেন।
হযরত আবু বকর খৃষ্টান পাদ্রীকে সম্বোধন করে বললেন, “তুমি যার অনুসন্ধানে এসেছো- তিনি এসেছেন, তাই তুমি এবার তোমার সকল প্রশ্ন আলী (আ.) কে জিজ্ঞাসা করো!”
খৃষ্টান পাদ্রী ইমাম আলী (আ.)-এর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার নাম কী?
আমিরুল মুমিনিন বললেন, “ইহুদিদের মধ্যে আমার নাম ‘এলিয়া’, খ্রিস্টানদের মধ্যে ‘ইলিয়া’, আমার পিতা ‘আলী’ নামে ডাকতেন আর আমার মাতা ‘হায়দার’ নামে খেতাব করেন।
তখন খৃষ্টান পাদ্রী বললেন, নবীর সাথে তোমার সম্পর্ক কী?
আমিরুল মু'মিনিন বললেন, ‘তিনি আমার ভাই, চাচাতো ভাই, আর আমি তার জামাতা।’
খৃষ্টান পন্ডিত বললেন, “আমি মরিয়মের পুত্র ঈসার শপথ করে বলছি, আপনিই ছিলেন আমার অভিপ্রেত ও হারিয়ে যাওয়া ব্যক্তি, যাকে আমি খুঁজছিলাম।”
তাহলে আপনি এবার আমার প্রশ্নগুলোর উত্তর দেন। সে আবার তার প্রশ্নগুলো উত্থাপন করলেন আর ইমাম আলী (আ.) এভাবে উত্তর দিলেন:
১. খোদার যা নেই তা হলো স্ত্রী এবং সন্তান!
২. আর যা খোদার কাছে নেই তা হলো অন্যায় ও জুলুম!
৩. আর খোদা যা জানেন না তা হলো তিনি তাঁর নিজের সমকক্ষ বা কোনো অংশীদারকে চিনেন না।
এই উত্তরগুলো শুনে খৃষ্টান সম্প্রদায়ের ঐ পাদ্রী ইমাম আলী (আ.)-কে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলেন এবং তাঁর পবিত্র দুই চোখের মাঝখানে চুম্বন করে বললেন, “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসূল। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি তাঁর উত্তরসূরী, খলিফা, এই জাতির আমানতদার এবং জ্ঞানের উৎস।”
প্রকৃতপক্ষে তোমার নাম তাওরাত শরীফে এলিয়া, ইঞ্জিল শরীফে ইলিয়া, কোরআন শরীফে আলী এবং পূর্ববর্তী কিতাবসমূহে হায়দার।
নিঃসন্দেহে তুমিই শেষ নবীর প্রকৃত উত্তরসূরী।
তারপর তিনি সকল উপহার সামগ্রী আমিরুল মুমিনীন (আ.)-এর কাছে অর্পণ করলেন এবং ইমাম ঐ ঘটনাস্থলেই মুসলমানদের মধ্যে তা বণ্টন করে দিলেন।
সূত্র আল-গাদীর, ৭ম খন্ড, ১৭৮ নম্বর পৃষ্ঠা।
অনুবাদ: হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন জনাব আলী নওয়াজ খান
আপনার কমেন্ট