রবিবার ১৩ এপ্রিল ২০২৫ - ১৬:৩১
ধর্মবিরোধীদের সাথে কীভাবে আচরণ করবেন?

কর্মক্ষেত্র বা অন্য কোনো পরিবেশে অসম্মান ও গালমন্দের সম্মুখীন হলে প্রত্যক্ষভাবে প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে সহনশীলতা ও সচেতনতার কৌশল অবলম্বন করুন। শান্তি ও দয়ার্দতা বজায় রেখে বিতর্ক ও বিবাদের পরিবর্তে গঠনমূলক আলোচনার সুযোগ তৈরি করুন।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: মনে রাখতে হবে, নাস্তিকতা ও ঘৃণার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য দয়া ও জ্ঞানার্জনই সর্বোত্তম হাতিয়ার।

প্রশ্ন: আমার কর্মস্থল ও আশেপাশে অনেক লোক আছে যাদের কোনো কিছুতেই বিশ্বাস নেই, বরং তারা আমাদের ধর্ম-বিশ্বাস ও পবিত্র বিষয়গুলোর প্রতি গালমন্দ করে, যা অত্যন্ত কষ্টদায়ক। এমতাবস্থায় আমাদের কী প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত? 

উত্তর: প্রথমে আমাদের বুঝতে হবে, অন্যদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব কী এবং কতটুকু! অন্যদের জন্য চিন্তা করা অত্যন্ত প্রশংসনীয়, যেমনটি কুরআনে রাসূল (সা.)-কে লক্ষ্য করে বলা হয়েছে: 
فَلَعَلَّکَ بَاخِعٌ نَّفْسَکَ عَلیَ ءَاثَارِهِمْ إِن لَّمْ یُؤْمِنُواْ بِهَاذَا الْحَدِیثِ أَسَفًا"
(সূরা কাহফ, আয়াত ৬)

“যদি তারা এই বাণীতে বিশ্বাস না করে, তবে আপনি কি তাদের জন্য নিজেকে দুঃখে ধ্বংস করে ফেলবেন?”

তবে যদি আলোচনার কোনো সুযোগ না থাকে, অর্থাৎ তাদের শোনার মতো কোনো ইচ্ছা নেই, তাহলে তাদের সাথে বিতর্কে জড়াবেন না। আল্লাহ তাআলা এ প্রসঙ্গে বলেন: 
وَ عِبَادُ الرَّحْمَٰنِ الَّذِینَ یَمْشُونَ عَلَی الْأَرْضِ هَوْنًا وَإِذَا خَاطَبَهُمُ الْجَاهِلُونَ قَالُوا سَلَامًا
(সূরা ফুরকান, আয়াত ৬৩) 
“রহমানের প্রকৃত বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং যখন অজ্ঞরা তাদের সাথে অশোভন আচরণ করে, তারা বলে, ‘সালাম (শান্তি হোক)’।”

অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন: 
وَ لَوْ أَنَّنا نَزَّلْنا إِلَیْهِمُ الْمَلائِکَةَ وَ کَلَّمَهُمُ الْمَوْتی‌ وَ حَشَرْنا عَلَیْهِمْ کُلَّ شَیْ‌ءٍ قُبُلاً ما کانُوا لِیُؤْمِنُوا إِلاَّ أَنْ یَشاءَ اللَّهُ وَ لکِنَّ أَکْثَرَهُمْ یَجْهَلُونَ
(সূরা আনআম, আয়াত ১১১)
“যদি আমরা তাদের কাছে ফেরেশতাদের পাঠাতাম, মৃতরা তাদের সাথে কথা বলত বা সমস্ত সৃষ্টিকে তাদের সামনে জমা করতাম, তবুও তারা বিশ্বাস স্থাপন করত না, যদি না আল্লাহ চাইতেন; কিন্তু তাদের অধিকাংশই অজ্ঞ।”

তবে যদি আলোচনার সুযোগ থাকে, তাহলে তাদের আপত্তিগুলো সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করুন— ধর্মীয় বিশেষজ্ঞদের সাথে পরামর্শ করুন। যখন আলোচনা উত্তপ্ত হয়ে যায়, তখন তা এড়িয়ে চলুন। বরং সময় ও পরিস্থিতি বিবেচনা করে, তাদের মনোভাব বুঝে নিন। প্রথমে তাদের ইতিবাচক গুণাবলীর কথা উল্লেখ করুন, যেমন— “আপনার মধ্যে তো অনেক ভালো গুণ আছে, তাহলে এই বিষয়টিতে কি এমনটি করা উচিত ছিল?” অর্থাৎ, পরামর্শের ভঙ্গিতে নম্রভাবে কথা বলুন, যাতে আপনার বক্তব্য প্রভাব ফেলতে না পারে। 

আমাদের সতর্কবাণী ক্যাপসুলের মতো হওয়া উচিত। ক্যাপসুলের ভিতরের ঔষধ তিক্ত, কিন্তু এর আবরণ তা সহজে গ্রহণযোগ্য করে তোলে। তেমনি, কারো প্রতি সতর্কতা দেয়ার সময়— 

১. তা সংক্ষিপ্তভাবে বলুন, যাতে তা গ্রহণযোগ্য হয় ও বিরক্তি সৃষ্টি না করে। 

২. পরামর্শ নরমনীয়, সদয় ও আন্তরিক ভঙ্গিতে দিন, যাতে এর তিক্ততাও মিষ্টি মনে হয়। 

সতর্কতা ও পরামর্শ দেয়ার পর, পূর্বের স্বাভাবিক ও আন্তরিক সম্পর্ক বজায় রাখুন। যেন মনে না হয় যে আপনি কোনো অভিযোগ বা অনুযোগ করেছিলেন। 
 

তথ্যসূত্র:

১. সূরা কাহফ, আয়াত- ৬ 

২. সূরা ফুরকান, আয়াত- ৬৩ 

৩. সূরা আনআম, আয়াত- ১১১ 

উৎস: ধর্মীয় প্রশ্নোত্তর কেন্দ্র (مرکز پرسمان دینی)

Tags

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha