রবিবার ২০ এপ্রিল ২০২৫ - ১৮:৩৪
আয়াতুল্লাহ আব্দুল করিম হায়েরি ইয়াযদির কিছু বৈশিষ্ট্যের সাথে পরিচয়  

আয়াতুল্লাহ আল-উজমা শেখ আব্দুল করিম হায়েরি ইয়াযদি (১২৪৮-১৩১৫ শা.) কর্তৃক কোম ধর্মীয় সেমিনারির প্রতিষ্ঠার ১০০তম বার্ষিকী ইরানের ধর্মীয় শিক্ষাব্যবস্থায় এক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের সূচনা করে।

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, আয়াতুল্লাহ আল-উজমা শেখ আব্দুল করিম হায়েরি ইয়াযদি (১২৪৮-১৩১৫ শা.) কর্তৃক কোম ধর্মীয় সেমিনারির প্রতিষ্ঠার ১০০তম বার্ষিকী ইরানের ধর্মীয় শিক্ষাব্যবস্থায় এক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের সূচনা করে। এটি কোমকে শিয়া বিশ্বের একটি প্রভাবশালী কেন্দ্র হিসেবে পুনরুজ্জীবিত করার পাশাপাশি বিংশ শতাব্দীর রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের ভিত্তি তৈরি করে। এই নোটে আয়াতুল্লাহ হায়েরি ইয়াযদির কোম ধর্মীয় সেমিনারি প্রতিষ্ঠায় কেন্দ্রীয় ভূমিকা, অর্জন ও গত এক শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করা হবে।  

প্রথম পর্ব: আয়াতুল্লাহ হায়েরি ইয়াযদি ও কোম ধর্মীয় সেমিনারির প্রতিষ্ঠা

১. ঐতিহাসিক পটভূমি:

ইসফাহান ধর্মীয় সেমিনারির পতন ও কাজার শাসনামলে ধর্মীয় নেতাদের উপর চাপের পর শিয়া পণ্ডিতদের কেন্দ্র নাজাফে আশরাফে স্থানান্তরিত হয়। চতুর্দশ হিজরি শতকের শুরুতে রেজা শাহের ধর্মবিরোধী নীতির তীব্রতর হওয়ায় ইরানের অভ্যন্তরে একটি স্বাধীন ধর্মীয় শিক্ষাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়। আয়াতুল্লাহ হায়েরি ইয়াযদি, যিনি নাজাফে মির্জা শিরাজি ও আখুন্দ খোরাসানির মতো প্রখ্যাত শিক্ষকদের অধীনে অধ্যয়ন করেছিলেন, ১৩০১ শা. সালে কোমের জনগণের আমন্ত্রণে এই শহরকে ধর্মীয় ও শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে নির্বাচন করেন।  

২. মৌলিক পদক্ষেপ:

সেমিনারির কেন্দ্রীয় কাঠামো গঠন: ফয়জিয়া ও দারুল শিফা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শিক্ষা ও ছাত্রাবাসের ব্যবস্থা করে কোম সেমিনারির ভিত্তি স্থাপন।  
পাঠ্যক্রমের সংস্কার: ফিকহ, উসুল, দর্শন, তাফসির ও হাদিসের সুসংহত ও সমন্বিত পাঠ্যক্রম চালু করে ধর্মীয় শিক্ষার মান উন্নয়ন।  
আর্থিক স্বাধীনতা: সরকারি নির্ভরতা এড়াতে ওয়াকফ ও জনসাধারণের অনুদানের উপর জোর দেওয়া।  

নতুন প্রজন্মের ধর্মীয় নেতৃত্ব গঠন:
 আয়াতুল্লাহ ব্রুজের্দি, ইমাম খোমেনি (রহ.), সাইয়্যেদ মোহাম্মদ হোসেইন তাবাতাবাঈ ও সাইয়্যেদ মোহাম্মদ মোহাক্কেক দামাদের মতো ব্যক্তিত্বদের প্রশিক্ষণ।  

৩. সংস্কারমূলক দৃষ্টিভঙ্গি:

- নাজাফের ঐতিহ্য পদ্ধতির সমন্বয়: নাজাফের প্রথাগত শিক্ষার সাথে আধুনিকতার মিশ্রণ।  
-সামাজিক সমস্যায় সম্পৃক্ততা: ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সমাজসেবা ও রাজনৈতিক বিষয়ে সক্রিয় ভূমিকার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা।  

দ্বিতীয় পর্ব: চ্যালেঞ্জ ও সংগ্রাম 

১. রেজা শাহের নীতির বিরোধিতা:
 
-হিজাব নিষিদ্ধকরণ (১৩১৪ শা.) ও ধর্মীয় পোশাক পরিবর্তনের চেষ্টার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ।  
- ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষা চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান।  

২. ধর্মীয় সেমিনারির পরিচয় রক্ষা:

- ধর্মনিরপেক্ষ বুদ্ধিজীবী প্রবণতার মুখে সেমিনারির একাত্মতা ও জ্ঞানচর্চা জোরদার করা।  

৩. আয়াতুল্লাহ হায়েরির কৌশল:

সতর্ক অবস্থান: গোহরশাদ মসজিদের বিদ্রোহে সমর্থন না দেওয়া (হামলার আশঙ্কায়)।  
নীরব কূটনীতি: সরকারের সাথে সরাসরি সংঘাত এড়িয়ে সেমিনারির স্বাধীনতা রক্ষা।  

উপসংহার:
আয়াতুল্লাহ হায়েরি ইয়াযদির দূরদর্শিতা ও সংগঠনশক্তি কোম সেমিনারিকে শিয়া বিশ্বের প্রাণকেন্দ্রে পরিণত করে। তাঁর প্রতিষ্ঠিত কাঠামো পরবর্তীতে ইসলামি বিপ্লবসহ ইরানের রাজনৈতিক-সামাজিক ইতিহাসকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha