হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, ইরান শুধু পশ্চিম এশিয়ায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ও শক্তিশালী প্রতিরক্ষা শক্তি নয়, বরং বৈশ্বিক ও এশীয় পর্যায়ের শক্তিশালী দেশগুলোর র্যাংকিংয়েও একটি উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে আছে।
ইরান ও আমেরিকার মধ্যে পরোক্ষ আলোচনা শুরুর আগে, ইসরায়েলি কর্মকর্তারা ইরানের বিরুদ্ধে প্রচারণা জারি রেখেছে। শিশু হত্যার কলঙ্কজনক ইতিহাস এবং মানবতার বিরুদ্ধে উন্মুক্ত আগ্রাসনের অতীত নিয়ে থাকা ইসরায়েল এখন ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলিতে হামলার হুমকি দিয়ে উত্তেজনা ছড়াচ্ছে। এ অবস্থায় স্বাভাবিকভাবেই জনসাধারণ ও বিশ্লেষকদের মনে প্রশ্ন উঠছে—ইসরায়েল আদৌ কি ইরানের প্রতিরক্ষা ও পারমাণবিক স্থাপনাগুলিকে ধ্বংস করার সক্ষমতা রাখে? আর যদি তারা এমন কোনো বিপজ্জনক পদক্ষেপ নেয়, তাহলে ইরানের প্রতিক্রিয়া কী হবে?
এই প্রসঙ্গ শুধুই সামরিক শক্তির তুলনামূলক বিশ্লেষণের প্রয়োজন তৈরি করে না, বরং ইরানের কৌশলগত প্রস্তুতি ও সম্ভাব্য পাল্টা পদক্ষেপের গুরুত্বও তুলে ধরে।
ইরান, সীমিত প্রতিরক্ষা বাজেট ও আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও, নিজস্ব ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি, স্থানীয় প্রতিরক্ষা শিল্প ও অনন্য ভৌগলিক অবস্থানের কারণে পশ্চিম এশিয়ায় একটি শক্তিশালী সামরিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। এই প্রতিবেদনে বৈশ্বিক ও এশীয় দেশগুলোর মধ্যে ইরানের সামরিক অবস্থান এবং এর প্রতিরক্ষা ক্ষমতা বিশদভাবে পর্যালোচনা করা হয়েছে।
গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার, যা প্রতি বছর বিশ্বের দেশগুলোর সামরিক শক্তির তুলনা ও র্যাংকিং প্রকাশ করে, তাদের ২০২৩ সালের প্রতিবেদনে ইরানকে পশ্চিম এশিয়ার অন্যতম প্রধান সামরিক শক্তি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এই রিপোর্ট অনুযায়ী, ইরান শুধু ইসরায়েল নয়, বরং সৌদি আরবের তুলনায়ও এগিয়ে। ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানকে এশিয়ার সপ্তম বৃহত্তম সামরিক শক্তি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে রাশিয়া, চীন ও ভারত যথাক্রমে প্রথম তিনটি স্থানে রয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, এই দেশগুলো অস্ত্র উৎপাদন ও কেনাকাটায় শীর্ষে এবং তাদের সামরিক শক্তি মূলত অস্ত্র মজুদের ওপর নির্ভরশীল। যেমন, ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালে সৌদি আরবের প্রতিরক্ষা বাজেট ছিল ৫৬ বিলিয়ন ডলার এবং ভারতের বাজেট ছিল ৬১ বিলিয়ন ডলার।
গত বছর ইসরায়েলি মন্ত্রিসভা ২০২৫ সালের প্রতিরক্ষা বাজেট অনুমোদন করে, যাতে যুদ্ধ ব্যয়ের খরচ মেটাতে কর বৃদ্ধি ও অন্যান্য খাতে কাটছাঁটের ব্যবস্থা রাখা হয়। এই বাজেট মূলত গাজার বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধের খরচ মেটানোর জন্য নির্ধারিত, এমন এক যুদ্ধে যেখানে পরিণতি এখনো অনিশ্চিত এবং যার অবসানের জন্য ইসরায়েলজুড়ে বিক্ষোভ চলছে।
ইসরায়েল বাধ্য হয়ে প্রতিরক্ষা খাতে কয়েক বিলিয়ন শেকেল যোগ করেছে, যাতে গাজা ও লেবাননের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করা যায়, যদিও জনবলের অভাবে দেশটির অর্থনীতি বড়সড় ধাক্কা খেয়েছে। অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোত্রিচ বলেছেন, ২০২৫ সালের বাজেটের মূল লক্ষ্য হচ্ছে দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, সব যুদ্ধফ্রন্টে জয়ী হওয়া এবং ইসরায়েলের অর্থনৈতিক শক্তিকে সুরক্ষিত রাখা।
তিনি আগে ঘোষণা দিয়েছিলেন, যদিও ২০২৫ সালে সামরিক ব্যয় ১০২ বিলিয়ন শেকেল (প্রায় ২৭.৫ বিলিয়ন ডলার) পর্যন্ত পৌঁছাবে, তবুও প্রয়োজন হলে বাজেট আরও বাড়ানো হতে পারে। অন্যদিকে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতা ইয়াইর লাপিদ এই বাজেটের কঠোর সমালোচনা করে বলেছেন, এটি প্রতিটি ইসরায়েলি পরিবারের ওপর বছরে গড়ে ২০ হাজার শেকেল অতিরিক্ত বোঝা চাপাবে। বিরোধী নেতাদের মতে, এই বাজেট প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর কট্টর ডানপন্থী মিত্র, বিশেষ করে "হারিদি" গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা করে, যখন সাধারণ ইসরায়েলিদের অর্থনৈতিক সংকট আরও গভীর করছে।
আপনার কমেন্ট