হাওজা নিউজ এজেন্সি: জনাবা ফাইযা আসলাহীর এই একান্ত সাক্ষাৎকারে শহীদ রায়েসীর জীবনের নানা গুরুত্বপূর্ণ দিক উঠে এসেছে- যা পাঠকদের জন্য তুলে ধরছি:
তালিবে ইলমদের মধ্যে ন্যায়নিষ্ঠা ও জ্ঞানচর্চার প্রেরণা জাগরণে শহীদ রায়েসীর জীবনদর্শন:
“বিচারবিজ্ঞানের মৌলিক গবেষক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের নিবেদিতপ্রাণ সৈনিক শহীদ রায়েসী উলামা সমাজের জন্য নিঃস্বার্থ সেবার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তিনি কেবল হাওজা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর ডিগ্রিধারীই ছিলেন না, বরং তাঁর রচিত মূল্যবান গ্রন্থাবলী গবেষণা ও পাঠদানের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ তাঁর বৈজ্ঞানিক কর্মপদ্ধতি অধ্যয়ন করে জ্ঞানচর্চায় জিহাদী চেতনা পুনরুজ্জীবিত করতে পারে।”
ইলমি নেতৃত্বে তাঁর অনন্য দর্শন:
“বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনকালেও শহীদ রায়েসী বুদ্ধিজীবী ও গবেষক মহলের সাথে সক্রিয় সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন। হাওজায়ে ইলমিয়া ও বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রগুলোর সাথে তাঁর নিবিড় যোগাযোগ প্রমাণ করে, জাতীয় নীতি নির্ধারণে তিনি বুদ্ধিজীবীদের পরামর্শকে কতটা গুরুত্ব দিতেন। জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রের নেতৃত্বের জন্য এই দৃষ্টিভঙ্গি অনুকরণীয় আদর্শ।”
তালিবে ইলমদের নৈতিকতা শিক্ষায় প্রাসঙ্গিক উপাদান:
“অযৌক্তিক সমালোচনার মুখে তাঁর মহানুভবতা বিশেষভাবে শিক্ষণীয়। নিজের রচিত মূল্যবান গ্রন্থ থাকা সত্ত্বেও তিনি কখনো ব্যক্তিগতভাবে আত্মপক্ষ সমর্থন করেননি, বরং তাঁর রচনাই সত্যের সাক্ষ্য বহন করবে - এই ছিল তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস। এটাই প্রকৃত আলেমের চরিত্র - মূর্খতা ও অপবাদের মোকাবেলায় মহানুভব নীরবতা ও সত্যের প্রতি অগাধ আস্থা। তিনি ছিলেন কুরআনে বর্ণিত ‘ইবাদুর রহমান’-এর জীবন্ত প্রতীক: ‘যখন অজ্ঞরা তাদের সাথে বাক্যালাপ করে, তারা বলে সালাম।’ (সূরা ফুরকান: ৬৩)”
শাহাদাতের অমিয় বাণী:
“বিনয়, শিষ্টাচার ও সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের প্রতি বিশেষ মমত্ব ছিল শহীদ রায়েসীর স্বভাবজাত গুণ। প্রশাসনিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক সক্ষমতার শীর্ষে অবস্থান করেও তিনি কোনো প্রকার অহংকার বা অন্যায় সমালোচনায় ভ্রুক্ষেপ না করে সেবার পথে অবিচল ছিলেন। এই আচরণ হাওজায়ে ইলমিয়ার শিক্ষকদের জন্য এক গুরুগম্ভীর বার্তা বহন করে যে, দৃঢ় সংকল্প ও সাধনার মাধ্যমে উত্তম চরিত্র গঠন করে সমাজের জন্য আদর্শ হওয়া সম্ভব।”
শিক্ষাক্ষেত্রে প্রয়োগ:
“তাঁর জীবনাদর্শ নিয়ে তালিবে ইলমদের সাথে আলোচনার সর্বোত্তম বিষয় হবে ইতিহাসের আলিমদের সাথে তাঁর ইলমি ও নৈতিক পদ্ধতির তুলনামূলক বিশ্লেষণ- কীভাবে জ্ঞানার্জন, জনসেবা ও বিনয়কে সমন্বিত করা যায় এবং বর্তমানের চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিতে খাঁটি ইবাদত ও সৃষ্টির সেবার পথে নিষ্ঠার সাথে অগ্রসর হওয়া যায়।”
সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ গুণ:
“তাঁর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ছিল ‘সেবায় একনিষ্ঠতা’- অর্থাৎ নিঃস্বার্থ, বিনয়ী ও অটুট সংকল্পের সাথে সেবা প্রদান। এই গুণ তাঁর পাণ্ডিত্যের সাথে মিলে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য এক পরিপূর্ণ আদর্শ উপস্থাপন করেছে, যা প্রমাণ করে যে প্রকৃত প্রভাব সৃষ্টির পথ হচ্ছে আন্তরিকতা ও নিষ্ঠা, কোনো বিতর্ক বা আত্মপ্রচার নয়।”
আপনার কমেন্ট