বুধবার ২১ মে ২০২৫ - ১৩:১১
বিপ্লবী নেতার আহ্বান—ধর্মের এক সভ্যতাগঠনমূলক ব্যাখ্যার দিকে

ইসলামী বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী, কোম ইসলামি বিদ্যাপীঠের পুনঃপ্রতিষ্ঠার শতবার্ষিকী উপলক্ষে এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তায়, এই প্রতিষ্ঠানের অগ্রগামী ও সভ্যতাগঠনকারী ভূমিকার ওপর গুরুত্বারোপ করে, ইসলামি সামাজিক ব্যবস্থা তৈরির আহ্বান জানান।

হাওযা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, ইসলামী বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী, কোম ইসলামি বিদ্যাপীঠের পুনঃপ্রতিষ্ঠার শতবার্ষিকী উপলক্ষে এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তায়, এই প্রতিষ্ঠানের অগ্রগামী ও সভ্যতাগঠনকারী ভূমিকার ওপর গুরুত্বারোপ করে, ইসলামি সামাজিক ব্যবস্থা তৈরির আহ্বান জানান। তিনি বিশেষভাবে আহ্বান জানান—ধর্মকে রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন না করে, শিক্ষাদান ও দাওয়াতের কার্যক্রমের জন্য একটি সংগঠিত কাঠামো প্রতিষ্ঠার।

বার্তার মূল বিষয়বস্তু:

নেতা তাঁর বার্তায় কোম হাওযার প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করেন এবং ইরাক, সিরিয়া, ফিলিস্তিনসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশে ঔপনিবেশিক শক্তির ভূমিকার ঐতিহাসিক বর্ণনা দেন। তিনি উল্লেখ করেন, অতীতের বিশ্বাসঘাতক চুক্তিগুলো এবং পশ্চিমমুখী কিছু অনুকরণ আজও মুসলিম সমাজের জন্য হুমকি।

হাওযা প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব

নেতা কোম হাওযার প্রতিষ্ঠাতা আল্লামা হায়েরীর মেধা, দূরদৃষ্টি এবং ব্যক্তিত্বের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন, যা আজকের হাওযা পরিচালনায় অনুপ্রেরণা হতে পারে।

কোম হাওযার সফলতা

ইমাম খোমেইনির আবির্ভাব,

আয়াতুল্লাহ বোরুজেরদির নেতৃত্বে গবেষণা ও দাওয়াতে উচ্চতর মান,

ইসলামী বিপ্লব ও শাহের পতনের পথ প্রস্তুত,

ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থার রূপায়ণ—সবই কোম হাওযার অবদান।

"হাওযা এলেমিয়া" শিরোনামের বিশ্লেষণ

আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী হাওযা এলেমিয়াকে ব্যাখ্যা করেছেন—

এটি এমন একটি জ্ঞানকেন্দ্র যা ধর্মীয় দাওয়াতের জন্য নৈতিক ও দক্ষ আলেম তৈরি করে,

চিন্তাগত ও বিশ্বাসগত হুমকি মোকাবেলায় সক্ষম,

ইসলামি চিন্তাধারার ভিত্তিতে রাজনীতি, অর্থনীতি, পরিবার ও সমাজব্যবস্থার কাঠামো তৈরিতে অগ্রণী,

এটি হতে হবে উদ্ভাবন, সভ্যতা নির্মাণ ও ভবিষ্যতচিন্তার কেন্দ্র।

একটি অগ্রগামী ও মডেল হাওযা গঠনে করণীয়

১. বৈজ্ঞানিক দায়িত্ব

ফিকহের আলোকে সমকালীন ও ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জের উত্তর দেওয়া,

ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রেক্ষাপটে প্রশ্নসমূহের জবাব,

ভবিষ্যতের সম্ভাব্য প্রশ্ন নিয়ে আগাম প্রস্তুতি।


শর্ত:

আলেমদের ধর্মীয় জ্ঞানের পরিপূর্ণতা,

আধুনিক মানবজ্ঞান সম্পর্কে পর্যাপ্ত ধারণা।

প্রস্তাবিত পদক্ষেপ:

ইসলামী শাসন ও রাষ্ট্রীয় সম্পর্কের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিক গবেষণা,

অপ্রয়োজনীয় বিষয় এড়িয়ে চলা,

ইসলামি জীবনধারা ও সমাজের দিকনির্দেশনা প্রদান।

২. নৈতিক ও দক্ষ কর্মীবাহিনী গঠন

নেতা নির্দেশ দেন—

আলাদা একটি "মুসলিম দাওয়াত প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান" গঠনের,

প্রচারণার পাশাপাশি ধর্মীয় সন্দেহ ও চ্যালেঞ্জেরও জবাব দেওয়ার উপর জোর দেন।

তিনি বলেন: “এই প্রতিষ্ঠান গঠনকে গুরুত্বসহকারে দেখা উচিত এবং দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।”

এই নির্দেশনার ফলে বিদ্যমান প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি নতুন উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি।

মহান নেতা স্পষ্ট করে বলেন: “আদর্শিকভাবে পরিশীলিত আলেম গঠন করা মানেই সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন আলেম গঠন নয়।"

৩. শত্রুবিরোধী সংগ্রামে নেতৃত্ব

নেতা বলেন, ধর্ম ও জাতির শত্রুদের বিরুদ্ধে সব ময়দানে আলেমদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।

তিনি ইমাম খোমেইনির কথার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, আন্দোলনের মূল শক্তি হচ্ছে সচেতন ও আদর্শবাদী আলেমসমাজ।

ধর্ম থেকে বিচ্ছিন্নতা (সেক্যুলারিজম)–এটি একটি ভয়ানক ব্যাধি যা আজ নানান ছদ্মবেশে ফিরে আসছে।

৪. জনগণের সাথে সংযুক্ত থাকা

নেতার মতে, “হাওযার আধ্যাত্মিক গ্রহণযোগ্যতা নির্ভর করে জনগণের সঙ্গে সংযুক্ত থাকার ওপর।”

তিনি বলেন, “জিহাদ—চিন্তা, দাওয়াত, সমাজে অংশগ্রহণসহ সব দিক থেকেই—হাওযার জন্য অপরিহার্য কর্তব্য।”

সারাংশ:
নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ীর বার্তা হলো:
হাওযা যেন একটি চিন্তাগত, নৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপে সভ্যতা গঠনের চালিকাশক্তি হয়। ধর্ম, রাজনীতি, সমাজ ও মানুষকে আলাদা না করে সম্মিলিতভাবে ইসলামের পূর্ণরূপ তুলে ধরাই এর লক্ষ্য হওয়া উচিত।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha