হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, এই স্মরণসভাটি ৩১ উর্দিবেহেশ্ত ১৪০৪ (২১ মে ২০২৫) কোমের ফাইজিয়া ধর্মীয় বিদ্যালয়ে আয়োজিত হয়, যেখানে শিক্ষাবিদ ও ছাত্ররা বিপুলভাবে অংশগ্রহণ করেন।
আয়াতুল্লাহ আরাকি পবিত্র কুরআনের আয়াত পাঠের মাধ্যমে তাঁর বক্তব্য শুরু করেন: "মুমিনদের মধ্যে এমন মানুষ আছে যারা আল্লাহর সঙ্গে কৃত অঙ্গীকারে সত্যনিষ্ঠ; তাদের কেউ কেউ নিজেদের কর্তব্য পূর্ণ করেছে, কেউ আবার অপেক্ষায় আছে এবং তারা তাদের অবস্থান পরিবর্তন করেনি।"
তিনি বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি রাইসী ও তাঁর বিশ্বস্ত সঙ্গীদের শাহাদাত জাতি ও বিশ্বের বঞ্চিতদের জন্য এক বড় ক্ষতি। আমরা প্রার্থনা করি আল্লাহ তা'আলা যেন এই ক্ষতি পূরণ করেন।
তিনি বলেন, শহীদ রাইসীর জীবন ও ব্যবস্থাপনার পদ্ধতি বিশ্লেষণ করা আমাদের দায়িত্ব। তিনি ইসলামী ঐতিহ্য অনুসরণ করে আলী, মোহাম্মদ (স), ফাতিমা (আ), হাসান (আ), ও হোসাইন (আ)-এর আদর্শে এক উজ্জ্বল উদাহরণ উপস্থাপন করেন।
তিনি আরও বলেন, যারা মনে করে ইসলাম সফল ব্যবস্থাপনা দিতে অক্ষম, তাদের শহীদ রাইসীর তিন বছরের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করা উচিত। তাঁর আমলে দেশে বন্ধ হয়ে যাওয়া হাজার হাজার শিল্প প্রতিষ্ঠান চালু হয়, কৃষির পুনর্জাগরণ ঘটে, এবং সমাজে আশার সঞ্চার হয়।
আয়াতুল্লাহ আরাকি উল্লেখ করেন যে, বহু প্রদেশে এতটাই কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছিল যে বিদেশ থেকে শ্রমিক আনবার কথাও উঠে এসেছিল। তেলের বিক্রি সর্বনিম্নে পৌঁছালেও শহীদ রাইসীর কৌশলে তা পুনরায় বৃদ্ধি পায় এবং দেশকে বিদেশী নির্ভরতা থেকে মুক্ত রাখে।
শহীদ রাইসীর ব্যবস্থাপনার পাঁচটি মূলনীতি:
১. "আমরা পারি" নীতি:
শহীদ রাইসী বলতেন, আমাদের দেশে সবকিছু আছে – তেল, খনিজ, মানবসম্পদ। তিনি আত্মনির্ভরশীলতার আদর্শ তুলে ধরেন।
২. জনমুখী ও ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবস্থাপনা:
কুরআনের “তিনি তোমাদের প্রতি সদয় ও মমতাশীল” আয়াতের বাস্তব উদাহরণ ছিলেন শহীদ রাইসী। তিনি জনগণের কষ্ট দূর করতে দিনরাত পরিশ্রম করেছেন।
৩. ইসলামী সমাধানে বিশ্বাস:
শহীদ রাইসী চেয়েছিলেন ইসলামী ফিকহ দ্বারা অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান। তিনি আলেমদের সঙ্গে বৈঠকের উদ্যোগও নিয়েছিলেন।
৪. শত্রুদের প্রতি অবিশ্বাস:
তিনি বিশ্বাস করতেন, যারা ইসলামি বিপ্লবের মূলনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়, তাদের হাতে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব দেয়া নিরাপদ নয়।
৫. আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ:
শহীদ রাইসীর কাজ ছিল আল্লাহর জন্য। তিনি ছিলেন “প্রতিরোধী ব্যবস্থাপনার” প্রতীক, যিনি কখনো হতাশ হননি এবং সবসময় বলতেন, “আল্লাহর সাহায্যে আমরা সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠবো।”
শেষে আয়াতুল্লাহ আরাকি বলেন, "যদি তোমরা আল্লাহর সাহায্য করো, আল্লাহও তোমাদের সাহায্য করবেন" – এই কুরআনের নির্দেশনা শুধু যুদ্ধক্ষেত্রে নয়, বরং অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং ব্যবস্থাপনার সব পর্যায়ে প্রযোজ্য। শহীদ রাইসী ছিলেন এই আদর্শের এক জীবন্ত প্রতিচ্ছবি।
আপনার কমেন্ট