মঙ্গলবার ২৭ মে ২০২৫ - ০৮:২৪
ইমাম জাওয়াদ (আ.)-এর সময়ে শিয়াদের দুটি বড় সংকট: বিশ্বাসের শুদ্ধতা পরীক্ষা ও অর্থনৈতিক চাপ

এমন এক সময়ে যখন রাস্তায় বিশ্বাসের শুদ্ধতা পরীক্ষার নামে তরবারি রক্তের পিপাসা মেটাচ্ছিল আর দারিদ্র্য শিয়াদের জীবন ও ঈমানকে চরম সংকটে ফেলেছিল, ইমাম জাওয়াদ (আ.) হিদায়তের পতাকা হাতে নিলেন। ইসলামের ইতিহাসের এক অন্ধকারতম যুগে তিনি হয়েছিলেন ক্ষতবিক্ষত হৃদয়ের সান্ত্বনা ও শিয়াদের জন্য ঘটনাবহুল ঝড়ের মধ্যে আশ্রয়স্থল।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: ইরানের হাওজায়ে ইলমিয়ার দারসে খারিজের শিক্ষক হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন আবেদী তাঁর এক বক্তৃতায় ইমাম জাওয়াদ (আ.)-এর সময়ের দুটি বড় সংকটের কথা উল্লেখ করে বলেন,

ইমাম জাওয়াদ (আ.) ইসলামের ইতিহাসের এক কঠিনতম সময়ে, বিশ্বাসের শুদ্ধতা পরীক্ষা ও চরম অর্থনৈতিক চাপের মধ্যে শিয়াদের হিদায়ত ও নেতৃত্বের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। 

নবম ইমাম (আ.) এমন এক যুগে জীবিত ছিলেন যা ২০২ বা ২০৩ হিজরি, অর্থাৎ ইমাম রেজা (আ.)-এর শাহাদতের সময় থেকে ২২০ হিজরি পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এটি শিয়া সম্প্রদায় এবং সমগ্র ইসলামী বিশ্বের জন্য সবচেয়ে কঠিন সময়গুলোর একটি। 

প্রথমত, ‘মিহনাত’ (বিশ্বাসের শুদ্ধতা পরীক্ষা) নামক একটি বিষয় ছিল, যা আপনারা সম্ভবত শুনেছেন। 
‘মিহনাত’ বলতে বোঝানো হয় বিশ্বাসের শুদ্ধতা পরীক্ষার আদালত, যা এই সময়ে চালু ছিল। তখন রাস্তায় যে কাউকে ধরে জিজ্ঞাসা করা হত: পবিত্র কুরআন হাদিস (সৃষ্ট) নাকি কাদিম (অসৃষ্ট)?”
যে বলত “কুরআন হাদিস (সৃষ্ট)”, তাকে হত্যা করা হত; তার স্ত্রী ও সন্তানদেরও হয় হত্যা করা হত নতুবা বন্দী করা হত। এই সময়ে বিশ্বাস পরীক্ষার নামে হাজার হাজার মুসলিমকে হত্যা করা হয়েছিল। 

দ্বিতীয়ত, ইমাম জাওয়াদ (আ.)-এর সময়ে শিয়াদের ওপর অত্যধিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক চাপ ছিল। এমনকি এক রেওয়ায়েতে ইমাম (আ.) বলেছেন: 
ما أنصفناکم إن کَلَفناکم ذلک الیوم 
আজকের এই কঠিন সময়ে শিয়াদের কাছে দান-খয়রাত বা যাকাত-খুমসের মতো ধর্মীয় অনুদানের বিষয়ে বলা আমাদের পক্ষে ন্যায়সংগত হবে না, কারণ আব্বাসীয় শাসন ব্যবস্থার নির্মম অত্যাচার ও অর্থনৈতিক নিষ্পেষণে তারা সম্পূর্ণরূপে বিপর্যস্ত।

এই সময়ে এমন চরম অভাব ছিল যে অনেক সময় সাইয়্যেদা (নবী বংশের নারী) মহিলাদের নামাজের জন্য একটি চাদরও থাকত না। তারা একে অপরের সাথে চাদর বিনিময় করতেন—একজন নামাজ পড়ে চাদর খুলে অন্যজনকে দিতেন, আবার সে নামাজ শেষ করে পরেরজনকে দিতেন। 

এত কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও নবম ইমাম (আ.) ইসলামী বিশ্ব, বিশেষত শিয়া সমাজের ইমামত ও নেতৃত্বের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। 

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha