শনিবার ৩১ মে ২০২৫ - ১০:১৪
ইমাম খোমেইনি (রহঃ) কোম হাওযা থেকে "আল্লাহর পথে আন্দোলন" এর পতাকা উড্ডীন করেন

প্রদেশসমূহের হাওযার পরিচালক, উপপরিচালক ও কেন্দ্রীয় পরিচালনা পর্ষদের কর্মকর্তাদের সম্মেলনের সমাপনী বিবৃতিতে, সর্বোচ্চ নেতার দিকনির্দেশনা ও মর্যাদাশালী মারাজি‘ তাকলিদের (ধর্মীয় অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব) পরামর্শের প্রশংসা করা হয়। এতে ছাত্র, শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানানো হয় যে, তারা আশাবাদ ও দৃঢ় সংকল্পে ভরপুর চিত্তে হাওযাহ ও ধর্মীয় নেতৃত্বের বৈজ্ঞানিক ও সামাজিক ভূমিকা পালনে অগ্রণী ভূমিকা রাখবেন।

হাওযা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, এই সম্মেলনটি ১৪০৪ হিজরির খোরদাদ মাসের ৮ ও ৯ তারিখে কোম শহরে অনুষ্ঠিত হয়। সমাপনী বিবৃতিতে বলা হয়, সর্বোচ্চ নেতার ঐতিহাসিক বার্তা ও মর্যাদাশালী মারাজি‘র বক্তব্য বা বার্তা, ক্বুম হাওযাহ প্রতিষ্ঠার শতবার্ষিকী উপলক্ষে এক মোড় পরিবর্তনের সূচনা করেছে। এই দিকনির্দেশনা ও মূল্যবান পয়েন্টসমূহ অনুসরণ করা হলে, হাওযার বিভিন্ন ক্ষেত্রে একটি মৌলিক পরিবর্তন সম্ভব।

পরিচালকরা বিশেষভাবে ছাত্র, শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান—তারা যেন গভীর আশাবাদ ও দৃঢ় মনোবলে, হাওযাহর বৈজ্ঞানিক ও সামাজিক ভূমিকা শক্তিশালী করার লক্ষ্যে চেষ্টা চালিয়ে যান।

জনগণের সমস্যার সমাধানে কর্মকর্তাদের দায়িত্ব

সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়, ইমাম খোমেইনি (রহঃ) কোম হাওযা থেকেই "আল্লাহর পথে আন্দোলন" (কিয়াম লিল্লাহ) এর পতাকা উড্ডীন করেছিলেন। কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়, তারা যেন ইরানের সম্মানিত জনগণের সেবা, বেকারত্ব ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সমাধান এবং আধিপত্যবাদী রাষ্ট্রগুলোর বিরুদ্ধে জনগণের অধিকার রক্ষায় সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালান।

হজ কংগ্রেসে গাজা সমর্থনে আওয়াজ তুলুন

হাওযা পরিচালকরা শহীদদের প্রতি ওফা ও ইসলামি বিপ্লবের আদর্শের প্রতি আনুগত্যের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। তারা অবৈধ ইহুদি দখলদার সরকারের গণহত্যা, গাজার নিরীহ জনগণের উপর বর্বরতা এবং দক্ষিণ লেবাননে আগ্রাসনের নিন্দা জানান। হজের মহাসম্মেলনের প্রাক্কালে তারা বিশ্ব ইসলামের আলেম ও বিদ্বজ্জনদের প্রতি আহ্বান জানান, তারা যেন এই বর্বরতার বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেন এবং নিজেদের নেতৃবৃন্দের নিকট গাজার নিরীহ জনগণের সহায়তা দাবি করেন।

সমাপনী বিবৃতির পূর্ণ বিবরণ:

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

"তুমি কি দেখোনি, কিভাবে আল্লাহ একটি পবিত্র বাক্যকে একটি উত্তম বৃক্ষের সাথে তুলনা করেছেন—যার মূল মজবুত ও শাখা আকাশে" (সূরা ইবরাহীম, আয়াত ২৪)

বিশ্ব তাশায়্যু‘ (শিয়া) হাওযাসমূহ পবিত্র ইমামগণের ও তাঁদের মর্যাদাশালী সাহাবীদের উত্তরাধিকার, যাদের ১৩০০ বছরের ঐতিহ্য রয়েছে। এই ধর্মীয় শিক্ষাকেন্দ্রসমূহ ইসলামি সমাজে দ্বীন রক্ষায় ও বিশ্বাস সংরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। দীর্ঘ শতাব্দী ধরে কুরআন ও আহলে বাইতের শিক্ষার আলোকে তারা জনগণের সেবা, অবিচার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছে। বিগত দুই শতাব্দীতে এই হাওযাগুলো উপনিবেশবাদ ও বিশ্ব আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অন্যতম ফ্রন্ট হিসেবে কাজ করেছে।

ইরানে ইসলামি বিপ্লবের মূল প্রেরণা ছিলেন ইমাম খোমেইনি (রহঃ), যিনি ক্বুম হাওযাহ থেকে "আল্লাহর পথে আন্দোলনের" পতাকা তুলেছিলেন। তিনি ন্যায় ও ইনসাফপ্রিয় জনগণের সহযোগিতায় এই বিপ্লবকে বিজয়ে পরিণত করেন। আজও এই আন্দোলন বিভিন্ন ষড়যন্ত্র ও চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও হাওযাহসমূহের সহযোগিতায় অব্যাহত রয়েছে। বর্তমান সময়ে হাওযাহর প্রতি প্রত্যাশা, তারা যেন সমাজ ও ইসলামি শাসনব্যবস্থার উন্নয়নে বর্তমান প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় নিয়ে কাজ করে এবং আলেম, বিশ্ববিদ্যালয় ও চিন্তাবিদদের সহযোগিতায় শাসন-ব্যবস্থার সফটওয়্যার (নীতি ও দিকনির্দেশনা) তৈরি করে। এতে ইরান যেমন বিশ্ব অগ্রগতির পথে এগিয়ে যাবে, তেমনি ইসলামি আইনের বাস্তবায়নও ঘটবে এবং জনগণের মানসিক ও বস্তুগত প্রয়োজন মেটানো সম্ভব হবে।

কোম হাওযা প্রতিষ্ঠার শতবর্ষ উদযাপন ছিল এক গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষ, যার মাধ্যমে এই প্রতিষ্ঠানের ঐতিহাসিক ভূমিকা ও এর প্রবর্তক আয়াতুল্লাহ আল উজমা হায়রে ইয়াযদীর (রহঃ) অবদান স্মরণ করা হয়। সেইসাথে সমকালীন দায়িত্ব ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা হয়।

সর্বোচ্চ নেতার বার্তা ও মারাজি‘র বক্তব্য শতবর্ষ উপলক্ষে হাওযার রূপান্তরের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়। হাওযাহ পরিচালনা কেন্দ্র এই বার্তাকে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন সভায় প্রস্তাবনা ও পরিকল্পনা তৈরি করেছে, যা বর্তমানে চূড়ান্তকরণের পর্যায়ে রয়েছে।

দেশব্যাপী হাওযার কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক পরিচালনা কর্মকর্তারা সর্বোচ্চ নেতার ও মারাজি‘র উপস্থিতি ও দিকনির্দেশনার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তাঁরা সকল ছাত্র, শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের আহ্বান জানান—আশা ও উদ্যমে ভরপুর মন নিয়ে হাওযাহর বৈজ্ঞানিক ও সামাজিক দায়িত্ব পালনে আত্মনিয়োগ করুন।

হাওযাসমূহ শহীদদের সাথে অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে গাজার গণহত্যা ও দক্ষিণ লেবাননে আগ্রাসনের নিন্দা জানায় এবং হজের প্রাক্কালে বিশ্ব ইসলামী সমাজের আলেম ও বিদ্বজ্জনদের এই বর্বরতার বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ ও গাজাবাসীদের পক্ষে সাহায্যের দাবি জানাতে আহ্বান জানায়। একইসাথে, ইরানের জনগণের সেবা, বেকারত্ব ও মূল্যবৃদ্ধি দূরীকরণ এবং অধিকার রক্ষায় কর্মকর্তাদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান জানানো হয়।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha