মঙ্গলবার ২৭ মে ২০২৫ - ১১:২৯
কেন ইমাম মুহাম্মাদ তাকী (আ.)-কে "জাওয়াদুল আইয়াম্মাহ" বলা হয়?

ইমাম মুহাম্মাদ তাকী (আ.)-এর “জাওয়াদ” উপাধিটি, যার অর্থ হলো “অত্যন্ত দানশীল”, শুধুমাত্র শিয়া বর্ণনা ও বিশ্বাসের ভিত্তিতে সীমাবদ্ধ নয়। বরং অনেক সুন্নি বিদ্বানরাও এই উপাধি তাঁর জন্য ব্যবহার করেছেন।

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, ইমাম মুহাম্মাদ তাকী (আ.)-এর “জাওয়াদ” উপাধিটি, যার অর্থ হলো “অত্যন্ত দানশীল”, শুধুমাত্র শিয়া বর্ণনা ও বিশ্বাসের ভিত্তিতে সীমাবদ্ধ নয়। বরং অনেক সুন্নি বিদ্বানরাও এই উপাধি তাঁর জন্য ব্যবহার করেছেন।

ইমাম জাহাবী, যিনি সুন্নি বিশ্বে একজন সুপ্রসিদ্ধ জ্ঞানের স্তম্ভ হিসেবে বিবেচিত, বলেন:

 "كان يُلقب بالجواد، و بالقانع، و بالمرتضى. كان من سَروات آل بيت النبي صلى الله عليه وسلم، و كان أحد الموصوفين بالسخاء، و لذلك لُقّب بالجواد."
অর্থাৎ, তাঁর উপাধি ছিল ‘জাওয়াদ’ (দানশীল), ‘কানেআ’ (সন্তুষ্টপ্রাণ) এবং ‘মুর্তজা’ (প্রশংসিত)। তিনি রাসূলের (সা.) আহলুল বায়তের একজন মহান সদস্য ছিলেন এবং দানশীলতায় প্রসিদ্ধ ছিলেন; এজন্যই তাঁকে “জাওয়াদ” বলা হতো।
(তারিখুল ইসলাম, জাহাবী, খণ্ড ১৫, পৃষ্ঠা ৩৮৫)

ইবনে তাইমিয়া, যিনি শিয়াদের বিরোধিতার জন্য পরিচিত, তিনিও ইমাম (আ.) সম্পর্কে বলেন:

 "محمد بن علی الجواد کان من أعیان هاشم و هو معروف بالسخاء و السؤدد و لهذا سُمي الجواد."
অর্থ: “মুহাম্মাদ ইবনে আলী জাওয়াদ ছিলেন বনী হাশিমের বিশিষ্টজনদের একজন। তিনি দানশীলতা ও মহত্ত্বের জন্য বিখ্যাত ছিলেন, এজন্যই তাঁকে ‘জাওয়াদ’ বলা হতো।”
(মিনহাজুস সুন্নাহ, ইবনে তাইমিয়া, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৬৮)

এই বক্তব্যগুলো প্রমাণ করে যে ইমাম মুহাম্মাদ তাকী (আ.)-এর ‘জাওয়াদ’ উপাধিটি শুধুমাত্র শিয়াদের দাবিভিত্তিক নয়; বরং তাঁর অসাধারণ দানশীলতার বাস্তবতা সুন্নি বিদ্বানদের কাছেও স্পষ্ট ছিল।

শিয়া সূত্রে আরও একটি ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে, যা তাঁর অলৌকিক দানশীলতার সাক্ষ্য দেয়। তাবারী শিয়া তাঁর দলাইলুল ইমামাহ গ্রন্থে ইবরাহিম ইবনে সাঈদ থেকে বর্ণনা করেন:

 "رأیت محمد بن علی (علیه السلام) یضرب بیده إلی ورق الزیتون فیصیر فی کفه ورقا..."
অর্থ: “আমি দেখেছি ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে আলী (আ.) একটি জলপাই গাছের পাতায় হাত রেখেছিলেন এবং সেই পাতাগুলি তাঁর হাতে রূপালী মুদ্রায় পরিণত হয়। আমি সেগুলো নিয়ে বাজারে ব্যবহার করেছি, এবং তাতে কোনো পরিবর্তন হয়নি – তারা আসলেই রূপায় পরিণত হয়েছিল।”

(দলাইলুল ইমামাহ, তাবারী শিয়া, পৃষ্ঠা ৩৯৮)

এই ঘটনাগুলো প্রমাণ করে যে নবম ইমাম (আ.) দানশীলতা ও মহানুভবতার ক্ষেত্রে কেবল প্রচলিত পদ্ধতিতেই সীমাবদ্ধ ছিলেন না; বরং তাঁর তাকওয়িনি ইমামত (অলৌকিক ক্ষমতা)-এর মাধ্যমে অসাধারণভাবে মানুষের সাহায্য করতেন।

ইমাম জাওয়াদ (আ.)-এর শাহাদাত কিভাবে হয়?

হিজরি ২১৮ সালে মামুনের মৃত্যু হয় এবং তার পর তার ভাই মু'তাসিম খেলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করে। হিজরি ২২০ সালে মু'তাসিম ইমাম জাওয়াদ (আ.)-কে মদিনা থেকে বাগদাদে ডেকে পাঠায়, যেন তাঁকে কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করতে পারে।

মু'তাসিম ইমামের প্রতি ঈর্ষান্বিত ছিল এবং জানত যে তাঁর ভাই মামুনের কন্যা উম্মুল ফজল এখন ইমাম জাওয়াদ (আ.)-এর প্রতি অনুরক্ত নয়। সে জাফর, মামুনের পুত্র এবং উম্মুল ফজলের ভাইয়ের সঙ্গে পরামর্শ করে এমন একটি ষড়যন্ত্র রচনা করে যাতে উম্মুল ফজলকেই হত্যার কাজে ব্যবহার করা হয়।

জ্বুল-ক্বাদা মাসের শেষের দিকে, জাফর অথবা মু'তাসিম বিষ মিশিয়ে কিছু আঙ্গুর পাঠায় উম্মুল ফজলের জন্য। তিনি সেই বিষাক্ত আঙ্গুর একটি পাত্রে রেখে তাঁর স্বামী, ইমাম জাওয়াদ (আ.)-এর সামনে রাখেন।
ইমাম (আ.) যখন তা খান, তখনই বিষের প্রভাব শুরু হয়। প্রচণ্ড ব্যথা ও কষ্টে তিনি ভীষণ দুর্বল হয়ে পড়েন।

এই সময় উম্মুল ফজল কান্না শুরু করেন, অনুশোচনায় দগ্ধ হয়ে। ইমাম (আ.) তখন বলেন: “এখন যখন তুমি আমাকে মেরে ফেলেছো, কাঁদার অর্থ কী? আল্লাহর কসম, তুমি এমন এক দারিদ্র্য ও অসুস্থতায় ভুগবে যার প্রতিকার হবে না এবং এমন এক দুর্ভাগ্যে পতিত হবে যা গোপন থাকবে না।”

এই ইমামের বদদোয়ার ফলে উম্মুল ফজল সত্যিই এক কঠিন রোগে আক্রান্ত হন। নিজের সব সম্পদ ব্যয় করেও সে সুস্থ হতে পারেনি এবং চরম দারিদ্র্যে মৃত্যুবরণ করেন।

ইবনে শহর আশুব তাঁর আল-মানাকিব গ্রন্থে লেখেন: “মু'তাসিম, ইমাম জাওয়াদ (আ.)-এর শাহাদাতের পর উম্মুল ফজলকে প্রাসাদে নিয়ে যান, কিন্তু কিছুদিন পরই তিনি কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।”
(ইস্‌বাতুল ওয়াসিয়া, মাসউদী, পৃষ্ঠা ২২০)

এই সব ঘটনাই প্রমাণ করে:
ইমাম মুহাম্মাদ তাকী (আ.) ছিলেন একজন মহামানব, যিনি জ্ঞান, দানশীলতা, আখলাক এবং অলৌকিক ক্ষমতার দিক থেকে অনন্য ছিলেন এবং যাঁর শাহাদাত এক চক্রান্ত ও ঈর্ষার পরিণতি ছিল।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha