হাওজা নিউজ এজেন্সি: আল্লাহ্ তাআলার প্রজ্ঞাময় ইচ্ছানুসারে ইমাম মাহদী (আ.ফা.)-এর আবির্ভাবের সময় আমাদের কাছে গোপন রয়েছে। নিশ্চয়ই এতে বহু প্রজ্ঞা নিহিত রয়েছে, যার মধ্যে (সম্ভাব্য) কয়েকটি আমরা এখানে উপস্থাপন করছি:
অবিচ্ছিন্ন আশার ধারা
আবির্ভাবের সময় গোপন থাকার কারণে প্রতিটি যুগের মুমিনদের হৃদয়ে আশার আলো অম্লান থাকে। এই অবিরাম আশার বলেই তারা গায়েবের যুগের সমস্ত কঠিন পরীক্ষা ও সংকট মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়। উদাহরণস্বরূপ, যদি আগের যুগের শিয়া মুসলমানদেরকে জানিয়ে দেওয়া হত যে তাদের জীবদ্দশায় ইমামের আবির্ভাব ঘটবে না, বরং তা বহু শতাব্দী পর সংঘটিত হবে, তাহলে তারা কোন প্রেরণা নিয়ে সেই যুগের ফিতনা মোকাবেলা করত? কিভাবে তারা গায়েবের এই দীর্ঘ ও কঠিন পথ পাড়ি দিত?
প্রস্তুতি ও পটভূমি সংস্কারের ধারাবাহিকতা
গঠনমূলক প্রতীক্ষা- যা সমাজের অগ্রগতি ও পুনর্জাগরণের মূল চালিকাশক্তি- কেবলমাত্র আবির্ভাবের সময় অনির্দিষ্ট থাকার কারণেই সম্ভব। যদি নির্দিষ্ট সময় জানা থাকত, তবে যারা নিশ্চিতভাবে জানত যে তারা সেই মহামুহূর্তটি প্রত্যক্ষ করবে না, তাদের মধ্যে কোনো আত্মগঠন ওনসংস্কারমূলক প্রেরণা বা সমাজ পরিবর্তনের আগ্রহ থাকত না। তারা নিষ্ক্রিয়তা ও জড়তায় নিমজ্জিত হয়ে পড়ত।
অন্যদিকে, সময় গোপন থাকায় প্রতিটি প্রজন্মই এই স্বপ্ন নিয়ে বাঁচে যে হয়তো তারাই সেই সৌভাগ্যবান প্রজন্ম হবে যারা ইমামের আবির্ভাব প্রত্যক্ষ করবে। ফলে প্রতিটি যুগের মানুষই সমাজকে আরও ন্যায়নিষ্ঠ ও উন্নত করে গড়ে তোলার জন্য আত্মনিয়োগ করে এবং ইমামের আবির্ভাবের জন্য প্রয়োজনীয় পটভূমি রচনায় ব্রতী হয়।
আরও উল্লেখ্য, যদি সময় নির্দিষ্ট করে দেওয়া হত কিন্তু কোনো অজ্ঞাত কারণে সেই মুহূর্তে আবির্ভাব সংঘটিত না হত, তাহলে অনেকেই ইমাম মাহদী (আ.ফা.)-এর প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলার ঝুঁকিতে পড়তেন। এ প্রসঙ্গে ইমাম মুহাম্মাদ আল-বাকির (আ.) বলেছেন,
کَذَبَ اَلْوَقَّاتُونَ کَذَبَ اَلْوَقَّاتُونَ کَذَبَ اَلْوَقَّاتُونَ إِنَّ مُوسَی عَلَیْهِ اَلسَّلاَمُ لَمَّا خَرَجَ وَافِداً إِلَی رَبِّهِ وَاعَدَهُمْ ثَلاَثِینَ یَوْماً فَلَمَّا زَادَهُ اَللَّهُ عَلَی اَلثَّلاَثِینَ عَشْراً قَالَ قَوْمُهُ قَدْ أَخْلَفَنَا مُوسَی فَصَنَعُوا مَا صَنَعُوا
যারা (আবির্ভাবের) সময় নির্ধারণ করে তারা মিথ্যাবাদী, তারা মিথ্যাবাদী, তারা মিথ্যাবাদী।
হযরত মূসা (আ.) যখন তাঁর প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাতের জন্য ত্রিশ দিনের জন্য গমন করেছিলেন, পরে আল্লাহ্ তাআলা তা চল্লিশ দিনে পরিবর্ধিত করলেন। তখন তাঁর সম্প্রদায় বলতে লাগল, ‘মূসা আমাদের সাথে তার ওয়াদা ভঙ্গ করেছেন’, ফলে তাদের যা করা অনুচিত ছিল, তা-ই করল (গোবৎসের পূজায় লিপ্ত হয়ে গেল)।
[আল-কাফি, খণ্ড- ১, পৃষ্ঠা- ৩৬৮]
(এই আলোচনা পরবর্তী অংশে অব্যাহত থাকবে...)
গ্রন্থসূত্র: “নেগীনে অফারীনেশ” গ্রন্থ থেকে সংকলিত ও সংক্ষেপে সম্পাদিত।
আপনার কমেন্ট