বৃহস্পতিবার ২৯ মে ২০২৫ - ০৮:৩৫
আহলে বাইত (আ.)’র বিবাহের মূলনীতি: সাদাসিধে জীবন-যাপন, পরকালমুখিতা ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন

হুজ্জাতুল ইসলাম সৈয়দ জাফর দিবাজী ইমাম আলী (আ.) ও হযরত ফাতিমা (সা.আ.)-এর বিবাহে সাদাসিধে জীবন-যাপনের কথা উল্লেখ করে বলেন, এই স্বর্গীয় বন্ধন অত্যন্ত কম খরচে ও কোনো প্রকার বাহুল্য ছাড়াই সম্পন্ন হয়েছিল। বর্তমান যুবকদের উচিত এ থেকে শিক্ষা নিয়ে বাহুল্য ও জাঁকজমক থেকে দূরে থাকা।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: ইরানের ইস্ফাহানের হাওজায়ে ইলমিয়া আয়াতুল্লাহ মেশকাতের পরিচালক হুজ্জাতুল ইসলাম সৈয়দ জাফর দিবাজী হাওজা নিউজ এজেন্সিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইমাম আলী (আ.) ও হযরত ফাতিমা (সা.আ.)-এর বিবাহের বার্ষিকী উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানিয়ে পবিত্র কুরআনের আয়াত یَخْرُجُ مِنْهُمَا اللُّؤْلُؤُ وَالْمَرْجَانُ “উভয় (সমুদ্র) থেকে মুক্তা ও প্রবাল বের হয়” (সূরা আর-রহমান: ২২) এর ব্যাখ্যায় বলেন, ইমাম সাদিক (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, ইমাম আলী (আ.) ও হযরত ফাতিমা (সা.আ.) দু'টি গভীর সমুদ্রের মতো, যারা কখনো একে অপরের উপর বাড়াবাড়ি করে না। আর এই দু'টি সমুদ্র থেকে মুক্তা ও প্রবাল তথা ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন (আ.) জন্মগ্রহণ করেছেন। 

তিনি বলেন, হযরত ফাতিমা (সা.আ.) ও আমিরুল মুমিনিন (আ.)-এর দাম্পত্য জীবন বিভিন্ন দিক থেকে চিন্তা ও অনুকরণের যোগ্য। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো তাদের বিবাহ অনুষ্ঠানের সাদাসিধে জীবন-যাপন। এই পবিত্র বন্ধন অত্যন্ত কম খরচে ও গভীর আধ্যাত্মিক পরিবেশে সম্পন্ন হয়েছিল। অথচ আজ আমরা দেখছি, অতিরিক্ত খরচ ও বাহুল্যের কারণে বিয়ের বয়স বেড়ে যাচ্ছে। 

ইস্ফাহানের আয়াতুল্লাহ মেশকাত ধর্মীয় স্কুলের এই পরিচালক বর্তমান সময়ের বিবাহ অনুষ্ঠানের ভুল রীতিনীতির সমালোচনা করে বলেন, অনেক যুবকই আজকাল উচ্চ খরচের চাপে বিয়েতে আগ্রহ হারাচ্ছে - যেমন লাখ লাখ টাকার বিলাসবহুল হল ভাড়া, দামী খাবার, মূল্যবান পোশাক ও ব্যয়বহুল বিউটি পার্লার। এসব ভুল রীতি আমরা নিজেরাই তৈরি করেছি। অথচ আল্লাহভীরু ব্যবস্থাপনায় খুবই সাধারণ ও আল্লাহপসন্দ অনুষ্ঠান করা সম্ভব। 

তিনি বিবাহ অনুষ্ঠানে অপ্রীতিকর আচরণ এড়ানোর গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, নবদম্পতির উচিত না তাদের দাম্পত্য জীবন পাপের মধ্যে দিয়ে শুরু করা। বরং অনুষ্ঠানটি আধ্যাত্মিক পরিবেশে করা উচিত। 

হুজ্জাতুল ইসলাম দিবাজী হযরত ফাতিমা (সা.আ.)-এর বিয়ের রাতের দানশীলতার কথা উল্লেখ করে বলেন, তিনি তাঁর বিয়ের রাতেই নিজের বিয়ের পোশাক একজন গরীবকে দান করেছিলেন। এমনকি আনন্দের মুহূর্তেও তারা আল্লাহর সন্তুষ্টিকেই প্রাধান্য দিয়েছিলেন। এটি তাদের জীবনের গভীর আধ্যাত্মিকতারই পরিচয় বহন করে। 

তিনি আরও বলেন, এই স্বর্গীয় দম্পতির জীবন থেকে আমাদের আরেকটি শিক্ষা নেয়া উচিত তা হলো পরকালমুখিতা। একটি হাদীসে বর্ণিত আছে, বিয়ের রাতে ইমাম আলী (আ.) হযরত ফাতিমা (সা.আ.)-এর চেহারায় কিছুটা দুঃখের ছাপ দেখে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, “আমি আজ বাবার ঘর থেকে স্বামীর ঘরে এসেছি, আর আগামীকাল এই ঘর থেকে কবরের ঘরে যাব।” মৃত্যু ও পরকাল সম্পর্কে এই গভীর দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের জীবনেও থাকা উচিত। 

ইসফাহানের এই মাদ্রাসার পরিচালক শেষে বলেন, বিবাহ আমাদের সামাজিক রীতিনীতির মধ্যে সবচেয়ে পবিত্র একটি অনুষ্ঠান। কিন্তু কিছু ভুল প্রথার কারণে এই আধ্যাত্মিক অনুষ্ঠান তার বিপরীতে পরিণত হয়েছে। আহলে বাইত (আ.)-এর জীবনাদর্শ থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের এই অনুষ্ঠানগুলোকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনা উচিত। 

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha