সোমবার ২ জুন ২০২৫ - ০৮:৪৫
হামাস দৃঢ় অবস্থানে, নাজুক পরিস্থিতিতে ইসরাইল: ইহুদি বিশেষজ্ঞ

ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসকে ঘিরে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যেও গাজায় প্রতিরোধ চালিয়ে যাচ্ছে এই গোষ্ঠী। ইহুদিবাদী দখলদার প্রশাসনের একাংশের দাবি অনুযায়ী হামাসকে চাপে ফেলতে সক্ষম হলেও ইসরাইলি বিশ্লেষকদের মতামত সম্পূর্ণ ভিন্ন। তারা বলছেন, হামাসের মধ্যে ভেঙে পড়া বা আত্মসমর্পণের কোনো লক্ষণ নেই। বরং গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দাবি ও প্রতিরোধের মনোভাব আগের চেয়েও দৃঢ় হয়েছে।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: মার্কিন মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফের সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে হামাসের প্রতিক্রিয়া বিশ্লেষণ করে ইসরাইলের প্রভাবশালী দৈনিক ইয়েদিয়োত আহারোনোথ-এর বিশ্লেষক অভি ইয়াসাখরফ বলেন, “হামাসের প্রতিক্রিয়া থেকে বোঝা যায়, তারা কোনো চূড়ান্ত চাপে নেই এবং পতনের কাছাকাছি—এই ধারণা ভিত্তিহীন।” ইরানি সংবাদমাধ্যম ইসনা-ও ইসরাইলি বিশ্লেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে, “হামাসের মধ্যে আত্মসমর্পণের ইচ্ছা দেখা যায়নি।”

ইসরাইলি বিশ্লেষক আসাভ মেয়দানি নিজ দেশের অভ্যন্তরীণ সংকটকে চিহ্নিত করে বলেন, “ইসরাইল আর দীর্ঘমেয়াদি অচলাবস্থা সহ্য করতে পারছে না। দক্ষিণ ও উত্তরাঞ্চলের সামরিক পুনর্গঠন, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং পশ্চিমা দেশের চাপ—সব মিলিয়ে ইসরাইল এখন বহুমুখী সংকটে পড়েছে।” তিনি আরও বলেন, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু কেবল নিজের রাজনৈতিক অস্তিত্ব রক্ষাতেই ব্যস্ত, যা সমস্যাকে আরও জটিল করে তুলেছে।

এই প্রেক্ষাপটে হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময় সংক্রান্ত আলোচনা অচলাবস্থায় পৌঁছেছে। হামাস স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ও গাজার ওপর থেকে অবরোধ প্রত্যাহারের শর্তে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানালেও, ইসরাইল এখনো তাতে সাড়া দেয়নি। হামাস দাবি করেছে, তাদের প্রতিক্রিয়া চুক্তির কাঠামোর মধ্যেই ছিল। অন্যদিকে স্টিভ উইটকফ হামাসের অবস্থানকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে মন্তব্য করেছেন।

এদিকে রোববার সকালে দক্ষিণ গাজার রাফাহর পশ্চিমে আল-মাওয়াসি এলাকায় একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে গুলি চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। এতে প্রায় ৫০ জন ফিলিস্তিনি নিহত ও ২০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। নিহতদের মধ্যে অনেকেই নারী ও শিশু। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, লোকজন যখন ত্রাণকেন্দ্রের কাছে পৌঁছায়, তখন ইসরাইলি সামরিক যান ও ড্রোন থেকে নির্বিচারে গুলি ও বিস্ফোরক ছোড়া হয়।

এক চিকিৎসক জানান, পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ ছিল যে অ্যাম্বুলেন্স ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারেনি। অনেক আহতকে ঠেলাগাড়িতে করে সরিয়ে নিতে হয়েছে। একই সময়ে গাজার কেন্দ্রস্থলে আমেরিকান সংস্থা পরিচালিত আরেকটি ত্রাণকেন্দ্রের দিকেও গুলি চালানো হয়েছে। এতে আরও ফিলিস্তিনি হতাহত হন বলে জানিয়েছে আল-আউদা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

ইসরাইলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র দাবি করেছেন, তারা হতাহতের বিষয়ে কোনো তথ্য পাননি, তবে ঘটনাটি তদন্তাধীন। তবে গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, “ইসরাইল মানবিক ত্রাণকে যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে, যাতে অনাহারে থাকা বেসামরিকদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা যায়।”

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরাইলি অভিযানে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫৪,৪০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। গাজার মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, প্রকৃত সংখ্যা ৬১,৭০০ ছাড়িয়ে গেছে এবং ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও বহু মরদেহ চাপা পড়ে আছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha