হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, হাওযাভিত্তিক লেখক ও গবেষক উল্লেখ করেন, ইমাম খোমেনি (রহ.)-এর দৃষ্টিতে অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার বাস্তবায়নের অর্থ হলো সমাজের অর্থনৈতিক কাঠামোর পূর্ণ সংস্কার, যাতে প্রত্যেক ব্যক্তি তাদের অর্থনৈতিক, শরয়ি ও আইনগত অধিকার পায়। এই প্রেক্ষিতে ধনিক শ্রেণি বা ক্ষমতাধররা আর নানা অজুহাতে সাধারণ জনগণকে শোষণ করতে পারে না এবং বিলাসবহুল জীবন যাপন গড়ে তুলতে পারে না।
একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—ইমাম খোমেনি (রহ.)-এর দৃষ্টিকোণে ইসলামি শাসনব্যবস্থার ভিত্তি হলো ন্যায়বিচার। এই চিন্তা বিশুদ্ধ ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গি থেকে উদ্ভূত, যা শাসকদের বাধ্য করে সমাজের দুর্বল ও নিপীড়িতদের পাশে দাঁড়াতে এবং ধনীদের কাছ থেকে তাদের অধিকার আদায় করতে—যাতে সমাজে ভয়াবহ ধরণের শ্রেণি বৈষম্য সৃষ্টি না হয়।
তিনি আরও বলেন, ইসলামী বিপ্লবে সামাজিক ন্যায়বিচারের যে স্থান রয়েছে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইমাম খোমেনি (রহ.) বলেছেন:
“এই ধারণা যে, ইসলামি শাসনব্যবস্থার অন্যান্য শাসনব্যবস্থার সঙ্গে পার্থক্য শুধু ন্যায়বিচারে—এটা ঠিক, কিন্তু এটিই একমাত্র পার্থক্য নয়। অনেক পার্থক্য রয়েছে, তার মধ্যে একটি হলো—সামাজিক ন্যায়বিচার। দুনিয়ার কোনো শাসনব্যবস্থা (নবীদের ঐক্যবদ্ধ তাওহিদভিত্তিক শাসন ছাড়া) মানুষের আধ্যাত্মিকতার প্রতি মনোযোগ দেয়নি।”
দেশের স্বাধীনতা: দাম্ভিক শত্রুদের সঙ্গে মর্যাদাপূর্ণ মোকাবেলার পূর্বশর্ত
হাওযাভিত্তিক মিডিয়া কর্মী ও গবেষক হুজ্জাতুল ইসলাম সৈয়দ মাহমুদ মুসাভি হসাব বলেন, ইমাম খোমেনি (রহ.)-এর চিন্তাধারায় গুরুত্বপূর্ণ একটি স্তম্ভ হলো—দেশের স্বাধীনতার ওপর জোর দেওয়া। তিনি বলেন, বিশেষত অর্থনৈতিক স্বাধীনতা এমন একটি বিষয় যা মানুষের আত্মিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ এবং ইসলামি মহৎ আদর্শগুলোর বিশ্বব্যাপী বাস্তবায়নের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে। এ কারণেই ইমাম রূহুল্লাহ এ বিষয়ে সব সময় গুরুত্ব দিয়েছেন এবং বলেছেন:
“আমাদের দেশপ্রেমিক ও বিপ্লবী জনগণ প্রকৃত স্বাধীনতা ও স্বনির্ভরতা অর্জনের জন্য অনেক বড় ত্যাগ ও ধৈর্যের জন্য প্রস্তুত। আমি নিশ্চিতভাবে বলছি, ইরানের প্রিয় জাতি কখনোই তাদের স্বাধীনতা ও মর্যাদাকে বিদেশি শক্তির উপর নির্ভর করে বিলাসবহুল জীবনের বিনিময়ে ছাড় দেবে না—হাজার বছর সে জীবন চললেও।”
তিনি আরও বলেন, ইসলামি বিপ্লবের অর্থনৈতিক আদর্শ, যা ইমাম খোমেনি (রহ.) এবং সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ীর উচ্চ চিন্তা থেকে প্রভাবিত, এমন একটি অবস্থা অর্জনের জন্য প্রচেষ্টা করে—যেখানে তাওহিদভিত্তিক চিন্তাধারার ওপর ভিত্তি করে এমন অর্থনৈতিক কাঠামো গড়ে ওঠে যা একদিকে জাতিকে স্বনির্ভর করে তোলে এবং অন্যদিকে মানুষের বৈধ প্রয়োজন পূরণের মাধ্যমে আধ্যাত্মিক বিকাশের পথ উন্মুক্ত করে।
এই হাওযাভিত্তিক গবেষক আরও বলেন, ইমাম খোমেনি (রহ.) স্পষ্টভাবে বলেছেন যে ইসলামি বিপ্লব কোনো প্রকার বিদেশি শক্তির ওপর নির্ভরশীল নয়। তিনি বলেন:
“পৃথিবীর অন্যান্য সমস্ত বিপ্লব কোনো না কোনো পরাশক্তির ওপর নির্ভরশীল ছিল; কিন্তু ইসলামি বিপ্লব এমন নয়। এটি কোনো সাধারণ বিপ্লব নয়, এবং পূর্ব বা পশ্চিম কোনো শক্তির ওপর নির্ভর করে না। এ কারণে এর নিজস্ব এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে।”
আপনার কমেন্ট