বৃহস্পতিবার ৫ জুন ২০২৫ - ১০:৫১
প্রত্যেক ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তি যেন বাকীআ’র আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে – মাওলানা মাহবুব মাহদি আবেদি

ইমাম মোহাম্মাদ বাকির (আ.)-এর হৃদয়বিদারক শাহাদতের উপলক্ষে শিকাগো ভিত্তিক "আল-বাকীআ অর্গানাইজেশন" একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করে।

হাওযা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, মহান ইমাম মোহাম্মাদ বাকির (আ.)-এর হৃদয়বিদারক শাহাদতের উপলক্ষে শিকাগো ভিত্তিক "আল-বাকীআ অর্গানাইজেশন" একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করে। এই সম্মেলন অনলাইনে (জুম-এর মাধ্যমে) অনুষ্ঠিত হয় এবং সভাপতিত্ব করেন হুজ্জাতুল ইসলাম ও মুসলেমিন সাইয়্যেদ যুলকাদর রিজভী। এতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আলেম ও চিন্তাবিদগণ সৌদি সরকারের কাছে দাবি জানান, যেন এক শতাব্দী আগে ধ্বংস করে দেওয়া জান্নাতুল বাকি’আর রওযাগুলোর পুনর্নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হয়।

শিকাগো, আমেরিকা থেকে আল-বাকীআ আন্দোলনের প্রাণপুরুষ, কুরআনের মুফাসসির মাওলানা সাইয়্যেদ মাহবুব মাহদি আবেদি নাজাফি বলেন:
এসএনএন চ্যানেল এমন একটি মাধ্যম, যা বাকীআ’র আন্দোলন ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার অসাধারণ কাজ করেছে। তিনি সকল মুসলিম তথা মানবতার পক্ষের সকল মানুষকে আহ্বান জানিয়ে বলেন,

 "এখন সময় এসেছে আমরা সকলে একত্রিত হয়ে জান্নাতুল বাকীআর পুনর্নির্মাণের আন্দোলনে অংশ নিই। কারণ কবর বা পবিত্র স্থানগুলোর অবমাননার অনুমতি কোনো ধর্ম বা মানবিক আইন দেয় না।"

তিনি আরও বলেন, “বাকীআ-তে যারা সমাহিত আছেন তারা কেবল শিয়াদের ইমাম নন, বরং পুরো মানবতার ইমাম।”

হাওযা ইলমিয়া কোম, ইরান থেকে তরুণ ও প্রগতিশীল আলেম মাওলানা সাইয়্যেদ শফী হায়দার রিজভী একটি সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন, “আল-বাকীআ অর্গানাইজেশনের নেতা মাওলানা মাহবুব মাহদি যেসব গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন, আমি সেগুলোর পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছি। জান্নাতুল বাকীআ এমন একটি ইস্যু, যা মুসলিম উম্মাহকে একত্রিত করতে পারে।”

তিনি বাকীআ সম্পর্কে একটি কবিতার চরণ পাঠ করেন: “যবে থেকে এখানে নির্মিত হয়েছে রওযা ইমামা রেজার বোনের,
আল্লাহ ক্বুমের মাটিকে বাকীআর প্রভাব দিয়েছেন।”

ভারতের খ্যাতিমান কবি জনাব শবরোজ কানপুরি কবিতার আগে বলেন, “আমাদের দেশে কোনো দোষী ব্যক্তির কবর ভেঙে ফেললে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে, অথচ জান্নাতুল বাকীআয় তো এমন ইমামগণ শুয়ে আছেন, যারা পবিত্রতার চাদরে আবৃত ছিলেন।”

তাঁর কবিতার দুটি চরণ: কেন এ বিশ্ব আজ বাকীআ বিষয়ে নীরব?
জালিম রেখেছে পাহারায় এই পবিত্র ভূমি!
মু’মিনগণ করছে দোয়া সমগ্র বিশ্বের জন্য –
আল্লাহ যেন দ্রুতই আচ্ছাদন করে বাকীআর উপর।

লন্ডন থেকে আলেম, গবেষক এবং হুজ্জাতুল ইসলাম ও মুসলেমিন সাইয়্যেদ যুলকাদর রিজভী বলেন, “জান্নাতুল বাকীআর ধ্বংস একটি ভ্রান্ত আক্বীদাহর ভিত্তিতে ঘটেছে এবং এর পেছনে ছিল বনু উমাইয়ার মানসিকতা। আমাদের উচিত রাজনৈতিক ব্যক্তিদেরও এই আন্দোলনে অন্তর্ভুক্ত করা। যদি আমরা চুপ থাকি, তাহলে একদিন তারা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মাজারও ধ্বংস করে দেবে।”

তিনি সৌদি সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, “আমরা শুধু অনুমতি চাই – নির্মাণ আমরা নিজেরা করব। আমাদের সৌদি টাকার প্রয়োজন নেই।”

আফ্রিকার তাঞ্জানিয়া থেকে মাওলানা সাইয়্যেদ শামসুল হাসান জাইদি বলেন, “ইমাম বাকির (আ.)-এর মজলুম শাহাদতে আমি পুরো উম্মাহকে সমবেদনা জানাই। বাকীআর ধ্বংসের আসল কারণ হচ্ছে ‘ভিলায়েত’-এর শত্রুতা। তারা তাঁদের কবর ধ্বংস করেছে যারা ভিলায়েতের অধিকারী ছিলেন।”

তিনি আহ্বান জানান যে,

 “আসন্ন ঈদে গাদির ও মহররমের সময় যেন জান্নাতুল বাকীআর কথা স্মরণে রাখা হয়।”

নেপাল থেকে আলেম মাওলানা জাইনুল আবেদীন বলেন, “জান্নাতুল বাকীআ নিয়ে যে সম্মেলন হয়, তাতে অমুসলিমদেরও আমন্ত্রণ জানানো উচিত। আমি নেপালে এমন প্রোগ্রাম করেছি যাতে হিন্দু ভাইদেরও অংশগ্রহণ ছিল। মানুষের ব্যাপক অংশগ্রহণে এই আন্দোলনকে এগিয়ে নেওয়া উচিত।”

তিনি শেষে আহ্বান জানান যে, “আল-বাকীআ অর্গানাইজেশন যেন নেপালেও একটি সম্মেলনের আয়োজন করে।”
পুনে শহর থেকে মাওলানা আসলাম রিজভী বলেন, “শিকাগোর আল-বাকীআ অর্গানাইজেশনের ধারাবাহিক সম্মেলনের ফল হয়েছে, এখন বাকীআর আন্দোলন ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে। আগে মানুষ একবার মাত্র ৮ শাওয়ালে একটি অনুষ্ঠানের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকত। কিন্তু এখন শহর-শহর, গ্রাম-গ্রাম, বিশ্বজুড়ে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ হচ্ছে, যার পেছনে অর্গানাইজেশনের নিরলস পরিশ্রম রয়েছে।”

এসএনএন চ্যানেলের প্রধান সম্পাদক ও ভারতের অন্যতম সংগঠক মাওলানা আলী আব্বাস ওয়াফা এই অনুষ্ঠানের সঞ্চালনার মাধ্যমে সফলতা এনে দেন। অনুষ্ঠানটি বিভিন্ন চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha