বৃহস্পতিবার ৫ জুন ২০২৫ - ১৩:৫৩
ইসলামি বিপ্লবের রাহবরের বার্ষিক হজ বার্তা 

হজ হলো মুমিনদের আকাঙ্ক্ষা, উদগ্রীব হৃদয়দের উৎসব এবং সৌভাগ্যবানদের জন্য এক আধ্যাত্মিক রসদ।

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, 

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি সৃষ্টিকুলের প্রতিপালক এবং শান্তি ও দরুদ বর্ষিত হোক আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টির প্রতি — হজরত মুহাম্মাদ মোস্তফা (সা.) ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইত, নির্বাচিত সাহাবীগণ এবং কিয়ামত পর্যন্ত তাঁদের অনুসারীদের প্রতি।

হজ হলো মুমিনদের আকাঙ্ক্ষা, উদগ্রীব হৃদয়দের উৎসব এবং সৌভাগ্যবানদের জন্য এক আধ্যাত্মিক রসদ। যদি এই হজ অন্তর্দৃষ্টি ও আত্মিক তাৎপর্য নিয়ে সম্পাদিত হয়, তবে তা শুধু মুসলিম উম্মাহ নয়, বরং সমগ্র মানবজাতির বহু সমস্যার সমাধান দিতে সক্ষম।

হজের সফর কোনো সাধারণ বাণিজ্য, ভ্রমণ বা নানাবিধ উদ্দেশ্যে গমনকারী সফরের মতো নয়; বরং এটি এক জীবন্ত অনুশীলন—সাধারণ জীবন থেকে কাঙ্ক্ষিত ঐক্যবদ্ধ, আল্লাহমুখী জীবনের দিকে হিজরতের প্রশিক্ষণ। এই কাঙ্ক্ষিত জীবন এমন একটি তাওহিদকেন্দ্রিক জীবন, যেখানে:

সত্যের চারপাশে চিরন্তন তাওয়াফ,

কঠিন চূড়ার মধ্যেও অবিরাম সাঈ,

ধূর্ত শয়তানকে পাথর ছোঁড়ার সাহস,

জিকির ও দোয়ার মাধ্যমে ওয়ুকুফ (স্থিতি),

ক্ষুধার্ত, অভাবগ্রস্ত ও যাত্রীদের খাওয়ানোর শিক্ষা,

বর্ণ, জাতি, ভাষা ও ভৌগোলিক পার্থক্য ভুলে সমতা,

সর্বাবস্থায় সেবার জন্য প্রস্তুতি,

আল্লাহর আশ্রয়ে আত্মসমর্পণ,

সত্যের পক্ষে পতাকা উত্তোলনের মনোভাব—এই সবই ঐ জীবনের মৌলিক ও চিরন্তন উপাদান।

হজের বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা এই জীবনের প্রতীকী রূপ বহন করে এবং হাজিদের তা উপলব্ধি করতে ও সে পথে আহ্বান জানায়। এই আহ্বানে সাড়া দেওয়া জরুরি। আমাদের হৃদয় ও অন্তঃচক্ষু উন্মুক্ত রাখা দরকার, শিখতে হবে এবং এই শিক্ষাগুলিকে কাজে লাগানোর জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। প্রত্যেক ব্যক্তি তার সামর্থ্য অনুযায়ী এই পথে এক ধাপ এগোতে পারে। তবে আলেম, চিন্তাবিদ, রাজনীতিক ও সমাজে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দায়িত্ব আরও অনেক বেশি।

আজকের মুসলিম বিশ্ব আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি এই শিক্ষার প্রয়োগের প্রয়োজনে রয়েছে। এটি দ্বিতীয় হজ, যা গাজা এবং পশ্চিম এশিয়ার মর্মান্তিক ঘটনাবলির মাঝে সংঘটিত হচ্ছে। ফিলিস্তিনে দখলদার, অপরাধী ইহুদি গ্যাং এমন এক অমানবিক নিষ্ঠুরতা চালিয়েছে যা কল্পনাকেও হার মানায়।

আজ গাজার শিশু-কিশোররা শুধু বোমা, গুলি ও ক্ষেপণাস্ত্রেই মরছে না, বরং অনাহার ও পিপাসায়ও প্রাণ হারাচ্ছে। তাদের পরিবার, মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজন হারানোর বেদনায় আক্রান্ত পরিবারের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। এই মানবিক বিপর্যয়ের সামনে কে দাঁড়াবে?

নিঃসন্দেহে এই দায়িত্ব সর্বপ্রথম ইসলামি সরকারগুলোর ওপর বর্তায়। এরপর সেই জনগণের ওপর, যারা নিজেদের সরকারকে এ দায়িত্ব পালনে বাধ্য করতে পারে। মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক মতভেদ থাকতে পারে, কিন্তু এই মতভেদ গাজার ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান গ্রহণ ও সবচেয়ে নিপীড়িত মানুষের সহায়তায় প্রতিবন্ধক হওয়া উচিত নয়।

মুসলিম সরকারগুলোকে উচিত—ইহুদি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ইসরায়েলের প্রতি সমস্ত সহায়তার পথ বন্ধ করে দেওয়া এবং তাকে গাজায় নৃশংসতা বন্ধে বাধ্য করা। আমেরিকা এসব অপরাধের সরাসরি অংশীদার। ইসলামি অঞ্চলগুলোতে যারা আমেরিকার প্রভাবে রয়েছে, তাদের উচিত—কুরআনের নির্দেশনা শুনে মজলুমদের পক্ষে দাঁড়ানো এবং আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী আচরণকে বাধা দেওয়া। হজে "বারাআত" বা অন্যায়ের প্রতিবাদ ঘোষণা—এই পথের একটি অংশ।

গাজার জনগণের বিস্ময়কর প্রতিরোধ ফিলিস্তিনকে আজ বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে পরিণত করেছে। এই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে এবং ফিলিস্তিনের নিপীড়িত জাতির পাশে দাঁড়াতে হবে। সাম্রাজ্যবাদীরা ফিলিস্তিনের নাম ও স্মৃতি ধ্বংসের যতই চেষ্টা করুক না কেন, ইসরায়েলি নেতাদের হীন নীতি ও মূর্খতাপূর্ণ আচরণ এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে যে, আজ "ফিলিস্তিন" নামটি আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে উজ্জ্বল এবং ইহুদিবাদ ও তার মিত্রদের প্রতি ঘৃণা চরমে পৌঁছেছে। এটি ইসলামি বিশ্বের জন্য একটি ঐতিহাসিক সুযোগ।

বক্তা ও সমাজ সচেতন ব্যক্তিদের কর্তব্য—মানুষকে জাগানো, তাদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি এবং ফিলিস্তিন প্রশ্নে দাবিকে ব্যাপকভাবে তুলে ধরা। আপনারা সৌভাগ্যবান হাজিরাও হজের আমল চলাকালীন দোয়া ও আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনার সুযোগ হাতছাড়া করবেন না এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করুন—তিনি যেন জালিম ইহুদিদের ও তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে বিজয় দান করেন।

আল্লাহর দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক নবী করিম (সা.), তাঁর পবিত্র আহলে বাইত এবং ইমাম মাহদী (আ.)-এর প্রতি।

সৈয়দ আলী খামেনেয়ী

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha