মঙ্গলবার ১০ জুন ২০২৫ - ১০:২৩
গাদীরের ঘটনা হলো ঐশী ন্যায়ভিত্তিক শাসনের ভিত্তি

গাদীরের ঘটনা ছিল উম্মতের অভিভাবক নির্ধারণের একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় এবং এটি ছিল ঐশী ন্যায়বিচারভিত্তিক শাসনের ভিত্তিপ্রস্তর ও প্রকৃত ইমামতের সূচনা।

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, সারি শহরে অবস্থিত আল-জাহরা (সা.) বিশেষ ধর্মীয় শিক্ষাকেন্দ্রের শিক্ষিকা বাহারে আলীনেজাদ হাউজা নিউজ এজেন্সিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন: গাদীরের গুরুত্ব ও ইসলামী উম্মতের অভিভাবক হিসেবে হজরত আলী (আ.)-কে রাসুলুল্লাহ (সা.) কর্তৃক মনোনয়ন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কারণ একটি সমাজ ইমামত ও বেলায়েত ছাড়া ধ্বংসপ্রাপ্ত হতে বাধ্য। এই ঘটনা প্রমাণ করে ইসলাম সমাজ পরিচালনার ব্যাপারে কতটা গুরুত্ব দেয়, এবং রাসুল (সা.) সরাসরি হস্তক্ষেপ করে এমন একজন ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেন, যিনি অজ্ঞতা ও জাহেলিয়াত থেকে মানবজাতিকে মুক্ত করে জ্ঞান ও পরিচয়ের আলোর দিকে এগিয়ে নিতে পারেন—যা ছিল নবুয়তের মূল উদ্দেশ্যও।

তিনি আরও বলেন: বলা যেতে পারে, গাদীর ও মাবাঈস (নবুয়ত প্রাপ্তির দিন) পরস্পরের সাথে অবিচ্ছিন্নভাবে সংযুক্ত দুটি উৎসব। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নবুয়তই ইসলামের বৈশ্বিক ও চিরস্থায়ী বিপ্লবের মূল ও ভিত্তি এবং গাদীর দিবস তা পূর্ণতা ও ধারাবাহিকতা দেয়। এই দিনে আল্লাহর পক্ষ থেকে খলিফা নির্ধারণ একটি স্বর্গীয় নেয়ামত এবং এর জন্য শুকরিয়া আদায় করা কর্তব্য, কেননা হজরত আলী (আ.) ও তাঁর সন্তানদের বেলায়েতের চেয়ে বড় কোনো নেয়ামত নেই।

তিনি জোর দিয়ে বলেন: আহলে বাইতের (আ.) ইমামতের ওপর বিশ্বাস ছাড়া পূর্ণ তাওহিদের উপলব্ধি সম্ভব নয় এবং নববী জ্ঞান অর্জনও অসম্ভব। ইমামত হল তাওহিদের একটি প্রধান অংশ, যার উত্তর গাদীর দিবসে দেওয়া হয়েছে। সুতরাং ইসলামে শাসনব্যবস্থা কেবল একটি দক্ষ শাসক কাঠামো নয়, বরং এটি হল ইমামত—যেখানে মানুষের পার্থিব জীবন পরিচালনার পাশাপাশি আত্মিক উন্নতি ও উৎকর্ষ নিশ্চিত করা হয়।

এই ধর্মীয় শিক্ষিকা বলেন: শাসনক্ষমতা এমন একজন ব্যক্তির হাতে থাকা উচিত যিনি উচ্চ আধ্যাত্মিক ও নৈতিক গুণাবলি এবং সকল পূর্ণতার গুণে গুণান্বিত, যা সবই হজরত আলী (আ.)-এর সত্তায় বিদ্যমান। ইসলামী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তাঁর কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো: ন্যায়বিচার, নৈতিকতা, তাওহিদ, আল্লাহভিত্তিক কার্যকলাপ, সমাজের সকলের প্রতি দয়া ও স্নেহের দৃষ্টিভঙ্গি, এবং পাপ, অপরাধ ও বিশ্বাসঘাতকতার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান।

তিনি আরও বলেন: গাদীরের ঘটনা এসব গুণাবলির একটি স্বীকৃতি ও প্রমাণ এবং এটি দেখায় যে ইসলামে, রাসুল (সা.)-এর দৃষ্টিকোণ ও ওহির আলোকে, শাসনব্যবস্থা মূল্যবোধনির্ভর এবং অন্য কিছুর ওপর নির্ভরশীল নয়। এটি একটি মৌলিক ইসলামী নীতি।

আলীনেজাদ বলেন: বাস্তবিক অর্থে গাদীরের ঘটনা প্রমাণ করে যে, আজকের মানবজাতির সমস্যাগুলো—যারা বহু সরকার ব্যবস্থা অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে এবং সবকিছু থেকে নিরাশ হয়েছে—শুধুমাত্র ন্যায়বিচারপূর্ণ ও আলবীয় শাসনের মাধ্যমে, অর্থাৎ হজরত আলী (আ.)-এর পথ ও পদ্ধতি অনুসরণ করে সমাধান করা সম্ভব।

তিনি ইসলামী বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতার (আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী) একটি উক্তি উল্লেখ করে বলেন: গাদীর একটি ঐতিহাসিক প্রয়োজন ছিল এবং যদি এটি বাস্তবায়িত হতো, তবে নিশ্চিতভাবে মানবজাতির ইতিহাসের গতি সম্পূর্ণভাবে পাল্টে যেত।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha