বুধবার ১১ জুন ২০২৫ - ১০:৩১
তাশায়্যু (শিয়াবাদ) আমিরুল মুমিনীন (আ.)-এর পূর্বে ছিল, না পরে?

কোরআনের অবতরণকালে এবং নবী করিম (সা.)-এর মাধ্যমে "তাশায়্যু" (শিয়াবাদ) একটি চিন্তাধারাগত মতবাদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, কোরআনের অবতরণকালে এবং নবী করিম (সা.)-এর মাধ্যমে "তাশায়্যু" (শিয়াবাদ) একটি চিন্তাধারাগত মতবাদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। মজার ব্যাপার হলো, এই মতবাদের প্রতি প্রথম ঈমান আনয়নকারী এবং প্রচারক ছিলেন স্বয়ং রাসূল (সা.)। তাঁর পর ফাতিমা যাহরা (সা.), ইমাম আলী (আ.) এবং আহলে বাইতের অন্যান্য সদস্যরা এই মতবাদকে ধারাবাহিকভাবে বহন করে চলেন। পরবর্তীতে কিছু মানুষ এই মাযহাবের অনুসারী হিসেবে “শিয়া” নামে পরিচিত হন।

আয়াতুল্লাহ জাওয়াদী আমলী, তাঁর এক নৈতিক শিক্ষায় "ইসলামের ইতিহাসে তাশায়্যুর অবস্থান" বিষয়ক আলোচনা করেন, যা হাওজার শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে উপস্থাপন করা হয়েছে।

তিনি বলেন: “তাশায়্যু” এমন কোনো বিষয় নয় যা আমিরুল মুমিনীন আলী ইবনে আবি তালিব (আ.)-এর পরে সৃষ্টি হয়েছে; বরং এটি এমন এক সত্য যা রাসূলের নবুওয়তের শুরুতেই আত্মপ্রকাশ করে।

মূল প্রশ্ন হলো: তাশায়্যু কি একটি মতবাদ হিসেবে আমিরুল মুমিনীন (আ.)-এর পরে সৃষ্টি হয়েছে, না তার আগেই ছিল?

উত্তর হলো: এখানে আমাদের দুটি বিষয়ের মধ্যে পার্থক্য করতে হবে:
১. তাশায়্যু একটি মতবাদ (মাযহাব) হিসেবে,
২. শিয়া একটি সামাজিক গোষ্ঠী হিসেবে।

“তাশায়্যু” মতবাদ কোরআনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণভাবে আত্মপ্রকাশ করে। সর্বপ্রথম যিনি এতে ঈমান আনেন, এটি প্রচার করেন ও রক্ষা করেন, তিনি ছিলেন রাসূলুল্লাহ (সা.)।

এরপর হযরত ফাতিমা (সা.), ইমাম আলী (আ.) এবং অন্যান্য আহলে বাইত (আ.) এই মতবাদে ঈমান এনে তা প্রচার করতে থাকেন।

পরবর্তীকালে, যারা ইমাম আলী (আ.)-এর অনুসারী ছিলেন, তারা "শিয়া" নামে পরিচিত হন। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে:
“শিয়া” বলতে যদি একটি সমাজ বা গোষ্ঠী বোঝায়,
তাহলে “তাশায়্যু” একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্বাসগত ও জ্ঞানের ভিত্তিতে গঠিত মতবাদ।

তাশায়্যুর মূলভিত্তি হলো: “আল্লাহর ওলী ও রাসূলের উত্তরসূরি এমন ব্যক্তি হতে হবে, যিনি পূর্ণ মানবীয় গুণসম্পন্ন এবং মাসুম (নিষ্পাপ) হবেন।”

এই মতবাদের মতে, কেবল ইমাম আলী (আ.) ও তাঁর পবিত্র সন্তানরাই খিলাফতের উপযুক্ত, কারণ তাঁরাই নবুয়তের পরিপূর্ণ ধারক এবং মাসুমত্বের বাস্তব নিদর্শন।

অতএব, তাশায়্যু কেবল আহলে বাইতের প্রতি আবেগ বা ভালোবাসা নয়, বরং এটি এমন এক বিশ্বাসব্যবস্থা যা ইমামতের অবস্থানকে নবুয়তের সমকক্ষ এবং তার ধারাবাহিকতা হিসেবে দেখায়।

রাসূল (সা.) নিজেই সর্বপ্রথম আল্লাহর ওহীর প্রতি ঈমান আনেন এবং নিজের নবুয়তের প্রতি তিনি দৃঢ়বিশ্বাসী ছিলেন।

একইভাবে, ইমাম আলী (আ.)-ও ছিলেন সর্বপ্রথম ব্যক্তি যিনি নিজের “ওলায়েত”-এ ঈমান এনেছিলেন এবং নিজের ইলাহি অবস্থানকে উপলব্ধি করেছিলেন।

এই অন্তর্নিহিত বিশ্বাস ও ঈমানই হলো তাশায়্যুর ভিত্তি।

সুতরাং, তাশায়্যুর প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা এবং সর্বপ্রথম ঈমানদার ছিলেন স্বয়ং নবী করিম (সা.), আর তাঁর পরে আহলে বাইত (আ.) হলেন এই মতবাদের প্রকৃত ধারক ও ব্যাখ্যাকারী।

সেই কারণেই, যে কেউ আমিরুল মুমিনীন (আ.)-এর ওলায়েত অস্বীকার করে, বা তাঁকে আল্লাহর পক্ষ থেকে নিযুক্ত খলিফা হিসেবে মেনে না নেয়, সে প্রকৃতপক্ষে রাসূলের রিসালতেও বিশ্বাসী নয়; কেননা, তাশায়্যুর মতে ইমামত হলো ওহি ও নবুয়তের ধারাবাহিকতা এবং পরিপূর্ণ ঈমানের পূর্বশর্ত।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha