হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, বেলায়েত কেবল একটি স্লোগান বা বিশ্বাসগত মতবাদ নয়; বরং এটি একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনধারা।
ব্যক্তিগত জীবনে, বেলায়েত মানে হলো—আমাদের সব অগ্রাধিকার, সিদ্ধান্ত গ্রহণের পদ্ধতি, এমনকি আমাদের ব্যক্তিগত রুচি যেন আহলুল বায়েত (আ.)-এর মানদণ্ড অনুযায়ী গঠিত হয়। অর্থাৎ, জীবনের প্রতিটি দিক—চাকরি নির্বাচন, সম্পর্ক, ভোগ-ব্যবহার, সন্তান লালন-পালন, এবং ধর্মচর্চার ধরন—এসব ক্ষেত্রে আমাদের নিজেদের প্রশ্ন করা উচিত:
"এই পরিস্থিতিতে আমিরুল মোমিনীন (আ.) কী করতেন? তাঁর অবস্থান কী হতো? তিনি কী অনুমোদন করতেন, আর কী প্রত্যাখ্যান করতেন?"
সামাজিক ক্ষেত্রে, বেলায়েত মানে হলো—সবসময় নির্যাতিতদের পাশে দাঁড়ানো, সত্যের পক্ষে কথা বলা, অন্যায় ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে নীরব না থাকা, এবং সেই একই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করা, যার জন্য ইমাম আলী (আ.) রাত্রিযাপন করতেন ও আত্মত্যাগ করতেন।
এটাই হলো সেই সামাজিক দায়িত্ব, যা ওলায়েত প্রতিটি মুসলমানের কাঁধে অর্পণ করে।
বেলায়েতের প্রকৃত পরীক্ষা ঘটে বাস্তব পরিস্থিতিতে—যখন কোনো অধিকার লঙ্ঘিত হয়, যখন রাষ্ট্রীয় সম্পদ অপব্যবহার হয়, বা যখন বৈষম্য দেখা দেয়। যদি এসব পরিস্থিতিতে আমরা চুপ থাকি বা উদাসীন থাকি, তবে সেটা প্রমাণ করে যে আমরা এখনো বেলায়েতের অর্থ সঠিকভাবে বুঝতে পারিনি এবং তা আমাদের অন্তরে গেঁথে যায়নি।
বাস্তব বেলায়েত-অনুগত্য তিনটি মূলনীতিতে সংক্ষেপ করা যায়:
১. ব্যক্তিগত স্বার্থের চেয়ে সত্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া
২. সাময়িক সুবিধার বদলে ন্যায়বিচারকে বেছে নেওয়া
৩. আরম্ভ ও আরামপ্রিয়তার পরিবর্তে দায়িত্ব গ্রহণ করা
এই ত্রয়ীই হজরত আলীর (আ.) জীবনধারাকে সংজ্ঞায়িত করে এবং সকল যুগের জন্য একটি চিরন্তন আদর্শ হিসেবে টিকে থাকে।
কেরমানে গাদীর উৎসব উপলক্ষে কী কী কর্মসূচি ও অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে?
কেরমান শহরজুড়ে ব্যাপক সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও সাধারণ জনগণের অংশগ্রহণে আনন্দানুষ্ঠান, ধর্মীয় বক্তৃতা এবং অতিথিদের আপ্যায়ন করা হবে।
এছাড়াও, এবার দুটি নতুন বিশেষ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে:
১. গাদীর پردهخوانی (নাট্যধর্মী উপস্থাপনা) — যা গাদীরের মর্মার্থকে একটি আকর্ষণীয় ও নাটকীয় উপায়ে উপস্থাপন করবে।
২. গাদীর ঘটনার পুনঃনির্মাণ (Reenactment) — যা "তকিয়া হজরত আবুল ফজল (আ.)" সংগঠনের উদ্যোগে কেলার দোখতার মহল্লায় অনুষ্ঠিত হবে।
এছাড়াও "গাদীর আত'আম (ভোজন কর্মসূচি)" নামক একটি উদ্যোগের মাধ্যমে ৩০,০০০-র বেশি মানুষের আপ্যায়নের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
এবারের প্রধান আকর্ষণ হলো—
"গাদীরের শোভাযাত্রা ও কিলোমিটার-ব্যাপী পার্টি" যা শহরের "মেয়দান-ই শোরা" থেকে শুরু হয়ে "মেয়দান-ই আশুরা" পর্যন্ত "শহীদ আব্বাসপুর বুলেভার্ড"-এ অনুষ্ঠিত হবে। এই রাস্তাজুড়ে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক, সেবামূলক এবং শিশু ও পরিবারের জন্য আলাদা স্টল ও বুথ স্থাপন করা হবে, যেখানে নাগরিকদের নানা ধরনের সেবা প্রদান করা হবে।
এছাড়াও, শহরের ৫০টিরও বেশি মসজিদে "দাহায়ে ওলায়েত" বা "বেলায়েতের দশক" উপলক্ষে উৎসব ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। এই সব কিছুই ধর্মীয় সংগঠন এবং জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে আয়োজিত হবে।
এই কয়েক দিনে কেরমান শহর যেন "বেলায়েতের পোশাক" পরে নিয়েছে এবং গাদীরের সুমিষ্ট সুবাস তার গলি-ঘুপচিতে ছড়িয়ে পড়েছে।
আপনার কমেন্ট