হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, গাদীরের বার্তা ব্যাখ্যা ও প্রচারের ক্ষেত্রে মুসলমানদের দায়িত্ব কেবল উৎসব উদযাপন ও মিষ্টি বিতরণে সীমাবদ্ধ নয়। আমাদের মূল দায়িত্ব হলো—গাদীরকে একটি বিশ্বাসগত ও সভ্যতাগত মূলনীতি হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া, যা নবী করিম (সা.)-এর পর আল্লাহর পথনির্দেশনার ধারাবাহিকতা বজায় রাখে। গাদীর কেবল একটি ব্যক্তিগত বা ঐতিহাসিক ঘটনা নয়, বরং একটি ঐশী প্রকল্প যা ইসলামী উম্মতের জন্য পথনির্দেশনার ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করে।
মুসলমানদের, বিশেষ করে তালেবে ইলম (ধর্ম শিক্ষার্থী), আলেম ও জ্ঞানী ব্যক্তিদের ওপর দুটি গুরুতর দায়িত্ব বর্তায়:
১. গাদীরের বার্তার গভীর উপলব্ধি ও সঠিক ব্যাখ্যা দেওয়া—যা কেবল মার্সিয়া, মাদাহি (ধর্মীয় আবেগমূলক গান) বা প্রথাগত অনুষ্ঠানের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে, تحلیلی (বিশ্লেষণমূলক) ও معرفتی (জ্ঞানভিত্তিক) দৃষ্টিভঙ্গিতে সম্পন্ন হতে হবে।
২. এই বার্তার প্রচার বিভিন্ন উপায়ে করতে হবে, যেমন—রচনাবলি, খুতবা, গণমাধ্যম এবং এমনকি আমাদের নিজের ব্যবহারিক আচরণের মাধ্যমে, যাতে বোঝা যায় ওলায়েত বা নেতৃত্ব মানে হলো—ন্যায়বিচারের প্রতি প্রতিশ্রুতি, যুক্তিবোধ ও বিশুদ্ধ ধর্মীয়তা।
যদি আমরা গাদীরের বিশুদ্ধ বার্তাটি সঠিকভাবে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে পারি, তাহলে ইসলামী বিশ্বকে ঘিরে থাকা বহু ঐতিহাসিক সন্দেহ ও চিন্তাগত বিভ্রান্তি দূর করা সম্ভব হবে। তবে এটি একমাত্র তখনই বাস্তবায়নযোগ্য যখন আমরা সম্মিলিতভাবে জ্ঞানচর্চা ও বাস্তবকর্মের প্রতি আন্তরিক চেষ্টা চালিয়ে যাবো। এটি বাস্তবায়নের জন্য মহান প্রত্যয়ের প্রয়োজন।
বর্তমান বিশ্বের প্রেক্ষাপটে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে কীভাবে গাদীরের বার্তা—দায়িত্বশীলতা, ন্যায়বিচার এবং নেতৃত্বের প্রতি নিষ্ঠা—পৌঁছে দেওয়া সম্ভব?
আজকের জগতে কেবল ইতিহাস বর্ণনা বা রেওয়ায়েত (বর্ণনা) যথেষ্ট নয়; গাদীরের মূল বার্তাকে ইতিহাসের কাঠামো থেকে বের করে এনে, বর্তমান যুগের প্রয়োজন অনুযায়ী উপস্থাপন করতে হবে।
গাদীরের বার্তাকে এভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে:
১. বেলায়েত বা নেতৃত্বের প্রতি নিষ্ঠা মানে হলো—সত্য ও ন্যায়ের প্রতি অটল থাকা, এমনকি যদি তা বড় মূল্য দিতে হয়।
২. ন্যায়বিচারপ্রবণতা মানে হলো—হজরত আলীর মতো বৈষম্য, দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নেওয়া।
৩. দায়িত্ব গ্রহণ মানে হলো—যখন জ্ঞান ও যোগ্যতা থাকে, তখন সমাজের নেতৃত্বের দায়িত্ব গ্রহণ করা; যেমন হজরত আলী (আ.) রাতের বেলায় খেজুরবাগানে কাজ করতেন এবং দিনে এতিমদের মধ্যে রুটি বিতরণ করতেন।
আজকের প্রজন্ম সত্য, স্বচ্ছতা ও ব্যবহারিক আদর্শ অনুসরণ করতে চায়। যদি আমরা গাদীরকে কেবল মাদাহির মাধ্যমে নয়, বরং হজরত আলীর সামাজিক ও নৈতিক আদর্শ হিসেবে তুলে ধরি, তবে নিশ্চিতভাবেই তরুণ সমাজের মনোযোগ ও গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করা সম্ভব।
মিডিয়া, শিল্প, অনলাইন মাধ্যম, এমনকি আমাদের (তালেবে ইলম ও দাঈদের) ব্যবহারিক আচরণ—সবকিছুই এই তিনটি মূলনীতির প্রতিফলন হওয়া উচিত: সত্যনিষ্ঠতা, ন্যায়বিচারপ্রবণতা এবং দায়িত্বশীলতা।
এইভাবেই গাদীর কেবল একটি ঐতিহাসিক ঘটনা না থেকে, একটি জীবনচর্চার ধারা (Lifestyle)-তে রূপান্তরিত হবে।
আপনার কমেন্ট