হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, কেরমান শহরের ইসলামি প্রচার সংস্থার প্রধান হুজ্জাতুল ইসলাম হাসানি হাউজা নিউজ -এর এক প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপে গাদীর ঈদ উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানিয়ে এ ঈদের গুরুত্ব ও ছাত্রদের দায়িত্ব সম্পর্কে মতামত ব্যক্ত করেন। মূল বক্তব্য নিচে উপস্থাপন করা হলো:
গাদীর ঈদের গুরুত্ব কী এবং কেন আহলে বাইত (আ.) এটি নিয়ে এত গুরুত্ব দিয়েছেন?
গাদীর ঈদ কেবল একটি ঐতিহাসিক অনুষ্ঠান নয়, বরং এটি ছিল নবী করিম (সা.)-এর রিসালতের ধারাবাহিকতার এক গুরুত্বপূর্ণ বাঁক। এই দিনেই হজরত আলী (আ.)-এর বেলায়েতকে নবুয়ত ও ইমামতের মধ্যে সংযোগকারী কড়ি হিসেবে আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রকাশ্যে ঘোষণা করা হয়।
আহলে বাইত (আ.) গাদীরকে গুরুত্ব দিয়েছেন কারণ এটি নবী (সা.)-এর পর ইসলামের মূল ও বিশুদ্ধতা সংরক্ষণের গ্যারান্টি। যদি এই বেলায়েতের অঙ্গীকারকে গুরুত্ব সহকারে নেওয়া হতো, তাহলে ইসলামী উম্মত পরবর্তীতে বিভ্রান্তির শিকার হতো না।
মূলত, গাদীর ছিল না কেবল একজন ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়া; বরং এটি ছিল একটি পথ নির্ধারণ—একটি পথ যা ইমামতের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করে, যাতে দ্বীনের প্রকৃত রূপ অক্ষুণ্ণ থাকে।
গাদীর খুম হাদীসটি কি সুন্নি সূত্রেও বর্ণিত হয়েছে? তাহলে কেন শিয়াদের ব্যাখ্যার সাথে পার্থক্য?
হ্যাঁ, গাদীর হাদীস সুন্নি মুসলিমদের বিশ্বাসযোগ্য গ্রন্থসমূহেও বর্ণিত হয়েছে, যেমন: মুসনাদ আহমদ ইবনে হাম্বাল, সহীহ তিরমিযি, আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া (ইবনে কাসির), এবং তারিখে তাবারি। বিখ্যাত বাক্য "من كنت مولاه فهذا علي مولاه" (আমি যার মাওলা, এই আলীও তার মাওলা) — বহু সূত্রে এই গ্রন্থগুলোতে বর্ণিত হয়েছে।
তবে তফসিরে পার্থক্য দেখা দেয় কারণ সুন্নি মত অনুযায়ী "মাওলা" শব্দটির অর্থ "বন্ধু" বা "সহায়ক", কিন্তু শিয়া মত অনুযায়ী তা বোঝায় "নেতা" বা "উত্তরসূরি"। যদিও প্রেক্ষাপট, সময়, ভাষা ও পরে রাসুল (সা.)-এর বাইআত গ্রহণের ঘটনাসমূহ স্পষ্ট করে দেয় যে বিষয়টি কেবল ভালোবাসার সীমায় সীমাবদ্ধ ছিল না।
আসলে এই তফসিরগত পার্থক্য মূলত ঐতিহাসিক ও বিশ্বাসগত ব্যাখ্যার ভিন্নতার কারণে, না যে হাদীসটির বর্ণনা নিয়ে মতভেদ আছে। শিয়ারা স্পষ্টভাবে বিশ্বাস করে যে "মাওলা" শব্দটি এখানে নেতৃত্ব ও ওলায়েতের স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয়।
কেন রাসুলুল্লাহ (সা.) গাদীর খুমের সেই নির্দিষ্ট স্থান ও সময়ে হজরত আলী (আ.)-এর বেলায়েত ঘোষণা করেন?
এই প্রশ্নটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এর উত্তর পরিকল্পিত ছিল। গাদীর খুম ছিল মক্কা ও মদীনার মধ্যবর্তী একটি জায়গা, যেখানে হজের পরে হাজিরা তাদের নিজ নিজ শহরের দিকে চলে যেতেন। রাসুল (সা.) সেখানে পুরো কাফেলাকে থামতে বলেন যেন সবাই—চলমান বা পিছিয়ে থাকা সবাই—একত্রিত হন।
এই ঘোষণার স্থান হিসেবে গাদীর খুমকে বেছে নেওয়ার কারণ হলো: এটি ছিল রাসুল (সা.)-এর শেষ হজ এবং এটিই ছিল বিশ্বজুড়ে একটি সর্বজনীন বার্তা পৌঁছানোর উপযুক্ত সুযোগ। যদি হজরত আলী (আ.)-কে কেবল মদীনায় মনোনয়ন দেওয়া হতো, তাহলে অনেকেই বলত, এটি শুধুই ঘনিষ্ঠদের জন্য। কিন্তু গাদীরের প্রান্তরে, হজের পরে, এক লক্ষাধিক মানুষের সামনে, স্পষ্টভাবে ও জোর দিয়ে রাসুল (সা.) হজরত আলী (আ.)-এর নেতৃত্বের ঘোষণা দেন, যেন কেউ বলতে না পারে, "আমি শুনিনি" বা "বিষয়টি গুরুতর ছিল না।"
সারাংশে, গাদীর মানে এমন এক নিযুক্তির ঘোষণা, যা এমন সময়ে ও স্থানে দেওয়া হয়েছে, যেখানে অস্বীকার করার আর কোনো অজুহাত অবশিষ্ট থাকে না।
আপনার কমেন্ট