হাওজা নিউজ এজেন্সি: ইসলামী বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী এক বক্তব্যে ইরানের সংসদ (মজলিসে শূরা)-এর প্রকৃত মর্যাদা ও জাতীয় ঐক্যের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশের সংসদগুলোর মধ্যে আইনগত মর্যাদা হয়তো একরকম, কিন্তু তাদের প্রকৃত মূল্যায়ন হয় উদ্দেশ্য, পথচলা ও অবস্থানের ভিত্তিতে। এই দিক থেকে ইরানের সংসদের অবস্থান বিশ্বে অনন্য, কেননা এটি ধর্মীয় মূল্যবোধ, ন্যায়বিচার, দুর্নীতিমুক্ত চিন্তাধারা এবং দুর্বলের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নেওয়ার মাধ্যমে গঠিত।
তিনি সংসদকে তাকওয়ার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত একটি পবিত্র স্থান হিসেবে উল্লেখ করেন, যেখানে প্রতিটি চিন্তা, আইন প্রণয়ন ও কর্মকাণ্ড ইবাদতের শামিল হতে পারে যদি তা দায়িত্বশীলতার সঙ্গে সম্পাদিত হয়। তবে এই মর্যাদা শুধু নামে-মাত্র নয়— তা টিকিয়ে রাখতে হলে সংসদের সদস্যদেরকে কিছু শর্ত ও দায়িত্ব পালনে অঙ্গীকারাবদ্ধ থাকতে হবে। তারা যেন আল্লাহর সামনে নিজেদের জবাবদিহিমূলক মনে করে, দেশের স্বার্থকে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীগত স্বার্থের ঊর্ধ্বে রাখে এবং সংসদকে মতানৈক্যের রণক্ষেত্র না বানিয়ে বরং ঐক্য ও স্থিতিশীলতার প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।
আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী এ সময় সংসদ সদস্যদের মনে করিয়ে দেন যে, তাদের কথাবার্তা যেন জনগণের মধ্যে আশাবাদ ও স্থিরতা সৃষ্টি করে, যেন তা জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত না হয়। তিনি বলেন, পূর্বে সংসদে মতপার্থক্য সংঘর্ষে পরিণত হতো, কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি শান্ত ও সমন্বিত। তিনি আরও বলেন, সংসদ সদস্যদের কথা ও অবস্থান যেন এমন হয় যা দৃঢ়তা, নীতিগত অটলতা ও জাতীয় সম্মিলিত মনোভাবের প্রতিফলন ঘটায়।
তিনি বিশেষভাবে জাতীয় ঐক্যের উপর গুরুত্বারোপ করেন এবং বলেন, বর্তমানে রাজনৈতিক বা মতের পার্থক্যগুলো যেন প্রকাশিত হয় সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে, সংঘাতের রূপ না নেয়। দেশের মৌলিক বিষয়গুলোতে যেন একটি ঐক্যবদ্ধ কণ্ঠস্বর শোনা যায়। তিনি সংসদ ও সরকারের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সমন্বয়ের প্রশংসা করেন এবং অনুরোধ জানান যে, সরকারকে অকারণে প্রশ্ন ও ডাকে ব্যস্ত না রেখে প্রয়োজনীয় ও গঠনমূলক নজরদারিতে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত।
আইন প্রণয়ন ও বাজেটের ক্ষেত্রে তিনি বাস্তবতা ও অর্থনৈতিক কাঠামোর ভারসাম্য রক্ষার আহ্বান জানান। তিনি সংসদের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়াতে এবং ইনকিলাবি চেতনা বজায় রেখে সাহস, যুক্তি ও নৈতিকতার আলোকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরামর্শ দেন। ইনকিলাবি হওয়া মানে শুধুই স্লোগান নয়— এটি হল উদ্দেশ্যনিষ্ঠ, সদাচারী এবং বাস্তবভিত্তিক পথচলা।
সর্বশেষে, সংসদের স্পিকার ড. মোহাম্মদ বাকের কালিবাফ সংসদের গত এক বছরের কর্মকাণ্ড ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরেন। তিনি বাজারব্যবস্থাপনা, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নয়ন, আইনের সংস্কার এবং জনগণের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগকে সংসদের অগ্রাধিকার হিসেবে উল্লেখ করেন। এই সব বিষয় একত্রে ইঙ্গিত দেয় যে, সংসদের প্রকৃত মর্যাদা ও শক্তিমত্তা রক্ষার জন্য দায়িত্বশীলতা, ঐক্য ও নীতিনিষ্ঠতা অপরিহার্য।
আপনার কমেন্ট