বুধবার ১১ জুন ২০২৫ - ১৬:৫০
আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ীর হজ বার্তা ৫০টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে

ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ীর হজ উপলক্ষে প্রদত্ত বার্তা বিশ্বের মুসলমানদের কাছে পৌঁছে দিতে এটি ৫০টি ভাষায় অনূদিত ও প্রকাশ করা হয়েছে।

হাওজা নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, হজ ও যিয়ারতের জন্য নিয়োজিত ইরানে সর্বোচ্চ নেতার প্রতিনিধিত্বকারী দপ্তরের উদ্যোগে এই গুরুত্বপূর্ণ বার্তাটি অনুবাদ করা হয়েছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ভাষাবিদ ও অনুবাদকরা এতে অংশগ্রহণ করেন।

বার্তাটিতে হজের আধ্যাত্মিক গুরুত্ব, মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা এবং ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি অবিচার ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার আহ্বান উঠে এসেছে। মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর সঙ্গে কার্যকর যোগাযোগ গড়ে তুলতে এবং বার্তার সার্বজনীন গুরুত্ব তুলে ধরতেই এই বহু-ভাষিক অনুবাদ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

অনূদিত ভাষার তালিকায় রয়েছে:
আরবি, ইংরেজি, ফরাসি, উর্দু, রুশ, আজারি (লাতিন ও সিরিলিক), মালয়, হিন্দি, জার্মান, হাউসা, বাংলা, চীনা, ইতালিয়ান, আলবেনীয়, উজবেক, হিব্রু, জাপানি, কাজাখ, তাজিক, তালিশি, তুর্কমেন, সিরিয়ানি, দারি, আর্মেনিয়ান, সোয়াহিলি, ইন্দোনেশিয়ান, থাই, কুর্দি (সোরানি ও কিরমানজি), মিয়ানমারি, ফিলিপিনো, বসনিয়ান, কোরিয়ান, সুইডিশ, সার্বিয়ান, জর্জিয়ান, গুজরাটি, কোসোভিয়ান, কিরগিজ, ফুলানি, সিন্ধি, স্প্যানিশ, নরওয়েজিয়ান, ডাচ, পশতু, তুর্কি (ইস্তানবুলি), ও পর্তুগিজ।

বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি জগতসমূহের প্রতিপালক। দুরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক আল্লাহর প্রিয় রাসুল হযরত মুহাম্মাদ (সা.), তাঁর পবিত্র আহলে বাইত, মনোনীত সাহাবীগণ ও তাঁদের অনুসারীদের প্রতি—যাঁরা কিয়ামত পর্যন্ত ন্যায় ও সত্যের পথে চলবেন।

হজ—বিশ্বাসীদের আরাধ্য কামনা, আশাবাদীদের উৎসব এবং সৌভাগ্যবানদের এক মহাসন্তুষ্টির সফর। যদি হজের অন্তর্নিহিত রহস্য ও তাৎপর্য উপলব্ধি করা যায়, তবে তা কেবল মুসলিম উম্মাহ নয়, বরং সমগ্র মানবজাতির বড় বড় ব্যাধির প্রতিকারে পরিণত হতে পারে।

হজের সফর সাধারণ কোনো ভ্রমণ নয়—যেমনটা হয় ব্যবসা, ভ্রমণ বা অন্যান্য পার্থিব উদ্দেশ্যে। হজ হলো এক জীবনের পাঠ—এক জীবন থেকে আরেক জীবনের দিকে হিজরত, যেখানে দৈনন্দিন অভ্যাস ছাড়িয়ে গিয়ে এক মহত্তর জীবনধারার সন্ধান করা হয়।

এই জীবনধারা হচ্ছে তাওহিদভিত্তিক জীবন—যেখানে প্রতিটি কাজ আল্লাহকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। এই জীবনে থাকে:

তাওয়াফ—অর্থাৎ সর্বদা আল্লাহর চারপাশে ঘুর্ণন

সাঈ—কঠিন পথ অতিক্রমে অবিচল চেষ্টা

রমি জামারাত—শয়তানকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেওয়া

আরাফাতে অবস্থান—আল্লাহর স্মরণ ও আত্মসমর্পণের নাম

মিসকিনকে খাওয়ানো, পথিকের সেবা

রঙ, জাতি ও ভাষার পার্থক্য ভুলে সাম্যচেতনায় জীবনযাপন

সর্বাবস্থায় আল্লাহর শরণ নেয়া এবং সত্যের পক্ষে দাঁড়ানো

হজ এই মহাজীবনের প্রতীকী অনুশীলন। হজ পালনকারী যেন তা উপলব্ধি করে, গ্রহণ করে ও জীবনে বাস্তবায়নের প্রস্তুতি নেয়।

এই আহ্বান আমাদের শোনা উচিত। আমাদের হৃদয়, চক্ষু—ভৌতিক ও আত্মিক—দ্বয়কে খুলে দিতে হবে। প্রতিটি মুসলমানের ক্ষমতা অনুযায়ী এই পথে অগ্রসর হওয়া জরুরি। তবে আলেম, চিন্তাবিদ, রাজনীতিক এবং সামাজিক নেতৃস্থানীয়দের দায়িত্ব আরও বেশি।

ফিলিস্তিন ও গাজার বর্তমান প্রেক্ষাপটে বার্তার তাৎপর্য

এই বছর হজের মৌসুম এমন সময় এসেছে, যখন দ্বিতীয়বারের মতো গাজা ও পশ্চিম এশিয়ায় ভয়াবহ গণহত্যা চলছে।
ইহুদিবাদী দখলদার ও অপরাধী শাসকগোষ্ঠী আজ চরম নিষ্ঠুরতা এবং ঘৃণ্য অপরাধের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি জাতিকে নির্মূল করার পথে ধাবিত হয়েছে।
শুধু বোমা, গুলি বা ক্ষেপণাস্ত্র নয়—আজ তারা ক্ষুধা ও পিপাসায় শিশুদের হত্যা করছে। প্রতিদিন পরিবারগুলো সন্তান, বাবা, মা ও স্বজন হারাচ্ছে।

কে এই বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে?

নিঃসন্দেহে প্রথম দায়িত্ব মুসলিম রাষ্ট্রসমূহের—এবং তাদের জনগণের দায়িত্ব হলো এসব রাষ্ট্রকে জবাবদিহির আওতায় আনা।

হ্যাঁ, মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর মাঝে মতবিরোধ থাকতে পারে—কিন্তু গাজা ইস্যুতে, এই নিপীড়িত মানবগোষ্ঠীর পক্ষে দাঁড়ানোতে, তাদের উচিত ঐক্যবদ্ধ হওয়া।
তাদের উচিত, ইসরায়েলি দখলদার শক্তিকে সবধরনের সহায়তা বন্ধ করা এবং গাজায় এই অপরাধযজ্ঞ রুখে দেওয়া।

আমেরিকা এই দখলদার অপরাধের সরাসরি অংশীদার।
এই অঞ্চলে এবং অন্যান্য ইসলামী ভূমিতে আমেরিকার যেসব মিত্র রয়েছে, তাদের উচিত কোরআনের আহ্বানে সাড়া দেওয়া—মজলুমদের পক্ষে দাঁড়ানো। তারা যেন এই ঔদ্ধত্যপূর্ণ রাষ্ট্রকে এই বর্বরতা থামাতে বাধ্য করে।

হজের ‘বারাআত’ (ত্যাজ বা মুশরিকদের বিরুদ্ধে অবস্থান) এর অনুষ্ঠান এই পথে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ

ফিলিস্তিন ইস্যু: এক নতুন সুযোগ

গাজার জনগণের ঐতিহাসিক ও বিস্ময়কর প্রতিরোধ আজ ফিলিস্তিনকে পুরো মুসলিম বিশ্ব এবং সকল স্বাধীন মানুষের দৃষ্টির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছে।

অহংকারী শক্তিগুলোর ইচ্ছা ছিল—ফিলিস্তিন ভুলে যাক বিশ্ব। কিন্তু ইসরায়েলি নেতাদের নিষ্ঠুর চরিত্র ও নির্বোধ নীতির কারণে আজ ফিলিস্তিনের নাম আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি উজ্জ্বল,
আর ইসরায়েল ও তার মিত্রদের বিরুদ্ধে মানুষের ঘৃণা আগে যেকোনো সময়ের চেয়ে তীব্র। এই মুহূর্তটি মুসলিম উম্মাহর জন্য এক বড় সুযোগ।

জনগণের দায়িত্ব ও হাজিদের কর্তব্য

সমাজের বুদ্ধিজীবী, বক্তা ও গণমাধ্যমের দায়িত্ব হলো—মানুষকে সচেতন করা, ফিলিস্তিনের পক্ষে আন্দোলনকে ছড়িয়ে দেওয়া।

প্রিয় হাজিগণ!
হজে তোমাদের দোয়া, তোমাদের কান্না, তোমাদের হৃদয় থেকে বের হওয়া আহ্বান—এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে মহান আল্লাহর সাহায্য চাওয়ার এক দুর্লভ সুযোগ।
আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করো—এই দখলদার ইসরায়েল ও তার মিত্রদের যেন চূড়ান্ত পরাজয় ঘটে।

আল্লাহর শান্তি ও দরুদ বর্ষিত হোক আমাদের নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের প্রতি।
সালাম ও দোয়া বর্ষিত হোক ইমাম মাহদী (আ.ফা.) এর প্রতি—যাঁর আগমন প্রত্যাশিত।

والسّلام‌ علیکم ورحمة‌اللّه‌ وبرکاته
সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী
১৪০৪/৩/৯ হিজরি শামসী (৩০ মে ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ)

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha