শুক্রবার ১৩ জুন ২০২৫ - ০৮:৪২
আইএইএ পশ্চিমাদের রাজনীতির হাতিয়ার: তেহরানের প্রতিক্রিয়া

ইরানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (IAEA) বোর্ড অব গভর্নরসের আজ পাস হওয়া প্রস্তাবটি কোনো কারিগরি পদক্ষেপ নয়, বরং এটি সংস্থাটির নিরপেক্ষ পথ থেকে বিচ্যুত হওয়ার স্পষ্ট ইঙ্গিত।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) তিনটি ইউরোপীয় দেশ — ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও জার্মানি — এবং যুক্তরাষ্ট্রের সমন্বয়ে প্রস্তাবিত খসড়া প্রস্তাবটি আইএইএর বোর্ড অব গভর্নরসের এক অধিবেশনে পাস হয়।

১৯টি পক্ষে, ১১টি পক্ষ অব্যাহতি এবং ৩টি বিপক্ষে ভোটে গৃহীত এই প্রস্তাবে ইরানের বিরুদ্ধে সংস্থার সুরক্ষা প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে, যদিও এতে ইরানের দীর্ঘদিনের ও বিস্তৃত সহযোগিতার কোনো উল্লেখ করা হয়নি।

এই প্রস্তাবটি এমন কিছু রাজনৈতিক অভিযোগ পুনরাবৃত্তি করে, যেগুলো মূলত কথিত জাল নথির ভিত্তিতে গঠিত — যেগুলো সরবরাহ করেছে ইসরায়েলি প্রশাসন। এতে দাবি করা হয়েছে, ২০১৯ সাল থেকে ইরান আইএইএর সঙ্গে কিছু স্থানে অঘোষিত পারমাণবিক উপকরণ ও কার্যক্রম সম্পর্কিত বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ ও সময়োপযোগী সহযোগিতা করেনি।

এ বিষয়ে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পারমাণবিক শক্তি সংস্থা এক যৌথ বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্র এবং তিন ইউরোপীয় দেশকে অভিযুক্ত করেছে—আন্তর্জাতিক কাঠামো ও আইনের ভিত্তি উপেক্ষা করে রাজনৈতিক লক্ষ্য সাধনের জন্য তারা আন্তর্জাতিক মঞ্চকে অপব্যবহার করছে। বিবৃতিতে বলা হয়, ইরানও উপযুক্ত প্রতিক্রিয়া দিতে বাধ্য হবে, এবং সে প্রতিক্রিয়া আন্তর্জাতিক আইন ও ইরানের বৈধ অধিকারের মধ্যে থাকবে।

এই প্রেক্ষাপটে, ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থা ঘোষণা করেছে যে, সংস্থার প্রধানের নির্দেশে একটি নতুন সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র নিরাপদ স্থানে স্থাপন করা হচ্ছে। এছাড়াও, শাহিদ আলিমোহাম্মাদি (ফোরদো) সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রে ব্যবহৃত IR-1 সেন্ট্রিফিউজ মেশিনগুলোর পরিবর্তে উন্নত IR-6 মেশিন স্থাপন করা হবে। এই পদক্ষেপগুলো একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রসূত প্রস্তাবের প্রতি কারিগরি ও আইনি জবাব।

ইরানের সব প্রতিক্রিয়া আন্তর্জাতিক ও আইনি কাঠামোর মধ্যেই থাকবে বলে মনে হচ্ছে, তবে তেহরান তার পারমাণবিক অধিকার এবং জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় দৃঢ় থাকবে। কোনো ধরনের উত্তেজনা বা অস্থিতিশীলতার জন্য স্পষ্টভাবে দায়ী থাকবে প্রস্তাবটি পাস করানো রাষ্ট্রগুলো।

এ পরিস্থিতিতে গণমাধ্যম ও বিশ্লেষকরা কয়েকটি সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করছেন — এর মধ্যে রয়েছে আইএইএর সঙ্গে স্বেচ্ছামূলক অতিরিক্ত প্রোটোকলের বাস্তবায়ন পুনর্মূল্যায়ন, পরিদর্শনে সহযোগিতা কমিয়ে আনা, এমনকি চূড়ান্ত পর্যায়ে এনপিটি (পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি) থেকে সরে যাওয়ার চিন্তাও।

এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সংস্থাটিকে যত দ্রুত সম্ভব তার মূল ম্যান্ডেটে — অর্থাৎ আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী কারিগরি ও নিরপেক্ষ তদারকি — ফিরে যাওয়া উচিত। রাজনৈতিক পথে ঢুকে পড়লে সংস্থার পেশাগত দক্ষতা দুর্বল হবে এবং ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ব্যবস্থায় এর ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে।

আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় আইএইএর গঠনমূলক ও গ্রহণযোগ্য ভূমিকা বজায় রাখতে হলে পেশাদার নীতিমালা, নিরপেক্ষতা ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত অবস্থান বজায় রাখা জরুরি, বিশেষত ইরানের মতো বিষয়ে।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha