হাওজা নিউজ এজেন্সি:একটি রাজনৈতিক রঙযুক্ত পদক্ষেপ হিসেবে বৃহস্পতিবার আইএইএর বোর্ড অব গভর্নরস একটি প্রস্তাব গ্রহণ করে, যেখানে ইরানের বিরুদ্ধে তাদের সুরক্ষা বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলা হয়েছে। এ প্রস্তাব পাশ হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তেহরান তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায়—পারমাণবিক কর্মসূচি সম্প্রসারণের ঘোষণা, প্রস্তাবটিকে পশ্চিমা ষড়যন্ত্র আখ্যা এবং এনপিটি (পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি) অনুযায়ী শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারের অধিকার পুনর্ব্যক্ত করে।
জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থা আইএইএর ৩৫ সদস্যের বোর্ড প্রায় দুই দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো ইরানকে পারমাণবিক অ-প্রসারণ বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত করে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ‘ট্রয়িকা’—ফ্রান্স, জার্মানি এবং যুক্তরাজ্যের প্রস্তাবে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচি: পশ্চিমা অপব্যাখ্যা
দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে ইরান বারবার বলেছে যে, তার পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণভাবে শান্তিপূর্ণ। এনপিটি-তে স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে ইরান বেসামরিক উদ্দেশ্যে—বিশেষ করে জ্বালানি উৎপাদন ও চিকিৎসা গবেষণার জন্য—ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার সার্বভৌম অধিকার রাখে।
ইরান দীর্ঘদিন ধরে তার পারমাণবিক স্থাপনাগুলো আইএইএর পরিদর্শকদের জন্য উন্মুক্ত রেখেছে। পরিদর্শন, নজরদারি ক্যামেরা, এবং স্বচ্ছতা বৃদ্ধির মতো পদক্ষেপ—বিশেষ করে বর্তমানে স্থগিত হওয়া জেসিপিওএ (JCPOA) চুক্তির অধীনে—ইরান প্রায়ই আইনগত বাধ্যবাধকতার বাইরে গিয়েও গ্রহণ করেছে।
তবুও, ইরান অভিযোগ করে যে, পশ্চিমা দেশগুলো তার সহযোগিতার ইতিহাস উপেক্ষা করে একটি নেতিবাচক চিত্র তুলে ধরছে এবং প্রযুক্তিগত মতানৈক্যকে ইচ্ছাকৃত বাধা হিসেবে উপস্থাপন করছে।
পশ্চিমা গণমাধ্যমে সাম্প্রতিক রিপোর্টিং সত্ত্বেও, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি একান্তই শান্তিপূর্ণ রয়ে গেছে বলে তেহরান দাবি করে। অস্ত্র উন্নয়নের কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ নেই এবং ইরান আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণের অধীনে তার অধিকার প্রয়োগ করছে।
আইএইএ'র প্রস্তাব: কারিগরি লেবেলে রাজনৈতিক দলিল
১২ জুনের প্রস্তাব, যা যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানি এবং যুক্তরাজ্য উত্থাপন ও সমর্থন করেছে, দাবি করে যে ইরান কিছু অঘোষিত স্থানে পাওয়া পারমাণবিক উপকরণের বিষয়ে বিশ্বাসযোগ্য ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। যদিও এসব অভিযোগ বহু বছর আগের, সেগুলোকে ভিত্তি করে ইরানকে স্বচ্ছতার অভাবে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
তেহরান অবশ্য এই প্রস্তাবকে একটি কারিগরি বিষয়ের রাজনৈতিকীকরণের আরেকটি উদাহরণ হিসেবে দেখছে। ইরানি কর্মকর্তাদের মতে, আইএইএকে রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে, বিশেষ করে যখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা প্রক্রিয়াধীন।
ইরানের প্রতিক্রিয়া: দ্রুত ও বিস্ময়কর
আইএইএর প্রস্তাব গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গেই ইরান জোরালো পাল্টা পদক্ষেপের ঘোষণা দেয়। ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (AEOI) দুটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের কথা জানায়:
নতাঞ্জ ও ফোরদোর পাশাপাশি তৃতীয় একটি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র নির্মাণ।
ফোরদো স্থাপনায় উন্নত প্রজন্মের IR-6 সেন্ট্রিফিউজ স্থাপন, যা সমৃদ্ধকরণ ক্ষমতা বাড়াবে।
ইরানি কর্মকর্তাদের প্রতিক্রিয়া
ইরানি নেতৃত্ব এ প্রস্তাবকে সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক ও একপাক্ষিক আখ্যা দিয়ে, এটিকে আন্তর্জাতিক আইন ও ন্যায়পরায়ণতা বিরোধী বলে অভিহিত করেছে। তাদের মতে, এমন পদক্ষেপ পারমাণবিক চুক্তির ভবিষ্যতকে আরও অনিশ্চিত করে তুলবে এবং আন্তর্জাতিক তদারকি ব্যবস্থার নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে।
আপনার কমেন্ট