রবিবার ১৫ জুন ২০২৫ - ২০:২২
দেশের প্রতিরক্ষা বৈধতা কোরআনভিত্তিক

হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন রুহুল্লাহ হারিযাভি বলেন: পরম করুণাময় আল্লাহ কোরআন শরীফে স্পষ্টভাবে সেইসব লোকদেরকে প্রতিরোধ ও যুদ্ধ করার অনুমতি দিয়েছেন যাঁরা জুলুম ও আগ্রাসনের শিকার হয়েছেন।

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন রুহুল্লাহ হারিযাভি বলেন: পরম করুণাময় আল্লাহ কোরআন শরীফে স্পষ্টভাবে সেইসব লোকদেরকে প্রতিরোধ ও যুদ্ধ করার অনুমতি দিয়েছেন যাঁরা জুলুম ও আগ্রাসনের শিকার হয়েছেন। এই মহান আয়াতটি একটি দেশের ভূখণ্ড এবং স্বাধীনতা রক্ষার কোরআনিক ভিত্তি ও বৈধতা ব্যাখ্যা করে; এমন এক অধিকার যা আন্তর্জাতিক আইনের ঊর্ধ্বে এবং ঐশী ওহির ওপর প্রতিষ্ঠিত।

কোরআনিক ভিত্তিতে বৈধ প্রতিরক্ষার অধিকার
ইসলামি প্রচার সংস্থার ডেপুটি প্রধান হুজ্জতুল ইসলাম হারিযাভি হাওজাহ নিউজ এর প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে, বৈধ প্রতিরক্ষার কোরআনিক ভিত্তির ওপর জোর দেন এবং আগ্রাসনের মুখে ইসলামের অবস্থান ও প্রতিরোধের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করেন। তিনি সূরা হজ্ব, আয়াত ৩৯-এর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন:
"যারা যুদ্ধ করছে, তাদেরকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে; কারণ তাদের উপর জুলুম করা হয়েছে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদের সাহায্যে সক্ষম।"
এই আয়াতটি এমন একটি ঐশী ভিত্তি স্থাপন করে যা প্রতিরক্ষা ও স্বাধীনতার অধিকারকে ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে বৈধতা দেয়।

শত্রুদের প্রতিশ্রুতির অকার্যকারিতা নিয়ে সমালোচনা
তিনি বলেন: শত্রুরা, যেমনটা ইসলামী প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ নেতা বারবার বলেছেন, কোনো অঙ্গীকার বা চুক্তির প্রতি বিশ্বস্ত নয়। কোরআনে বহু আয়াতে আল্লাহ ঈমানদার ও সৎ লোকদের বিজয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তবে তা নির্ভর করে তারা নিজেকে সেই সাহায্যের উপযুক্ত করে তুলছে কিনা।

প্রতিরোধই একমাত্র পথ
তিনি যোগ করেন: কোরআনের স্পষ্ট শিক্ষা হলো, যখন একটি জাতি জুলুমের শিকার হয়, তখন প্রতিরোধ ও প্রতিরক্ষা ছাড়া আর কোনো পথ থাকে না। কখনো কখনো আলোচনার উপযোগিতা থাকতে পারে, কিন্তু আগ্রাসন ও যুদ্ধ শুরু হলে, একমাত্র উপায় হলো প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়া যতক্ষণ না বিজয় অর্জিত হয়। ইরানিরা এ শিক্ষাকে ভালোভাবে আত্মস্থ করেছে।

ইরানি জনগণের দায়িত্ববোধ ও জাতীয় ঐক্য
এই ধর্মীয় বিশেষজ্ঞ বলেন: জনগণের এই দায়িত্ববোধের উপলব্ধিই তাদেরকে যুদ্ধের শুরু থেকেই, শহীদ হওয়ার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও, ব্যাপকভাবে মাঠে নামতে বাধ্য করেছে। সম্প্রতি তেহরানের রাস্তায় লাখো মানুষের মিছিল প্রমাণ করে যে এই ঈমানদার জনগণ ইসলামি শাসনব্যবস্থা ও নিজেদের সশস্ত্র বাহিনীর পাশে রয়েছে।

সীমান্তরক্ষীদের দোয়া পাঠের আহ্বান ও মসজিদের ভূমিকা
তিনি বলেন: আমি সকলকে অনুরোধ করছি, ‘সাহিফা সাজ্জাদিয়াহ’ থেকে ইমাম সজ্জাদের (আ.) প্রবর্তিত বিখ্যাত ‘দোয়া-ই-মারজাদারান’ (সীমান্তরক্ষীদের জন্য দোয়া) অবশ্যই পড়ুন। মসজিদগুলোকে অবশ্যই রণাঙ্গনের জন্য আধ্যাত্মিক ঘাঁটি হিসেবে সক্রিয় করা উচিত।
তিনি আরও বলেন, আজকের যুদ্ধের ধরণ আলাদা হলেও, মসজিদগুলোর আধ্যাত্মিক ঘাঁটির ভূমিকা ঠিক তেমনই গুরুত্বপূর্ণ, যেমনটা ইমাম খোমেইনি (রহ.) বলেছিলেন। এগুলোকে সক্রিয় ও প্রাণবন্ত রাখা আবশ্যক।

যুদ্ধ পরিস্থিতি উপলব্ধি করা জরুরি
তিনি ইসরায়েলের পক্ষ থেকে জুন মাসের শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ প্রস্তুতির ঘোষণার প্রসঙ্গে বলেন: এটা শত্রুর দুঃসাহসিকতা ও ষড়যন্ত্রমূলক প্রকৃতিকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরে। সুতরাং, যুদ্ধাবস্থার প্রকৃতি ও গুরুত্ব বোঝা প্রতিটি ইরানির জন্য অত্যাবশ্যক।

গাদির ইদ উপলক্ষে গণউপস্থিতি: শত্রুর সন্দেহের জবাব
তিনি বলেন: সম্প্রতি গাদির ইদের অনুষ্ঠানে জনগণের ব্যাপক উপস্থিতি প্রমাণ করে যে তারা পরিস্থিতির গভীরতা অনুধাবন করেছে। শত্রুরা সরকারের নীতিমালার পরিবর্তন ইত্যাদি নিয়ে সন্দেহ ছড়ানোর চেষ্টা করলেও, বাস্তবতা এর ঠিক বিপরীত।

নেতারা জনগণের জন্য নিজেদের উৎসর্গ করেছেন
এই ধর্মীয় পণ্ডিত বলেন: আমাদের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতারা, যারা প্রমাণিতভাবে সাহসী ও দায়িত্বশীল, জনগণের জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করতে প্রস্তুত। ইতিহাস ও ওহির ধারায় দেখা যায়, আল্লাহর প্রিয় বান্দারা নিজের জীবন জাতির জন্য বিলিয়ে দিয়েছেন। আজও নেতারা তা-ই করছেন, এবং জনগণও নিজেদের উপস্থিতি ও সমর্থনের মাধ্যমে এ ত্যাগের মূল্যায়ন করছে।

জনগণকে সত্যের প্রচারমাধ্যমে পরিণত করার আহ্বান
শেষে তিনি বলেন: এখনই সময়, যখন প্রত্যেক নাগরিককে সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে প্রচারমাধ্যমে রূপান্তরিত হওয়া উচিত। বর্তমান পরিস্থিতি জিহাদি প্রচার ও গণমাধ্যমীয় সংগ্রামের প্রয়োজনীয়তা আরো বেশি করে সামনে এনেছে। স্থানীয় ও গণমাধ্যমগুলোর সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে হবে, যেন প্রতিটি মানুষ ‘জেহাদে তাবলীগ’-এর এক সৈনিক হয়ে ওঠে।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha