শনিবার ২১ জুন ২০২৫ - ১৭:৩৬
ইসরায়েলের ইরানে হামলা ও গাজায় ধ্বংসযজ্ঞে ভারতের নীরবতা উদ্বেগজনক: সোনিয়া গান্ধী

ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের সাবেক সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, সোনিয়া গান্ধী ‘দ্য হিন্দু’ পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে ইরানে ইসরায়েলের সামরিক হামলা এবং গাজায় চলমান ধ্বংসযজ্ঞ নিয়ে ভারতের নীরবতা নিয়ে কড়া সমালোচনা করেছেন এবং একে ভারতের মৌলিক নীতিগুলোর লঙ্ঘন বলে আখ্যা দিয়েছেন।

কংগ্রেস সংসদীয় দলের নেত্রী সোনিয়া গান্ধী তাঁর বিশদ লেখায় বলেন, ১৩ জুন ২০২৫ তারিখে ইসরায়েল ইরানের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে যে হামলা চালিয়েছে তা শুধু আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনই নয়, বরং একতরফা সামরিক আগ্রাসনের এক বিপজ্জনক উদাহরণ, যার মারাত্মক আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক প্রভাব পড়তে পারে।
তিনি জানান, ইরানে ইসরায়েলের বোমাবর্ষণ ও লক্ষ্যভিত্তিক হত্যাকাণ্ডের কংগ্রেস দৃঢ়ভাবে নিন্দা জানিয়েছে।

সোনিয়া গান্ধী আরও বলেন, এই হামলা ইসরায়েলের সেই নীতির ধারাবাহিকতা যেখানে গাজায়ও বেসামরিক মানুষ ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকে উপেক্ষা করে বর্বরভাবে শক্তি প্রয়োগ করা হয়েছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, এমন পদক্ষেপ শুধু আরও অস্থিরতা ও সংঘাতের জন্ম দেবে।

নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে, এই হামলা এমন সময়ে হয়েছে যখন ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কূটনৈতিক সংলাপের পাঁচ দফা শেষ হয়েছে এবং ষষ্ঠ দফা নির্ধারিত ছিল।
তিনি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে আক্রমণাত্মক, উগ্রপন্থী ও শান্তিবিরোধী নেতৃত্বের প্রতীক বলে অভিহিত করেন—যিনি ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে বসতি স্থাপন, চরমপন্থী দলগুলোর সঙ্গে জোট এবং যুদ্ধাবস্থা বজায় রাখার নীতি গ্রহণ করেছেন।

সোনিয়া গান্ধী সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পেরও সমালোচনা করেন।
তিনি বলেন, যিনি এক সময় আমেরিকার শেষ না হওয়া যুদ্ধ ও সামরিক-শিল্প জোটের বিরোধিতা করতেন, তিনিই এখন ধ্বংসাত্মক নীতির সমর্থক হয়ে উঠেছেন।

তিনি মনে করিয়ে দেন, ট্রাম্প নিজেই স্বীকার করেছিলেন যে, মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে ইরাকে চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধ এই অঞ্চলে ধ্বংস ও অস্থিরতা সৃষ্টি করেছিল।
তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে দ্বৈত মানদণ্ড প্রয়োগ হচ্ছে—ইসরায়েল একটি পারমাণবিক রাষ্ট্র হওয়া সত্ত্বেও তার ওপর কোনো আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা নেই, অথচ ইরান আন্তর্জাতিক চুক্তির আওতায় কঠোর নজরদারি ও বিধিনিষেধ মেনে চলেছে।

২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের একতরফাভাবে পারমাণবিক চুক্তি থেকে সরে যাওয়াকে তিনি কূটনীতিকে বিসর্জন দেওয়ার একটি ধ্বংসাত্মক দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করেন।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, ইরান ঐতিহাসিকভাবে ভারতের পাশে ছিল, বিশেষ করে ১৯৯৪ সালে জাতিসংঘে কাশ্মীর ইস্যুতে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছিল।

সোনিয়া গান্ধীর মতে, ইরানের বর্তমান শাসনব্যবস্থা, পূর্ববর্তী রাজতান্ত্রিক সরকারের তুলনায় ভারতের সঙ্গে অনেক বেশি সহযোগিতাপূর্ণ ছিল।
তিনি স্বীকার করেন যে, সাম্প্রতিক দশকে ভারত ও ইসরায়েলের সম্পর্ক বিস্তৃত হয়েছে, তবে এই দ্বিপাক্ষিক ভারসাম্যের ভিত্তিতে ভারতের একটি নৈতিক ও কূটনৈতিক দায়িত্ব রয়েছে—যাতে দেশটি পশ্চিম এশিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্ব দেয়।

তিনি বলেন, ইসরায়েলের সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলো পশ্চিমা শক্তির নিরঙ্কুশ সমর্থন পাচ্ছে এবং এ কারণেই তারা গাজা ও ইরানসহ বিভিন্ন স্থানে মানবাধিকার লঙ্ঘন থেকে বিরত হচ্ছে না।

তিনি স্পষ্ট করে বলেন, কংগ্রেস ৭ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে হামাসের হামলার তীব্র নিন্দা করেছিল, তবে ইসরায়েলের অসামঞ্জস্যপূর্ণ ও নিষ্ঠুর প্রতিক্রিয়া—যাতে ৫৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, পরিবার ও হাসপাতাল ধ্বংস হয়েছে এবং গাজা দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি—তা উপেক্ষা করা যায় না।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha