হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও পর্যবেক্ষকদের সর্বসম্মত মত অনুযায়ী, ইসলামি বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতার প্রজ্ঞাপূর্ণ কৌশল — শত্রু ইসরায়েলি বাহিনীর দেশের ভূমিতে হামলার প্রথম ঘণ্টাতেই শহীদ কমান্ডারদের জায়গায় যোগ্য নেতাদের নিযুক্ত করা, রণসংগঠনের দ্রুত পুনর্গঠন এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই কড়া জবাবের নির্দেশ — এই সব কিছু ইরানকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা করেছে।
"১২ দিনের যুদ্ধ" বর্তমানে ইরান ও বিশ্ব মিডিয়ার সবচেয়ে আলোচিত শব্দ। আর "দখলদারদের লক্ষ্য ব্যর্থ হওয়া" – এটি সব বিশ্লেষকের অভিন্ন বিশ্লেষণ।
আমেরিকা ও তার অবৈধ সন্তান ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে কূটনৈতিক খেলা খেলে, "ভাল পুলিশ ও খারাপ পুলিশ" নাটক সাজিয়ে একপ্রকার চমকে দেওয়া হামলার পরিকল্পনা করেছিল। তাদের বিশ্বাস ছিল, তারা হঠাৎ করে ইরানের উচ্চপদস্থ সামরিক ও রাজনৈতিক নেতাদের হত্যা করে এমন এক ভয়াবহ আতঙ্ক সৃষ্টি করবে যাতে ইসলামি শাসনব্যবস্থা ভেঙে পড়বে এবং ৬ দিনের মধ্যে ইরানকে মুছে ফেলা যাবে। এমনকি তারা আগাম "ইরানের দাফন" সম্পন্ন করে, ভবিষ্যতের সরকারে কে থাকবে তাও নির্ধারণ করে ফেলেছিল!
রাহবারের প্রজ্ঞা, শত্রুর স্বপ্নভঙ্গ
তাদের ধারণা ছিল, ইরান যখন একসঙ্গে উচ্চপদস্থ বহু সামরিক কমান্ডার হারাবে, তখন তা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে অন্তত এক সপ্তাহ সময় লাগবে। এই সময়ের মধ্যে তারা অভিযান শেষ করে ফেলবে। কিন্তু ঘটনা ঘটল ঠিক তার উল্টো: হামলার ১২ ঘণ্টার মধ্যেই রাহবার (সর্বোচ্চ নেতা) নতুন কমান্ডার নিয়োগ দিলেন, এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই শত্রুকে কঠিন জবাব দেওয়া হলো।
ইসরায়েল ভেবেছিল, তারা ১৯৬৭ সালের মিসরের ওপর পরিচালিত সারপ্রাইজ হামলার কৌশল এখানে প্রয়োগ করে সফল হবে— যেখানে মিসরের শীর্ষ জেনারেলদের বাসভবন ও বিমানবন্দর টার্গেট করে তারা যুদ্ধ ছয় দিনের মধ্যে জিতে নিয়েছিল। কিন্তু তারা হিসাব করেনি, ইরানের নেতৃত্বে এমন একজন ব্যক্তি আছেন যিনি একসঙ্গে ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক নেতৃত্ব দেন, যাঁর বিচক্ষণতা যুদ্ধের গতি বদলে দিল।
বীরের নেতৃত্বে মুহূর্তেই প্রস্তুত রণাঙ্গন
সর্বোচ্চ নেতা, যিনি নিজে ইরানের সামরিক বাহিনীর সর্বাধিনায়ক, হামলার প্রথম মুহূর্তে শহীদদের জায়গায় এমন দক্ষ ও অভিজ্ঞ কমান্ডারদের বসান যারা আগের কমান্ডারদের সমতুল্য যুদ্ধঅভিজ্ঞ ছিলেন। ফলে যুদ্ধের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে একদিনের জন্যও সামরিক নেতৃত্ব শূন্য হয়নি এবং ইরানের সামরিক কাঠামো অটুট থাকে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই কৌশল শত্রুর মূল পরিকল্পনা — ইরানের সামরিক কাঠামো ধ্বংস করা — ব্যর্থ করে দেয়। শত্রুর প্রত্যাশিত আতঙ্ক ইরানে ছড়ায়নি, বরং ইরান কৌশলীভাবে প্রতিঘাত হানে।
"ইমাম" দিলেন জাতিকে সাহস ও শত্রুকে সতর্কতা
শুক্রবার বিকেলে টেলিভিশন ভাষণে সর্বোচ্চ নেতা একদিকে যেমন জাতির সঙ্গে গভীর হৃদ্যতা প্রকাশ করলেন, তেমনই জাতিকে ঈমান ও ধৈর্যের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিলেন। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, শত্রু যেই ভুল করেছে তার "ভয়াবহ পরিণতি" হবে এবং তাদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
তিনি ঘোষণা করেন: "আমরা আমাদের গৌরবময় শহীদদের রক্ত হেলায় হারাতে দেব না। ইসলামী প্রজাতন্ত্রের সশস্ত্র বাহিনী এই অপবিত্র শত্রুর উপর কঠিন আঘাত হানবে।"
তিন ধাপের প্রতিরোধ কৌশল — একটি দুঃস্বপ্নের অবসান
এই ঐতিহাসিক দিনটিতে রাহবার তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেন:
১. কমান্ডারদের দ্রুত নিয়োগ,
২. জাতিকে সরাসরি সম্বোধনে সাহস ও স্থিতি প্রদান,
৩. শত্রুর প্রতি কড়া হুঁশিয়ারি ও পাল্টা আক্রমণের আদেশ।
এই ত্রিমুখী সিদ্ধান্ত শত্রুর বহুদিনের দুঃস্বপ্ন ও ষড়যন্ত্রকে ধূলিসাৎ করে দেয়।
সশস্ত্র বাহিনী নেতা-নির্দেশ মোতাবেক ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পাল্টা হামলা চালায় এবং প্রমাণ করে দেয় —
"শত্রুরা ভাবছিল তারা আঘাত করে পালিয়ে যাবে। না, যুদ্ধ শুরু করেছে ওরা, কিন্তু শেষ করব আমরা — এবং ওদের এই অপরাধের শাস্তি হবেই।"
এক জাতি, এক কণ্ঠস্বর — শত্রুর দ্বিতীয় ষড়যন্ত্রও ব্যর্থ
রাহবারের শান্ত, আত্মবিশ্বাসী বক্তব্য জাতিকে গভীর সাহস দেয়। দেশের নানা মত, নানা পথের মানুষও এই ক্রান্তিকালে একটি কণ্ঠে কথা বলে, সব রাজনৈতিক ও মতাদর্শগত বিভাজন ছাপিয়ে "ইরান"কে কেন্দ্র করে একাট্টা হয়ে দাঁড়ায়। এর ফলে শত্রুর দ্বিতীয় চক্রান্ত — দেশব্যাপী অস্থিরতা সৃষ্টি —ও ব্যর্থ হয়।
মানুষ শুধু কথা বলেনি, বরং ঝুঁকিপূর্ণ যুদ্ধাবস্থায়ও মাঠে নেমে তাদের সেনাবাহিনীর পাশে থাকার বার্তা দেয়। এই অভূতপূর্ব সহানুভূতি ও সহমর্মিতা ছিল সেই জ্বালানি, যার শক্তিতে শত্রুর ঘাঁটিতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ছুটে গেছে।
আপনার কমেন্ট