রবিবার ৬ জুলাই ২০২৫ - ০৯:৫৯
আশুরার দিন রোজা রাখার শরয়ী হুকুম কি?

আশুরা সেই দিন যেদিন আলে জিয়াদ ও আলে মারওয়ান ইমাম হুসাইন (আ.)-এর হত্যায় আনন্দিত হয়েছিল।

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, আশুরার দিন রোজা রাখার শরয়ী হুকুম কি?

একটি ফিকহি প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন:
আশুরার দিনে রোজা রাখা মাকরূহ কেন? এর পেছনে যুক্তি কী? আমি যখন সুন্নি ভাইদের দেখি, তারা বলে আশুরার রোজা রাখা মুস্তাহাব (সওয়াবের কাজ)। তাহলে এই পার্থক্যের কারণ কী?

উত্তর:
আপনি জানেন, শিয়া ও সুন্নি মুসলমানদের ফিকহি উৎস ও রেফারেন্স ভিন্ন। এদের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য হলো—শিয়ারা ইমামদের (আ.) বাণীকে নবী (সা.)-এর বাণীর মতোই শরয়ী দলিল হিসেবে মানে। কিন্তু সুন্নিরা এই বিশ্বাস পোষণ করে না।

আশুরার রোজা সম্পর্কিত হুকুমও একটি ফিকহি বিষয়, যেটি প্রতিটি দল তাদের নিজ নিজ সূত্র থেকে ব্যাখ্যা করে। এ বিষয়ে মূল রেফারেন্স হলো—হাদিসসমূহ। সুন্নি হাদিসগ্রন্থগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এই বিষয়ে হাদিসগুলো পরস্পরবিরোধী এবং অনেক হাদিসে অস্পষ্টতা বা দুর্বলতা রয়েছে। কিছু হাদিস আশুরার রোজার প্রতি উৎসাহ দেয়, আবার কিছু হাদিস তার বিপরীত কথা বলে।

উদাহরণস্বরূপ, সহীহ মুসলিম-এর "কিতাবুস সাওম"-এ ইবনে মাসউদ থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে এসেছে:
“রমজান মাসের রোজার হুকুম আসার আগে, আশুরার রোজা রাখা হতো; কিন্তু পরে তা ত্যাগ করা হয়।”

অন্যদিকে, কিছু হাদিসে এসেছে—জাহিলিয়াত যুগের লোকেরা আশুরার রোজা রাখতো, এবং নবী (সা.) তাদের অনুসরণে এই রোজা রেখেছিলেন।
আরও কিছু হাদিসে এসেছে, নবী (সা.) আশুরার রোজার ফজিলত জানতেন না, হিজরতের পর মদীনায় এসে এটি ইহুদিদের কাছ থেকে জেনে পালন করেন।

প্রশ্ন হলো: নবী (সা.) যিনি ইলমে লাদুন্নি (আল্লাহপ্রদত্ত বিশেষ জ্ঞান) রাখেন, তিনি কি কোনো হুকুম জানতেন না এবং তা আহলে কিতাব থেকে শিখতেন?
তার ওপর, আহলে কিতাবদের মাঝে ‘আশুরা’ নামে কোনো দিন বা রোজা পাওয়া যায় না। এই পরস্পরবিরোধিতা এবং কিছু হাদিসের অদ্ভুত বর্ণনা এই সন্দেহ জোরদার করে যে—এই হাদিসগুলো বনু উমাইয়ার তৈরি। তারা আশুরার দিনটিকে আনন্দ ও বিজয়ের দিন হিসেবে দেখিয়ে রোজাকে জনপ্রিয় করার চেষ্টা করেছিল, এবং ধীরে ধীরে তা সুন্নিদের মাঝে একটি প্রচলিত সুন্নত হিসেবে গৃহীত হয়।

এটি জিয়ারত আশুরায়ও স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে:

“اللهم ان هذا یوم تبرکت به بنی امیه”
"হে আল্লাহ! এ দিনটি এমন একটি দিন, যাতে বনু উমাইয়া বরকত খোঁজে (বা বরকত মনে করে)",
এবং:
“هذا یوم فرحت به آل زیاد و آل مروان بقتلهم الحسین (ع)”
“এই দিনটি হলো, যেদিন আলে জিয়াদ ও আলে মারওয়ান ইমাম হুসাইন (আ.)-এর হত্যায় আনন্দিত হয়েছিল।”

আহলে বাইতের (আ.) হাদিসেও এ বিষয়টি স্পষ্টভাবে এসেছে, যে কারণে শিয়াদের রোজা রাখতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে এবং অধিকাংশ শিয়া ফকিহ আশুরার রোজাকে মাকরূহ বলেছেন।

একটি হাদিসে এসেছে:

ইমাম রেজা (আ.)-কে আশুরার রোজা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন:
سئل الامام الرضا (ع) عن صوم یوم عاشورا، قال: عن صوم ابن مرجانه تسالنی ذلک یوم صامه الادعیاء من آل زیاد لقتل الحسین (ع)

“তুমি কি ইবনে মারজানার রোজার কথা জিজ্ঞেস করছো? এটি সেই দিন, যেদিন আলে জিয়াদ নামক পাপীরা ইমাম হুসাইন (আ.)-এর শহীদ হওয়ার আনন্দে রোজা রেখেছিল।”
(তহযিবুল আহকাম ৪/৩০১)

আরেকটি হাদিসে ইমাম রেজা (আ.) বলেন: “আশুরা রোজার দিন নয়; এটি শোক ও মুসিবতের দিন—আকাশ, জমিন এবং সব মুমিনের জন্য। এটি ইবনে মারজানা ও আলে জিয়াদের আনন্দ-উৎসবের দিন, যারা জাহান্নামের উপযুক্ত।”

সারকথা:

আহলে বাইত (আ.) বলেছেন, বনু উমাইয়া যেহেতু ইমাম হুসাইন (আ.)-এর শাহাদতে আনন্দ প্রকাশ করে এই দিন রোজা রাখতো, তাই শিয়াদের উচিত এই দিনে রোজা না রেখে শোক ও মাতমে অংশ নেওয়া। এই কারণেই অধিকাংশ শিয়া ফকিহ আশুরার দিনে রোজা রাখাকে মাকরূহ বলেছেন।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha