ইরাকের নাজাফে আশরাফে অধ্যয়নরত হুজ্জাতুল ইসলাম মাওলানা সাইয়েদ আলি আকবর
বিশেষ সাক্ষাত্কার:
প্রশ্ন: আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। সম্মানিত মাওলানা সাহেব, আজ আমরা ‘আরবাঈন: যুবসমাজের শিক্ষা ও বিপ্লবী চেতনার বৈশ্বিক পাঠশালা’ বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক আলোচনা করতে চাই। প্রথমেই জানতে চাই, আরবাঈনের তাৎপর্য আপনি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
মাওলানা সাইয়েদ আলি আকবর: ওয়ালাইকুম আসসালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। ধন্যবাদ আপনাকে। আরবাঈন শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা নয়; এটি হলো এক বিপ্লবী আত্মত্যাগ, ইনসাফ, এবং আদর্শিক সংগ্রামের প্রাণবন্ত স্মারক। হজরত ইমাম হুসাইন (আ.)-এর শাহাদাতের ৪০ দিন পরকার্য এই দিনটি মূলত মুসলিম জাতির জন্য একটি জাগরণ ও আত্মবিশ্লেষণের উপলক্ষ।
প্রশ্ন: বর্তমান যুবসমাজের জন্য আরবাঈনের শিক্ষা কতটা প্রাসঙ্গিক বলে আপনি মনে করেন?
মাওলানা সাইয়েদ আলি আকবর: অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। আজকের যুবসমাজ নানাভাবে বিভ্রান্ত, প্রযুক্তির জালে বন্দী, আত্মকেন্দ্রিকতার শিকার। কিন্তু আরবাঈন তাদের সামনে একটি আদর্শ তুলে ধরে—যেখানে ত্যাগ, ন্যায়বিচার এবং সত্যের পক্ষে দাঁড়ানো শেখানো হয়। হুসাইনি চেতনা যুবকদের আত্মসম্মান ও নৈতিক দৃঢ়তায় উদ্বুদ্ধ করতে পারে।
প্রশ্ন: অনেকেই আরবাঈনকে শুধুই একটি শোক পালন মনে করে থাকেন। আপনি কীভাবে দেখেন এই দৃষ্টিভঙ্গিকে?
মাওলানা সাইয়েদ আলি আকবর: এটি খুব সীমিত এবং একপেশে দৃষ্টিভঙ্গি। আরবাঈন শুধু শোক নয়, এটি একটি জাগরণ। কারবালার ঘটনা ইতিহাসের এক চরম মুহূর্ত, যেখানে সত্য ও মিথ্যার মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছিল। এই স্মরণ মানে আমাদেরকে সেই চেতনা হৃদয়ে ধারণ করে সমাজে পরিবর্তনের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা।
প্রশ্ন: প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষ পায়ে হেঁটে কারবালা যান। এই পদযাত্রা বা “মার্চ অফ আরবাঈন”-এর মাঝে আপনি কী বিপ্লবী চেতনার প্রতিফলন দেখেন?
মাওলানা সাইয়েদ আলি আকবর: নিঃসন্দেহে। এই পদযাত্রা হচ্ছে এক নিঃশব্দ বিপ্লব। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে মানুষ একত্রিত হয় ইমাম হুসাইনের মহব্বতে। এতে রয়েছে একতা, ভ্রাতৃত্ববোধ, ত্যাগ এবং সম্প্রীতির চরম প্রকাশ। আজকের বিভক্ত পৃথিবীতে এটি এক উজ্জ্বল ব্যতিক্রম।
প্রশ্ন: আপনি কি মনে করেন এই চেতনা বৈশ্বিক রাজনৈতিক-সামাজিক পরিবর্তনেও প্রভাব ফেলতে পারে?
মাওলানা সাইয়েদ আলি আকবর: অবশ্যই। হুসাইন (আ.)-এর আন্দোলন এককালের নয়; এটি কালাতীত। ন্যায়ের জন্য দাঁড়ানো, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা—এই বার্তা সব যুগের জন্য প্রযোজ্য। বিশেষ করে আজকের বিশ্বে, যেখানে নির্যাতন-নিপীড়ন বেড়ে চলছে, সেখানে হুসাইনের আদর্শ বৈশ্বিক পরিবর্তনের অনুপ্রেরণা হতে পারে।
প্রশ্ন: আপনি যুবকদের জন্য বিশেষ কোনো বার্তা দিতে চান?
মাওলানা সাইয়েদ আলি আকবর: অবশ্যই। প্রিয় যুবসমাজ, তোমরা হচ্ছ ভবিষ্যতের স্থপতি। ইমাম হুসাইন (আ.)-এর মতো সাহসী, সত্যবাদী ও নৈতিক চরিত্র গড়ে তুলো। আরবাঈন শুধু স্মরণ নয়, এটি তোমাদের জীবনের মানদণ্ড হোক। শিক্ষা, কর্ম ও চিন্তায় হুসাইনি হও। তাহলেই সত্যিকার অর্থে আরবাঈনের চেতনা বাস্তবায়িত হবে।
প্রশ্ন: অসাধারণ আলোচনা ও মূল্যবান দিকনির্দেশনার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ, মাওলানা সাহেব।
মাওলানা সাইয়েদ আলি আকবর: আমাকেও ধন্যবাদ। আল্লাহ আমাদের সবাইকে হুসাইনি চেতনায় উজ্জীবিত করে আমলের তৌফিক দিন। আমিন।
সাক্ষাৎকার গ্রহণ: মজিদুল ইসলাম শাহ
আপনার কমেন্ট