শনিবার ২ আগস্ট ২০২৫ - ০৯:৩৫
নেতৃত্ব শূন্য মুসলিম উম্মাহ ও হোসাইনীয় আদর্শের প্রাসঙ্গিকতা; ঐক্যের আহবান

৫ই সফর ইসলামী ইতিহাসে এক মর্মান্তিক দিন। এই দিনে কারবালার বীর শহীদ, ইমাম হোসাইন (আ.)-এর আদরের শিশু কন্যা হযরত সাকিনা (সা. আ.)-এর মর্মান্তিক শাহাদাত মুসলিম উম্মাহকে স্মরণ করিয়ে দেয় জুলুম ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সত্য ও ন্যায়ের পথে দৃঢ় অবস্থান নেওয়ার অমোঘ আহ্বান।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: এ উপলক্ষে ইমাম হোসাইন (আ.) জনকল্যাণ ট্রাস্টের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এক শোক মজলিসে প্রধান বক্তা হিসেবে আলোচনা করেন ইমাম হোসাইন জনকল্যাণ ট্রাস্টের সম্মানিত সভাপতি হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলেমিন জনাব আলী নওয়াজ খান সাহেব। তিনি মুসলিম উম্মাহর আজকের করুণ অবস্থা, নেতৃত্ব সংকট এবং কোরআন ও আহলে বাইত (আ.) শিক্ষা থেকে বিচ্যুতির ভয়াবহ পরিণতি নিয়ে গভীর আলোচনা করেন।

মুসলিম উম্মাহর নেতৃত্ব সংকট ও তার মূল কারণ
হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলেমিন জনাব আলী নওয়াজ খান সাহেব তার বক্তব্যে বলেন, আজকের মুসলিম উম্মাহ নেতৃত্ব শূন্য এক ভয়াবহ সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। একদিকে মাযহাবগত বিভাজন, অন্যদিকে পারস্পরিক দ্বন্দ্ব ও সংঘাতে লিপ্ত জাতি—এসবের পেছনে রয়েছে মূলত কোরআন ও আহলে বাইত (আ.)-এর শিক্ষা থেকে বিচ্যুতি।

পবিত্র কোরআন ঘোষণা করে:

وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُوا ۚ

“তোমরা সকলে মিলে আল্লাহর রজ্জু (কোরআন) শক্তভাবে ধরো এবং পরস্পরে বিভেদ সৃষ্টি করো না।”

[সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১০৩]

এই রজ্জু বা পথনির্দেশ কোরআন ও আহলে বাইতের সমন্বয়ে পূর্ণতা পায়। রাসূলুল্লাহ (সা.) বিদায় হজ্জে স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেন:

إني تارك فيكم الثقلين، كتاب الله وعترتي أهل بيتي، ما إن تمسكتم بهما لن تضلوا بعدي أبداً

“আমি তোমাদের মাঝে দুটি ভারী বস্তু রেখে যাচ্ছি—আল্লাহর কিতাব (কোরআন) এবং আমার আহলে বাইত। যতক্ষণ তোমরা এ দু’টিকে আঁকড়ে ধরবে, কখনো পথভ্রষ্ট হবে না।”

[সহিহ মুসলিম, কিতাব ফাযায়েল]

পাশ্চাত্য অনুকরণ ও উম্মাহর অধঃপতন
আজকের অনেক মুসলিম রাষ্ট্রনায়ক ইসলামী মূল্যবোধ পরিত্যাগ করে পাশ্চাত্য সংস্কৃতি ও ভোগবাদে ডুবে গেছেন। ধর্মীয় নৈতিকতা থেকে বিচ্যুতি, কোরআনের বাস্তবিক শিক্ষা ভুলে যাওয়া এবং নবী (সা.) ও তাঁর আহলে বাইতের (আ.) পথ থেকে দূরে সরে যাওয়ার ফলেই উম্মাহ আজ অপশক্তির গোলামে পরিণত হয়েছে।

আল্লাহ তাআলা সতর্ক করেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الْيَهُودَ وَالنَّصَارَىٰ أَوْلِيَاءَ ۘ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ ۚ وَمَن يَتَوَلَّهُم مِّنكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ ۗ

“হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইহুদি ও খ্রিস্টানদের বন্ধু (অভিভাবক ও বিশ্বস্ত) হিসেবে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। আর তোমাদের মধ্যে যে কেউ তাদেরকে বন্ধু বানাবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত।”

অথচ আজ মুসলিম উম্মাহ কোরআন ও আহলে বাইত (আ.) থেকে দূরে সরে থাকার কারণে ইসলামের মূল ধারা বিচ্যুত হয়ে ইহুদি ও খ্রিস্টানদের গোলামে পরিণত হয়েছে।

ফিলিস্তিন ও সমসাময়িক দুর্দশা: হোসাইনী চেতনার প্রতিধ্বনি
তিনি আরো বলেন, ফিলিস্তিনে আজ নিরপরাধ অসহায় নারী-শিশুর রক্ত ঝরলেও মুসলিম শাসকরা নির্বিকার। তাঁদের হৃদয়ে আর উম্মাহর জন্য কষ্ট নেই, উম্মাহর এই দূর্দিনে তারা কোনো দায়িত্ব অনুভব করে না। আজ যেন প্রতিটি মুসলমানের হৃদয় থেকে ন্যায়পরায়ণতা নির্বাসিত।

এসবের মূল কারণ হলো:

১. মুসলমানরা কোরআন ও আহলে বাইতকে পরিত্যাগ করেছে।

২. তারা ঐক্যের পরিবর্তে পারস্পারিক মাযহাবগত সংঘাত ও হানাহানিতে লিপ্ত হয়েছে।

৩. তারা দ্বীনি শিক্ষা ও নৈতিকতা পরিত্যাগ করে দুনিয়ার মোহ ও বিলাসিতায় আসক্ত হয়ে পড়েছে।

৪. তারা জ্ঞান চর্চা ও উৎপাদনের পথে প্রচেষ্টা না করে ভোগবাদী ও অন্যের প্রযুক্তি ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে।

৫. নৈতিক অবক্ষয় তাদেরকে দ্বীনি জীবনযাপন থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে।

৬. অবশেষে পাশ্চাত্যের আধিপত্য মেনে নিয়ে বিশ্বের অপশক্তিদের গোলামে পরিণত হয়েছে।

৬১ হিজরী সনে ইমাম হোসাইন (আ.) এই চিন্তা, মানসিকতা ও সমাজব্যবস্থার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন। তাই মুসলিম উম্মাহর পতন থেকে মুক্তির জন্য ইয়াজিদি কৃষ্টি ও সমাজব্যবস্থা থেকে বের হয়ে হোসাইনী চেতনায় উজ্জীবিত হতে আজকের এই শোকানুষ্ঠান।

আসুন, আমরা কোরআন ও আহলে বাইতের (আ.) শিক্ষাকে আঁকড়ে ধরি এবং হোসাইনীয় পথকে অনুসরণ করি।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha